Saturday, April 8, 2017

চীনে ধর্মশিক্ষা



সমাজতান্ত্রিক দেশে নাবালকদের ধর্ম শিক্ষাদান নিষেধ। কেবল বিদ্যালয়েই নয়, বাড়িতেও শিশুকে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যায় না। মানুষ কেবল প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই ধর্ম বিষয়ে চিন্তা ও সিদ্ধান্ত করতে পারে। আমাদের দেশে যখন বাচ্চা কিছুই বোঝে না, তাকেও ঠাকুরের সামনে এনে ‘নমো কর’ বলা হয়ে থাকে। চিনে সমাজতন্ত্র না থাকলেও এখনও শিশু শিক্ষায় ধর্মের জায়গা রাখা হয় নি।
চীনে পাঁচটি স্বীকৃত ধর্ম-চর্চা প্রচলিত। এবং সেই ধর্মচর্চা করা যাবে নির্দিষ্ট সরকারী নিয়মসম্মত ধর্মস্থানে। সেই সব ধর্মস্থানের নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হবে আয়-ব্যয় বিষয়ে, কর্মচারী সম্পর্কে এবং কার্যকলাপের বিবরণ দিয়ে। এর বাইরে সমস্ত ধর্মচর্চা ও রীতিনীতি গণ্য করা হবে ক্ষতিকারক কাল্ট হিসেবে যা বেআইনী – তা পালন করলে প্রয়োজনে শাস্তি হতে পারে।
জিনিজিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের ভিতর এই শিক্ষানীতি অনুসরণ না করার কারণে নতুন করে তা প্রচলন করতে প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাকিস্তানের ধর্মান্ধ দলগুলি এই অঞ্চলে সীমানা অতিক্রম করে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে। জিনিজিয়াং প্রদেশে আণ্ডারগ্রাউণ্ড ইসলামিক মাদ্রাসা চালানোর ঘটনা দেখা মিলেছে। সেগুলি ভেঙে দেওয়া নিয়ে অনেক হাঙ্গামাও হয়েছে। সংঘর্ষে তাধিক মানুষ মারাও গিয়েছে। ধর্মচর্চার বেআইনী কেন্দ্র হিসাবে চীনে অনেক গীর্জাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
এখানকার বাচ্চাদের প্রথমে পরিবার থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশেষ শিক্ষালয়ে। সেখানে এতদিন বাড়িতে যে ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়েছে তা বন্ধ করে নতুন ভাবে তাদের বিশেষ শিক্ষাক্রম অনুসরণ করানো হচ্ছে। যাতে আগের ধর্মীয় চিন্তা মাথা থেকে দূর হতে পারে। তাদের মাথায় উগ্র ধর্মান্ধ চিন্তা যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে তার জন্য চিন্তার আচার আচরণ পোষাক সব কিছুতেই লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বড় হতে থাকলে তাদের মুসলিম আত্মপরিচয় তুলে ধরার জন্য দাড়ি রাখা নিষেধ করা হয়, একই কারণে এবং স্বচ্ছন্দ চলনবলণের জন্য মেয়েদের বোরখা পরতে দেওয়া হয় না। এতে যাতে ব্যত্যয় না ঘটে তার জন্য কড়া নজর রাখা হয়। কোন পিতা-মাতার এর বাইরে নিজের মত করে সন্তানদের উগ্রপন্থী ধারায় নিয়ে যাবার চেষ্টা হতে দেওয়া হয় না। কড়া ভাষায় প্রচার করা হয়, বৈজ্ঞানিক চেতনার প্রসার, প্রকৃত সত্যের সন্ধান এবং অজ্ঞতার প্রস্থানের চেষ্টাই পারে কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার অবসান ঘটাতে। ধর্ম পালনের অধিকার চীনে স্বীকৃত। ধর্ম পালনের অধিকার আছে বলেই শিশু সন্তানদের ধর্ম শিক্ষা অনুমোদন করা হয় না।
চীনে ধর্ম বিষয়ক অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে কোন নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার আছে, ধর্ম পালন না করার অধিকার আছে, ধর্মের বিরোধিতা করার অধিকার আছে।
 বিষয়টির গুরুত্ব এখানেই যে ধর্ম বিশ্বাস করলেই যে ধর্ম বিশ্বাস না-করে তাকে আক্রমণের নিশানা করা কখনো অধিকার হতে পারে না। ইসলাম যে কাজ হামেশাই করার চেষ্টা করে এবং ধর্ম পালন না - করলে তাকে হত্যা করার মতো কাজে অগ্রসর হতে পিছু পা হয় না। এটা ইসলাম ধর্ম চেতনার মধ্যে সঞ্চারিত। কাজেই ধর্ম পালন করা কারো অধিকার হলে পাশাপাশি পালন না – করা অন্যের অধিকার হতেই পারে। আর ধর্ম পালন করার জন্য প্রচার করা গেলে, ধর্ম পালন না-করার জন্য অর্থাৎ ধর্মের বিরোধিতাও অধিকার হতে পারে। তাকে বিধর্মী বলে আক্রমণ করা যায় না।
বর্তমান পৃথিবীতে ধর্মকে অগ্রাধিকার দান বা বিশেষভাবে মান্য করার কোনও অর্থ নেই। রাস্তা করতে গিয়েও যে কোনও নির্মাণ ভেঙ্গে ফেলা গেলে ধর্মস্থান ভেঙ্গে ফেলায় গেল গেল রব তোলার কোনও অর্থ হয় না। তেমন আইন থাকারই কোনও অর্থ নেই। অদ্ভূত ঘটনা হল, ভারতে সব রকমের ধর্মস্থান রক্ষার জন্য কোনও আইনই নেই। কেবলমাত্র যে সমস্ত ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে বলে আর্কিওলজিক্যাল সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেই কেবল ভাবার কথা। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা ধর্মনিরপেক্ষতার গান করেও এখানে একটা গজিয়ে ওঠা ধর্মস্থান ভাঙতে গেলে প্রায় ধর্মযুদ্ধ বেধে যায়।
ধর্মশিক্ষাও ধর্মাচারণ তো এখানে সর্বধর্ম সমন্বয়ের ব্রতর সামনে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই চলেছে। উদার মানবতা মন তৈরীর বদলে ক্রমে সংস্কারাচ্ছন্ন এমনকি কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতা বর্ধমান। ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের মুখে ধর্মের বুলি সব সময়। তারকা আর নেতাদের হাতে ধর্মীয় মঙ্গলসূত্র দেখা যায়। ধর্মীয় উৎসবে ধার্মিক মানুষের থেকে বেশী উৎসাহে হাজির হতে দেখা যায় ধর্মনিরপেক্ষতা আওরানো মুখগুলি। রামভক্ত বলে নিন্দায় মুখর বাংলায় এখন হনুমান মন্দিরের ভীড় বাড়ানো ভক্ত।
বিদ্যাসাগর শিশু শিক্ষায় ধর্ম আনেন  নি। এখন তা রমমিয়ে বাড়ছে। চিন শিশুশিক্ষাকে ধর্মমুক্ত রাখার চেষ্টারত। (সৌজন্যে  - কথা সাময়িকী, অনীশ সংস্কৃতি পরিষদের মুখপত্র, মার্চ-২০১৭)    
 
  • (বিঃদ্রঃ – লেখাটি ভীষণ সময়োপযোগী। বিশেষ করে চীনের সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সংঘাত কেনো হচ্ছে তা জানতে এই লেখাটি সাহায্য করবে। লেখাটির বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার। আশা করি যুক্তিবাদি মুক্তমনা বন্ধুরা আপন আপন টুইটার, ফেসবুক এবং অন্যান্য সাইটে শেয়ার করে লেখাটির ব্যাপক প্রচারের প্রয়াস করবেন।)           

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...