Sunday, September 11, 2016

মুসলমান হতে হলে আগে দাসত্ব স্বীকার করতে হবে



একজন মুসলিম কী খাবে কী খাবে না তা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারে না। যেমন কচ্ছপ কিংবা শূকরের মাংস খাওয়া হারাম (নিষিদ্ধ)।    একজন মুসলিম কী পোশাক পরবে কী পরবে না তা নিজে স্থির করতে পারবে না। যেমন মুসলিম নারী হিযাব পরবো না বলতে পারবে না,  এবং একজন পুরুষ টাইট পোশাক পরবো বা নিম্নাঙ্গের পোশাকের ঝুল  ইচ্ছেমতো  বড়ো করতে পারবে না।   একজন মুসলমান কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে সে স্বাধীনতা তার নেই। অমুসলিদের সাথে  বন্ধুত্ব করা গর্হিত কাজ (শাস্তিযোগ্য অপরাধ)। একজন মুসলমান গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতে পারবে না, বা কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে তার মত ব্যক্ত করতে পারবে না । কারণ, আল্লাহ বলেছে কোরানের প্রত্যেকটা বিধিনিষেধ ও আইনকানুন অবশ্যই পালন করতে হবে।  আল্লাহর কথার উপর প্রশ্ন করা যাবে না।  কেনো বৃষ্টি-খরা-বন্যা-ভূমিকম্প-সুনামি-ঝড়-তুফান ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনা বা দুর্যোগগুলি ঘটে - এ সব প্রশ্ন করা যাবে না। যা হয় সবই আল্লাহর হুকুমেই হয় মানতে হবে। কেনো অসুখ-বিসুখ হয় প্রশ্ন করা যাবে না। প্রশ্ন করা যাবে না কেনো কেউ ধনী হয় কেউ দরিদ্র হয়। যা কিছু হয় ব্যক্তি জীবনে ও সমাজ জীবনে তার সবই আল্লাহর হুকুমেই হয় মানতে হবে। দারিদ্র থেকে মুক্তির কি উপায় প্রশ্ন করা যাবে না,  দারিদ্র থেকে মুক্তির  উপায় কী তাও সন্ধান করা যাবে না।  অসুখ-বিসুখ  ও মহামারী কেনো  হয়  প্রশ্ন করা যাবে না, এবং অসুখ-বিসুখ বা মহামারী  থেকে মুক্তির কী উপায়  তারও সন্ধান করা যাবে  না। প্রশ্ন করলে বা মুক্তির পথ সন্ধান করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান বা আনুগত্য নষ্ট হবে। এ বিশ্বাসেই অটল থাকতে হবে যে,  ব্যক্তি জীবনে বা সমষ্টি জীবনের পক্ষে হানিকর  ছোটো বড়ো সমস্ত ঘটনার  হাত থেকে একমাত্র আল্লাহই বাঁচাতে পারে, মানুষ পারে না। সুতরাং  যা কিছু চাওয়ার তা দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে, আল্লাহর কাছে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করতে হবে, মানুষের কাছে কিছু চাওয়া যাবে না। একজন মুসলমান যদি এ সবের অন্যথা করে তবে সে আর মুসলমান থাকে না। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস অটুট থাকলেও না।  এক কথায় প্রকৃত মুসলমান হতে হলে এবং আজীবন তা থাকতে হলে সবাইকেই কোরানের প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্যের প্রতি প্রশ্নহীন বিশ্বাস ও আনুগত্য স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ মোদ্দা কথা হলো এই যে,  সাচ্চা মুসলমান হওয়ার প্রধান ও প্রাথমিক শর্ত হলো বিনা প্রশ্নে ও প্রতিবাদে আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করা।   মুসলমান হতে হলে আগে দাস হতে হবে – এর অন্যথা চলবে না।
এ পর্যন্ত যা আলোচনা করা হয়েছে তা যুক্তির নিরিখে।  কিন্তু তা  মনগড়া তথ্যের ভিত্তির উপর মোটেই নয়। যুক্তি যা দাঁড় করিয়েছি তা সবই কোরান প্রদত্ত বাণীর ভিতের উপর। তবুও ধর্মভীরু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমানরা এ কথা মানতে চাইবেন না যে মুসলমান হতে হলে আগে দাস হতে হবে। তাঁরা  প্রশ্ন তুলবেন – ‘মুসলমান হতে হলে দাস হতে হবে’  এ কথা কি কোরানে  লেখা আছে?  এমন প্রশ্ন যাঁরা করেন তাঁরা অবশ্য কোরান না পড়েই করেন। শুধু এই  বিশ্বাস থেকে করেন যে, কোরানে এ কথা লেখা থাকতেই পারে না। কারণ তাঁদের  নিখাদ বিশ্বাস যে কোরান হলো  সত্য, অকাট্য যুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি পবিত্র ও মহান ধর্মগ্রন্থ।   এ বিশ্বাস তাঁদের এতোই গভীরে প্রথিত যে তাকে যাচাই করার আবশ্যক আছে বলে তাঁদের কোনোদিন মনে হয় না। এটা যে কেবলই একটা অন্ধবিশ্বাস তাও ওঁদের কখনোই মনে হয় না। ফলে কোরানে বর্ণিত আছে এমন  মানবতাবিরোধী  ও বর্বরোচিত  আইন-কানুনের সমালোচনা করলে তাকে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে তর্ক    করেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ের  ডিগ্রীধারী এ সব শিক্ষিত মানুষরা  এ কথাটিকে - মুসলমান হতে হলে আগে দাস হতে হবে – ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে আমাকে ইসলাম ও মুসলমানের দুষমন বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করবে। এবং এ কথা বলার জন্যে চাপাতি দিয়ে আমার মুণ্ডু নামিয়ে দিলে ইসলামের একজন শত্রু হয়েছে বলে বেশ প্রীত ও তৃপ্ত বোধ করবে। এই ডিগ্রীধারী  শিক্ষিত মানুষদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, হ্যাঁ, আপনাদের আল্লাহ কোরানেই অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বলেছে যে,  মুসলমানদের সব আগে দাস হতে হবে এবং প্রশ্নহীনভাবেই আল্লাহর  দাসত্ব করতে হবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে স্বচক্ষে এবার দেখুন, যে গ্রন্থটিকে আপনারা আল্লাহর গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন সেই গ্রন্থটি (কোরান) কী বলছে।   কোরান আল-সাফফাত সুরায় বলছে –  
·         নূহ আমাকে আহ্বান করেছিল এবং আমি কত উত্তমরূপে সারা দিয়েছিলাম। তাকে এবং তার পরিবারবর্গকে আমি রক্ষা করেছিলাম মহা সঙ্কট হতে। তারই বংশধরদের বংশ পরম্পরায় রক্ষা করেছি। আমি এর পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এইভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। সে আমার বিশ্বাসী দাসদের অন্যতম ছিল। অবশিষ্ট লোকদের নিমজ্জিত করেছিলাম।  (৩৭/৭৫-৮২, অনুবাদ – ড.  ওসমান গণী)   ‘অবশিষ্ট লোকদের নিমজ্জিত করেছিলাম’ – কথাটার অর্থ সবাইকে বন্যার জলে ডুবিয়ে নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিলো।
·         ওদের নিকট এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহা নেই বলা হলে, তখন ওরা অগ্রাহ্য করত। এবং ওরা বলত – আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যগণকে ত্যাগ করব। কিন্তু সে (মুহাম্মদ) সত্যসহ আগমন করেছে, এবং সে সমস্ত প্রেরিত পুরুষগণের সত্যতা স্বীকার করেছিল। তোমরা অবশ্যই মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ করবে। তোমরা যা করতে তারই শাস্তি ভোগ করবে – তবে তারা নয় – যারা আল্লাহর বিশুদ্ধ-চিত্ত দাস।  (৩৭/৩৫-৪০, অনুবাদ – প্রাগুক্ত)  এ আয়াতের অর্থ – মুসলমানদের বিশুদ্ধ-চিত্ত দাস হতে হিবে।
·          ইব্রাহীম বলল – আমি আমার প্রতিপালকের কাছে চললাম, তিনি অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করবেন। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক সৎশীল পুত্র-সন্তান দান করো। অতঃপর তাকে আমি এক সহিষ্ণু পুত্রের সংবাদ দিলাম। ... যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল, এবং ইব্রাহীম তার পুত্রকে (জবেহ করার জন্য) কাত করে শায়িত করল। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম – হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে, এইভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এ ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে কোরবানির জন্য এক হৃষ্ট-পুষ্ট দুম্বা দিলাম। ... ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ... এইভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।  সে আমার এক বিশ্বাসী দাস ছিল।  (৩৭/৯৯-১১১,অনুবাদ – প্রাগুক্ত)   মুসলমান হতে হলে আল্লাহ বলছে ইব্রাহীমের মতই বিশ্বাসী দাস হতে হবে এবং নিজের পুত্র সন্তানকেও তার সন্তোষটির জন্যে বিনা প্রশ্নে  কোরবানি করতে হবে। আর হ্যাঁ, অহেতুক একই কথার (এইভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি) পুনরুক্তি  কেনো এমন বেয়ারা (?) প্রশ্ন করা যাবে না। আর হ্যাঁ, এ কথার উপরেও বিশ্বাস  স্থাপন করতে হবে যে ‘সৎশীল পুত্র-সন্তান’ পেতে হলে আলাহর কাছেই হাত পাততে হবে, পুত্রকে ‘সৎশীল’ করে তোলার কর্ম মানুষের নয়।  
·         নিশ্চয় আমি মুসা ও হারুণের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম, এবং তাদের সম্প্রদায়কে আমি মহাসংকট হতে উদ্ধার করেছিলাম। আমি তাদের সাহায্য করেছিলাম। ফলে তারা বিজয়ী হয়েছিল। ... এবং আমি তাদের সরলপথে সুপরিচালিত করেছিলাম। ... মুসা ও হারুণের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এইভাবে আমি সৎশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।   এরা উভয়েই আমার বিশ্বাসী দাস ছিল।  (৩৭/১১৪-১২২, অনুবাদ – প্রাগুক্ত)  
উপসংহার টানতে চাই এ কথা বলে যে,  হ্যাঁ, এটা মানতেই হবে যে -  ‘মুসলমান হতে হলে আগে দাস হতে হবে’।  না, এ কথাটার উপর বিতর্ক  করার কোনো সুযোগ নেই এবং এটাও বলার সুযোগ নেই যে, যারা এটা বলছে তারা ইসলামের বদনাম বা অপপ্রচার করছে।
(১২.৯.১৬, কুরবানির ঈদের  ঠিক আগের দিন)    





KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...