Thursday, November 10, 2016

হিল্লা বিয়ে



শরিয়ত মতে বিয়ে চার প্রকার। সেগুলি হলো ১).চুক্তি বিয়ে, ২).হিল্লা বিয়ে, ৩). মুতা বিয়ে এবং  ৪). দখলি বিয়ে।  চুক্তি বিয়েটিই মূল ধারার বিয়ে। বাকি বিয়েগুলিও তথা ‘হিল্লা বিয়ে’, ‘মুতা বিয়ে’ এবং ‘দখলি  বিয়ে’ও – শরিয়তে অনুমোদিত  এই বিয়েগুলি খুব কম দেখা গেলেও ইতিহাস হয়ে যায় নি, আজো এগুলির প্রচলন রয়েছে মুসলিম সমাজেতবে এ কথাও ঠিক যে ‘হিল্লা বিয়ে’র প্রচলন বিদ্যমান থাকলেও ‘মুতা বিয়ে’ ও ‘দখলি বিয়ে’র প্রচলন বিশ্বের সর্বত্রই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কয়েক বছর আগেও মনে হচ্ছিল বিশ্ব জুড়েই মুসলিমরা এ দু’টো বিয়েকে চিরতরেই বর্জন করেছে মনে হয়েছিলো যে এই বিয়ে দু’টি চিরতরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে, এবং ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু  এ ধারণা যে ভুল তা আইএস (IS – Islamic State) খুব সম্প্রতি প্রমাণ করেছে আইএস জঙ্গীরা সিরিয়া ও ইরাকে এখন ‘মুতা বিয়ে’ ও ‘দখলি বিয়ে’ দু’টিরই পুনঃপ্রবর্তন ঘটিয়েছে। আইএস  অধিকৃত অঞ্চলে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে ‘মুতা বিয়ে’ ও ‘দখলি বিয়ে’। আইএস জঙ্গীরা মুহাম্মদের সেই বাণীকে অমোঘ বাণী তথা চির সত্য বাণী বলে প্রমাণ করতে এখন ভীষণ তৎপর।  মুহাম্মদের সেই বিখ্যাত বাণিটি হলো, শরিয়তি আইন চিরন্তন ও চিরোনতুন, শরিয়তি আইন পুরানো হয় না,  বাতিলও হয় না, পৃথিবী  যতদিন থাকবে শরিয়তী আইনের প্রচলনও থাকবে, এ আইন কারো শক্তি নেই যে কোনোদিন  পাল্টাতে বা বাতিল করতে পারে আইএস – এর কথা থাক। ফিরে আসি ‘হিল্লা বিয়ে’র প্রসঙ্গে।  ‘মুতা  বিয়ে’ এবং ‘দখলি বিয়ে’ নিয়ে আলোচনা করা হবে আলাদা ভাবে। তবে ‘হিল্লা বিয়ে’ নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে এই বিয়ে তিনটির চরিত্র ও প্রকৃতি কীরূপ সে সম্পর্কে আগাম একটু আভাষ দেওয়া যাক।        
উক্ত তিন প্রকারের বিয়ের যে বিধি ও নীতিমালা তা নারীর পক্ষে যার পর নাই অবমাননাকর। নারী এই তিনটি বিয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপেই পণ্য।  মানুষ হিসেবে তাদের সমগ্র সত্ত্বা ও অস্তিত্বকে এখানে অস্বীকৃত। তাদের নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আপত্তি-সম্মতি, আগ্রহ-অনাগ্রহ ব্যক্ত করার অধিকার এখানে অপহৃত। দ্রপদীর বস্ত্র হরনের মতো তাদের সমস্ত মান-মর্যাদা এবং স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করা হয়েছে। দ্রপদীকে শ্লীলতা ও সম্মান রক্ষার ব্যবস্থা তবু রয়েছে মহাভারতে, একটি অদৃশ্য হাত অনবরত কাপড় জোগান দিয়ে তাকে নগ্নতার হাত থেকে রক্ষা করেছে। এই তিনটি বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম নারীর শ্লীলতা ও সম্মান রক্ষার কোনো রক্ষাকবচ নেই।  তাদেরকে পুরুষের পদতলে নগ্ন করে সমর্পণ করা হয়েছে যাতে তারা তাদের ইচ্ছা মতো অবাধে তাদের ভোগ করতে পারে। এই বিয়ে তিনটিতে নারীকে বিয়ের নামে বলাৎকার করার অনুমতি ও অধিকার দেওয়া হয়েছে পুরুষকে।  বিয়ের নামে নারীর উপর বলাৎকারের  কুৎসিত ও বর্বর বিধানকে আধুনিক যুগের মুসলমান ধর্মগুরুরাও মেনে নিতে পারেন নি। তাই তাঁরা এই বিয়ে দু’টিকে চিরতরে বর্জন করেছিলেন। বর্জন করার মানে তাঁরা এটা মেনে নিয়েছিলেন যে ‘মুতা বিয়ে’ ও ‘দখলি বিয়ে’-র বিধিমালা নারীর পক্ষে চরম অবমাননাকর এবং  অসভ্য, অমানবিক ও কুৎসিত প্রকৃতির যা সভ্য সমাজের অনুপযুক্ত। কিন্তু তাই বলে তাঁরা সেই বিধিমালায়  কোরান ও কোরানের প্রবক্তার কোনো দোষ দেখতে পান নি। তাঁরা বলেছেন তৎকালীন পরিস্থিতি ও পরিবেশের প্রয়োজনে ঐ বিয়ে দু’টির প্রবর্তন করা জরুরী ছিলো। তাঁরা আরো বলেন যে  এখন সে পরিস্থিতি ও পরিবেশ নেই, তাই ঐ বিয়ে দু’টি এখন অবৈধ হয়ে গিয়েছে। বিয়ে দু’টিতে কী এমন সব বিধি রয়েছে যে এ যুগে  সেগুলিকে রদ করতে হল? সে আলোচনা হবে ঐ দুটি নিয়ে আলোচনা করার সময়। এখন আলোচনা করা যাক 'হিল্লা বিয়ে' নিয়ে।
 হিল্লা বিয়ে
হিল্লা বিয়ে হলো মুসলিম সমাজের একই পুরুষ এবং একই নারীর মধ্যে দুবার বিয়ে সম্পন্ন হওয়া। ব্যাপারটা রকমঃ ধরা যাক একজন স্বামী একদিন তুচ্ছ কারণে বা অকারণে  রাগের মাথায় স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বসলো। কিছুদিন পর স্বামী দেবতার মাথা থেকে রাগের ভূতটি নেমে গেলে সে বুঝতে পারলো যে বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে।  লোকটি এখন সেই ভুলটি সংশোধন করে পুনরায় তার স্ত্রীকে বিয়ে করে ফিরিয়ে নিতে চায়। অপরদিকে স্ত্রীও তার স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করতে সম্মত এবং সে পুনরায় তার স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে চায়। স্বামী তার ভুল বুঝতে পেরেছে, সে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করে আবার নতুন করে সংসার পাততে চায়, এদিকে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও তার প্রাক্তন স্বামীকে বিয়ে করতে তার সঙ্গে পুনরায় সংসার বাঁধতে চায় এটা তো মন্দের ভালো খবরে স্বামী স্ত্রীর পরিবারের তো আনন্দিত হবার কথা, অনন্দিত হবার কথা পাড়া-প্রতিবেশী গ্রামের মানুষেরও। সবার পক্ষ থেকে হৈ হৈ করে তাদের সাধু ভাবনা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত,  আনন্দ-উৎসবের পরিবেশে তাদের দ্বিতীয় বিয়ের পর্বটা যাতে সুসম্পন্ন হয় তার জন্যে দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিৎ। কিন্তু না, ইসলাম বলছে, ওদের দ্বিতীয় বিয়েটা অতো সহজে সম্পন্ন করা যাবে না। ওদের মধ্যে আর বিয়েই হবে না না, ইসলাম তা অবশ্য বলছে না। ইসলাম বলছে যে, আল্লাহর সীমারেখাগুলি মেনে চলতে পারবে বলে ওরা যদি মনে করে, তবে নিশ্চয়ই ওরা পরষ্পরকে  পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু তার জন্যে ওদের একটি শর্ত পালন করতে হবে। শর্তটি হলো রকমঃ প্রথম স্বামীর তালাক প্রদানের পর স্ত্রীর ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হলে  তাকে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে করতে হবে। সেই অন্য পুরুষ অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেবার পর ইদ্দতকাল শেষ হলে সে তখন তার প্রথম স্বামীর জন্যে হালাল (বৈধ) হবে। তখন তারা পরষ্পরকে বিয়ে করতে পারবে। এর মধ্যখানে যে বিয়েটা করতে হবে সেটাই হলো শরিয়তের ভাষায় হিল্লা বিয়ে প্রাক্তন দম্পত্তি মাঝখানে বিচ্ছেদের পর উভয়ের সম্মতিতে পুনরায় বিয়ে করে আবার নতুন করে দাম্পত্যজীবন শুরু করতে চাইলে সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের বাধা দেবে কেনো?  কে কাকে বিয়ে করবে বা করবে না, সে তো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়, কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে সমাজ বা রাষ্ট্র বাধা দিতে পারে না যে বিধির দ্বারা মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয় সে বিধি যার নামেই আসুক সেটা অগণতান্ত্রিক  প্রতিক্রিয়াশীল বিধি বৈ নয়। আর হিল্লা বিয়ে বিধি  দুজন মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্খা স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে শুধু তাই নয়, একজন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য একজন পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করছে।   বিধি তাই শুধু অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীলই নয়, এ বিধি নারীর পক্ষে ভীষণ অমর্যাদাকর ও অবমাননাকরও। শুধু অন্য পুরুষকে বিয়ে করলেই হবে না, ইসলাম তার সঙ্গে আর একটা অবশ্য পালনীয় একটি শর্তও জুড়ে দিয়েছে ‘হিল্লা বিয়ে’র বিধিতে যা নারীর পক্ষে আরো আপত্তিকর, অশ্লীল ও অবমাননাকর, এবং মানব সমাজের ইতিহাসে যা বোধ হয় সব চেয়ে জঘন্য ও কুৎসিত শর্ত। কী সেই শর্তটি? সেটা বলার আগে ইসলামের সংবিধানে ‘হিল্লা বিয়ে’র আইনে ঠিক কী বলা আছে সেটা দেখা যাক। এই বিয়েটির আইন কোরানের বাকারা সুরার ২৩০ নং আয়াতে লিপিবদ্ধ  রয়েছে। আইনটি বলছে, - ‘অনন্তর যদি সে তালাক প্রদান করে তবে এর পরে অন্য স্বামীর সাথে  বিবাহিতা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য বৈধ হবে না, তৎপর সে তাকে তালাক প্রদান করলে যদি উভয়ে মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমাসমূহ স্থির রাখতে পারবে, তখন তারা যদি পরষ্পরে প্রত্যাবর্তিত হয় তবে উভয়ের পক্ষে কোনই দোষ নেই এবং এগুলোই আল্লাহর সীমাসমূহ, তিনি অভিজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্যে এগুলো ব্যক্ত করে থাকেন। (অনুবাদ – ইবনে কাসির) এই তর্জমাটি সঠিক ও যথাযথ কীনা সে বিষয়ে সংশয় নিরসনের জন্যে আর একজন ইসলামি পণ্ডিতের বঙ্গানুবাদ এবং ইংরাজী তর্জমাও দিলাম। বঙ্গানুবাদটি দেখুন, -  অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত না অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত না হবে। তারপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, এবং যদি উভয়ে মনে করে যে তারা আল্লাহ্‌র সীমারেখা রক্ষা করতে সমর্থ হবে, তবে তাদের পুনর্মিলনে কারও কোনো অপরাধ হবে না, এবং এটাই আল্লাহ্‌র সীমারেখা, আল্লাহ্‌ তা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। (ড.ওসমান গণি )  ইংরাজী অনুবাদটা হলো এরূপ - ‘‘ So if a husband divorces his wife (irrevocably), he cannot, after that, re-marry her until she has married another husband and he has divorced her. In that case there is no blame on either of them if they re-unite; provided they feel that they can keep the limits ordained by Allah. Such are the limits ordained by Allah, which He makes plain to those who understand.’’   হিল্লা বিয়ের সঙ্গে আর একটি শর্ত রয়েছে বলে একটু আগে উল্লেখ করেছি। সেটা হলো এটা -  শুধু বিয়ে করলেই হবে না, বিয়ে করার পর তাদের একটি অবশ্যই শর্ত পূরণ করতে হবে।  সে শর্তটি আরো জঘন্য, আরো কুৎসিত, আরো ঘৃণ্য ও বর্বরতম। শর্তটি হলো, অন্য পুরুষের  সঙ্গে যদি এই শর্তে বিয়ে হয় যে  তাদের মধ্যে যৌনমিলন সংঘটিত হবে না, শুধু নাম কা ওয়াস্তে তাদের বিয়েটা হবে এবং বিয়ের পর দ্বিতীয় স্বামীটি তাকে তালাক দিয়ে দেবে। না,  তাহলে সে তার পূর্বতন স্বামীর জন্যে হালাল বা বৈধ হবে না। বিয়েটা এই শর্তেই হতে হবে যে দ্বিতীয় স্বামীটি তার সঙ্গে সহবাস করবে এবং সহবাসের সমস্ত সুখ দ্বিতীয় স্বামীটি ভোগ করবে। কোরানের ২৩০ নং ধারায় বা আয়াতে এই শর্তটি (দ্বিতীয় ও অস্থায়ী স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলন বাধ্যতামূলক) অবশ্য স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয় নি। সুতরাং ইসলামের অনুরাগী ও অনুসারীদের মনে হতে পারে যে এমন ঘৃণ্য শর্তের সঙ্গে  হিল্লা বিয়ের সম্পর্ক নেই। ইসলাম-বিদ্বেষীরা ইসলামকে হীন প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে শর্তটি জুড়ে দিয়েছে।  না, মোটেই তা নয়। মুহাম্মদ স্বয়ং উক্ত আয়াতটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় এই শর্তটির কথা বলেছেন। সমস্ত সহিহ হাদিসে এটা বর্ণিত রয়েছে। রয়েছে উক্ত আয়াতের তফসিরেও।  দেখা যাক তফসিরে ঠিক কী বর্ণনা রয়েছে। তফসির বলছে,  – “যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দু’তালাক দেয়ার পরে তৃতীয় তালাক দিয়ে ফেলবে, তখন সে তার উপর হারাম হয়ে যাবে। যে পর্যন্ত না অন্য কেউ নিয়মিতভাবে তাকে বিয়ে করতঃ সহবাস করার পর তালাক দেবেবিয়ে না করে যদি তাকে দাসী করে নিয়ে সহবাসও করে তথাপি সে তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে না। অনুরূপভাবে যদি নিয়মিত বিয়েও হয় কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস না করে থাকে তাহলেও সে পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে না।   
একটি হাদিসে রয়েছে যে, নবী (সঃ) – কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ‘একটি লোক একটি স্ত্রী লোককে বিয়ে করলো এবং সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিল। অতঃপর সে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিত হলো, সেও তাকে সহবাসের পুর্বে তালাক দিয়ে দিল। এখন কি তাকে বিয়ে করা তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে?’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘না, না। যে পর্যন্ত না তারা একে অপরের মধুর স্বাদ গ্রহণ করে। মুসানাদ-ই-আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি।
একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞাসিত হন, ‘একটি লোক তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলো। অতঃপর সে অন্য লোকের সাথে বিবাহিত হলো। এরপর দরজা বন্ধ করে ও পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে  যৌন মিলন না করেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিল। এখন কি স্ত্রীটি তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে?’ রালুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘না, যে পর্যন্ত না মধুর স্বাদ গ্রহণ করে’ (সহীহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)  (দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, ১ম-৩য় খণ্ড, পৃ-৬৪২, ৬৪৩)  পাঠক, লক্ষ্য করুন, তফসিরকার উক্ত শর্তটি সম্পর্কে মুহাম্মদের উম্মতদের (মুসলমানদের) মধ্যে  যাতে বিন্দুমাত্র সংশয় বা দুর্বলতা তৈরী না হয় তার জন্যে একাধিক হাদিসকেও উদ্ধৃত করেছেন। একে তো হিল্লা বিয়েটাই নারী জাতির পক্ষে চরম লজ্জা ও অপমানের। তার সঙ্গে একজন অন্যপুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনে বাধ্য করার শর্তটি জুড়ে দিয়ে নারীজাতির যে অপমান ও অবমাননা করা হয়েছে তা বর্ণনা করা মানুষের সাধ্যের বাইরে।
উক্ত জঘন্য শর্তগুলি পূরণ করলেই যে প্রাক্তন দম্পত্তি আবার পরষ্পরকে বিয়ে করে পুনরায় নতুন করে দাম্পত্যজীবন শুরু করতে পারবে তারও নিশ্চয়তা কিছু নেই। কারণ, হিল্লা বিয়ের আইনে এ কথা বলা হয় নি যে, যে লোকটির সাথে বিয়ে হবে সে লোকটি তালাকপ্রাপ্তা সেই নারীকে ভোগ করার পর তালাক দিতে বাধ্য। যেহেতু আইনে সে কথা বলা নেই, তাই লোকটি তালাক নাও দিতে পারে, এবং না দিলে তালাক দেওয়ার জন্যে তাকে বাধ্য করা যাবে না। অর্থাৎ একবার রাগের মাথায় উত্তেজনার বশে ভুল করে কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় তবে তাদের পুনর্মিলনের জন্যে হিল্লা বিয়ের আইনে কোনো রক্ষাকবচ পর্যন্ত নেই। সুতরাং বিষয়টি হলো এই যে, ‘হিল্লা বিয়ে’টা শুধু একটি জঘন্য ও কুৎসিত আইনই নয়, আইন হিসেবেও এটা বড়োই দুর্বল আইন।    
         
    

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...