Monday, December 21, 2015

মুসলিমদের সঙ্গে তঞ্চকতায় কেউ কম যায় না, তবে মমতা তুলনাহীন



সংবৎসর সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা মুসলিম ধর্মীয়নেতাদের তোয়াজ ও তোষণ করে । এর মাত্রা যদি হঠাৎ বাড়তে শুরু করে তবে জানতে হবে যে ভোট আসন্ন ।  কিছু দিন আগে মমতা ব্যানার্জী সবাইকে চমকে দিয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর তথা উলামায়ে জমিয়তে হিন্দ,পশ্চিমবঙ্গ শাখার  জনসভায় গিয়ে মঞ্চ আলো করে বসলেন । তা নিয়ে সর্বস্তরে গুঞ্জন ও ফিসফাসের রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৮ই ডিসেম্বর  মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাজির হলেন তথাকথিত পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির জনসভায় । এ সব ঘটনা বলে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন । মুসলিম সমাজের ধর্মীয়নেতাদের আগেই তো বগলদাবা করা হয়ে গেছে, এবার সিদ্দিকুল্লাহ ও ত্বহা সিদ্দিকিকে বগলদাবা করে মমতা ব্যানার্জী আসন্ন বিধানসভা ভোটে কেল্লা ফতে করতে চাইছেন ।
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনংখ্যা অনেক, ২৭% । সব দলেরই চোখ থাকে তাই মুসলিম ভোটের দিকে ।  সবাই মুসলিমদের  ভেড়া ভাবে । মনে করে ধর্মীয়নেতাদের কথায়  তারা  দলবেঁধে ভোট দেয় (এটা আদৌ সত্যি নয়)  তাই সবাই এই ধর্মীয়নেতাদের ভজনা করে । কথায় কথায় তাদের গলায় মুসলিম দরদ উথলে ওঠে । বলে আমাদের ভোট দাও, আমরা মুসলমানদের সব সমস্যার সমাধান করে দেবো আর এই সুযোগে এই ধর্মীয়গুরুরাও লম্বা লম্বা ফর্দ তুলে দিয়ে বলে এই করতে হবে সেই করতে হবে । সরকারের জনবিরোধী নীতির কারণে যখন সংকট সর্বস্তরে তীব্র হয় তখন মানুষ সরকারের পরিবর্তন চায় । পরিবর্তন হয়ও । তখম মুসলিম ধর্মগুরুরা বলে আমরাই অর্থাৎ মুসলিমরাই পরিবর্তনের কাণ্ডারীসংবাদ মাধ্যমও তাদের সঙ্গে গলা মেলায় উচ্চগ্রামে, বলে সংখ্যালঘুরা তাদের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে  শাসক দলের বিরুদ্ধে ঢেলে ভোট দিয়েছে । যারা ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং যারা ক্ষমতায় আসে সবাই সে রকমটাই ভাবে । ফলে যারা ক্ষমতাচ্যুত হয় তারা যেমন সম্বৎসর মুসলিম ধর্মগুরুদের মন ফিরে পিতে তাদের তোয়াজ করার ধারা অব্যাহত রাখে, তেমনি শাসক দলও । শাসক দল ও বিরোধীদলগুলির মধ্যে এভাবে মুসলিম ধর্মীয়নেতাদের তোয়াজ করার হীন প্রতিযোগীতা চলতে থাকে । ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এটাই অলিখিত দস্তুর ।
মুসলিম ধর্মগুরুদের তোষণ একদিকে চলতেই থাকে, অপরদিকে কিন্তু মুসলিমরা  যে তিমিরে ছিলো সে তিমিরেই থেকে যায় । ভুল বললাম, তারা আরো পিছিয়ে যায় ।  তাদের দারিদ্র, বেকারি, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অচিকিৎসা-কুচিকিৎসা, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার বেড়েই চলে ।  রাজনৈতিক দাদা-দিদিরা যতই মুসলিম দরদ দেখাক, মুসলিমরা ভবিষ্যতেও পিছোতে থাকবে, এ ধারাই অব্যাহত   থাকবে। কারণ, তাঁরা কেউই মুসলিম সমাজের দৈন্যদশার জন্যে ভাবিত বা উদ্বিগ্ন  নন । কেউই এই সমাজের উন্নতির জন্যে আন্তরিকও নয় । বরং সবাই চাই তারা পিছিয়ে থাক, এবং আরো পিছিয়েই  যাক । কারণ, মুসলিমদের পশ্চাদপদতাকে তাঁরা ভোটের রাজনীতিতে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে  ব্যবহার করতে চায় । ট্রাম্প কার্ড হিসেবে সমানে ব্যবহার করতে চায় তসলিমা ও রুশদি ইস্যুকেও ।  মুসলিম ধর্মীয়নেতারাও চায় না মুসলিমদের পশ্চাদপদতার অবসান । এর পেছনে দুটি কারণ বিদ্যমানএকটি কারণ হলো শরিয়তি, আর একটি রাজনীতি । শরিয়তি কারণটা কী তার বাখ্যা পরে অন্যত্র দেয়া যাবে। রাজনৈতিক কারণটা এ রকম – ধর্মগুরুদের  রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের সঙ্গে বার্গেনিং করার ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার তো মুসলিমদের পশ্চাদপদতা ও অনগ্রসরতাই   
ক্ষমতায় বা সরকারে আসার পর তাই শাসক দল কীভাবে এই ধর্মগুরুদের পদলেহন করবে সেটাই তাদের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে । কংগ্রেস, বামফ্রণ্ট, তৃণমূল এবং অন্যান্য   সব দলের  ক্ষেত্রেই কথাটা সমান প্রযোজ্য ।  তবে এক্ষেত্রে তৃণমূল সর্বাধিনায়ক মমতা ব্যানার্জী অতুলনীয় । বামফ্রন্ট বড়াই করে,  তারাই একমাত্র  নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আপোষ করে না  কিন্তু মুসলিম ধর্মগুরুদের তথা মুসলিম মৌলবাদীদের পদতলে তারা বারবার নতজানু হয়েছে তাদের ৩৪ বছরের শাসনে । কংগ্রেসের শাসনে (১৯৭৭ সাল পর্যন্ত) পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা  তৈরী হয়েছিলো ২৩৮টি,   বামেদের শাসনে (২০০৮ সাল পর্যন্ত) তা বেড়ে হয় ৫০৮ টি, দ্বিগুনেরও বেশী ১৯৭৭ সালে মাদ্রাসার জন্যে বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৫.৮ কোটি টাকা, বাম শাসনে ২০০৮ সালে সেই বরাদ্দ বেড়ে  দাঁড়িয়েছিলো ১৮৮ কোটি টাকা । বাম শাসনে পাক-বাংলাদেশের মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলি পশ্চিমবঙ্গকে করিডর  বানিয়ে ফেলেছিলোসীমান্ত জেলাগুলিতে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ ও মলদহে,   খারিজি মাদ্রাসা ও মসজিদগুলির একাংশে জঙ্গিরা যোগাযোগ বাড়তে থাকে, কোথাও কোথাও  ঘাঁটি গেড়ে বসে । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন বেআইনি মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন । সঙ্গে সঙ্গে  মুসলিম মৌলবাদীরা  বুদ্ধবাবু ও সিপিএম  মাদ্রাসা ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয় তখন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে কিংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসও মুসলিম মৌলবাদীদের  সঙ্গে গলা মেলায়  তা দেখে আলিমুদ্দিনও দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সরকারের লাগাম টেনে ধরে বুদ্ধবাবু তখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন মাদ্রাসার বিরুদ্ধেই সরকার পদক্ষেপ করবে না ।  মুসলিম ধর্মগুরুদের তুষ্ট করতে  বামফ্রন্ট সরকার আরো কয়েকটি কদর্য পদক্ষেপ নেয় । যেমন  তসলিমার বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষিদ্ধ করা,  তসলিমাকে কলকাতা থেকে নির্বাসিত করা,   আলিয়া মাদ্রাসাকে পরিকাঠামোর উন্নতি করেই তড়িঘরি আলিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ে উন্নীত করা, ইত্যাদি ইত্যাদি । মোল্লাতন্ত্র-তোষণের নগ্ন রাজনীতির এরূপ আরো অনেক নগ্ন দৃষ্টান্তই  বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের শাসনে খুঁজলে পাওয়া  যাবে  
মোল্লাতন্ত্র তোষণে সবকে ছাপিয়ে গেছেন মমতা ব্যানার্জী । বামফ্রন্টের নেতা-মন্ত্রীরা অন্ততঃ  প্রকাশ্যে মুসলিম ধর্মীয়নেতাদের সঙ্গে গা মাখামাখি করতেন না, তাঁদের কিছুটা হলেও চক্ষু লজ্জা ছিলো । মমতা ব্যানার্জীর তো তারও বালাই নাই । তাঁর  বামদিকে ইমাম, ডানদিকে  ইমাম,  ইমামদের দুই পাশে দুই মুসলিম মৌলবাদী নেতা ও সাংসদ  আহমদ হাসান ইমরান ও ইদ্রিশ আলি – এ ছবি প্রায়শই চোখে পড়েতিনি প্রায়শই ছুটে যাচ্ছেন মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাথায় আঁচল  দিয়ে ধর্মীয়নেতাদের পাশে বসে রোজা ভাঙছেন, আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে দুয়া করছেন, অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে ‘সালেমালেকুম’  ‘ইনশাল্লাহ’, ‘খোদা হাফেজ’  প্রভৃতি ভুলভাল আরবি শব্দ উচ্চারণ করছেনএকজন মুখ্যমন্ত্রী নগ্ন মোল্লা-তোষণে এভাবে  এতো নীচে নামতে পারে ভাবাই যায় না । শুধু কথা ও আচরণের চটকদারি দিয়ে নয়, মোল্লা-তোষণে সরকারি কাজেও মমতা ব্যানার্জী  বামফ্রন্ট সরকারের  চেয়ে অনেক কদম এগিয়ে । ক্ষমতায় আসীন হয়েই দশ হাজার খারিজি মাদ্রাসাকে সরকারী অনুমোদন দেবার ঘোষণা দেন । হজ হাউসের সম্প্রসারণ করেছেন এবং নতুন একটা হজ হাউস নির্মাণ করেছেনঅসাংবিধানিক ভাবে ইমাম ও মোয়াজ্জিন ভাতা চালু করেছেন । তসলিমার একটি বই উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন এবং তার লেখা একটা মেগা সিরিয়ালের টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন । সলমান রুশদিকে কলকাতা বইমেলায় আসতে দেন নি আছে এ রকম আরো অনেক ঘটনা । এমনকি বাংলাদেশী মুসলিম জঙ্গিসংগঠনগুলি যখন এ রাজ্যে খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে একটার পর ঘাঁটি গেড়েছে তখনও তাঁর সরকার না দেখার ভাণ করে নিষ্ক্রিয় থেকে গেছে । এনআইএ (NIA) – র তদন্তে উঠে এসেছে যে  খাগড়াগড় বিষ্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) যুক্ত ।  অথচ ঐ বিষ্ফোরণকে ‘র’-এর কাজ বলে জঙ্গিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছেএ সবই যে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে মুসলিম মৌলবাদীদের তুষ্ট করতেই করা হয়েছে তা  বলা বাহুল্য ।
রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসে এভাবে মোল্লাদের তোষণ করে । আর হিন্দুত্ববাদীরা এটাকে মুসলিমতোষণ বলে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে । পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছে তার মূলে রয়েছে কংগ্রেস, টিএমসি ও বামফ্রন্টের মোল্লাতোষণ নীতি । আর তার উল্টোদিকে প্রতারিত হয় সাধারণ মুসলমানরা । মুসলমানদের সঙ্গে  তঞ্চকতা করে সবাই, মমতার তুলনায় সবাই শিশু ।     

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...