Monday, February 9, 2015

ধর্মের অবমাননা নয় রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ব্লাসফেমি আইন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিক


 পাঁচ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলের  একটি সেলে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন এক দরিদ্র ও নিরক্ষর নারী, আসিয়া বিবি । মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হওয়ার পর তাঁকে ফাঁসীতে ঝোলানোর দাবীতে মিছিল হয়েছে অনেক এও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, যদি ফাঁসি  না দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়,  তবে জেল থেকে  বের হলেই তাঁকে হত্যা করা হবে ।  কিন্তু  আসিয়া মৃত্যুভয়েই শুধু কাতর তা নয়, তাঁকে তাড়া করছে ফিরছে তাঁর নিরপরাধ স্বামী ও পাঁচ সন্তানের মৃত্যুর আশঙ্কাও । ২০১০ সালে আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ব্লাসফেমি আইনে । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আল্লাহর পিয়ারা নবীকে ব্যঙ্গ করেছেন । তাঁর বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোগ নিসংশয়ে প্রমাণিত হয়েছে এমন নয় । কিন্তু  আদালত মনে করেছে যে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে  তা সত্যি না হয়ে পারে না, কারণ তিনি যে খৃষ্টান নারী কোরানের কথা কি মিথ্যা বা ভুল হতে পারে ?  পবিত্র কোরান বলছে যে, “ইহুদিরা বলে ওজায়ের আল্লাহর পুত্র, খৃষ্টানরা বলে মসিহ আল্লাহর পুত্র ।  এটি তাদের মুখের কথা, তারা পূর্ববর্তী অবিশ্বাসীদের কথা মতো অনুকরণ করছে,  আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন, তারা কেমন  করে সত্য বিমুখ হয় ।” [৯/৩০]  কোরানে এ কথা যখন লেখা আছে তখন  আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্যি না হয়ে পারে না । তাছাড়া খৃষ্টানদের ধ্বংস করার আদেশ তো স্বয়ং  নবীর আদেশ ।  সুতরাং শরিয়া আইন অনুসারে  আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবীর মান ও আদেশ রক্ষা করতে দ্বিধা করেন নি ।           
আর আসিয়া যেহেতু নবীকে ব্যাঙ্গ করেছে, সুতরাং  তাঁর গোটা পরিবারটাই দোষী ।  তাঁদেরকেও হত্যা করার জন্যে হন্যে হয়ে তাই খুঁজে বেড়াচ্ছে  ধর্মান্ধ মুমিনদের একটা দল   তাঁর স্বামী বাধ্য হয়ে পাঁচ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে  পাঁচ বছর ধরে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন ।    আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মাসিহ গোপন এক স্থান থেকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়েছে। এক স্থানে বেশিদিন থাকতে পারিনা আমরা। এভাবে পালিয়ে থাকা বাচ্চাদের জন্য কঠিন  আসিয়া  বিবি সব সময়  তাই  ভয়ে কুঁকড়ে থাকে কখন যে তাঁর স্বামী ও সন্তানরা খুন হয়ে যাবে  এই দুশ্চিন্তায়   আশিক তাই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন  তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের নিরাপত্তা প্রদানে এগিয়ে আসার  জন্যে । আশিক দাবী করেছেন  যে তাঁর স্ত্রীর উপর    নবীকে ব্যাঙ্গ করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যে ।
আসিয়া বিবিও দৃঢ়ভাবে অভিযোগটি প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন । তৎসত্ত্বেও  তিনি বলেছেন যে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবেও নবীর বা ইসলামের  অবমাননা হয়ে থাকে তবে  তার জন্যে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী  তবু তাঁর কথায় বিচারকদের মন গলে নি ।  প্রকৃত ঘটনাটা কী তা জানার জন্যে পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসির  আসিয়ার [ছবিটি আসিয়া বিবির]
সঙ্গে জেলে গিয়ে দেখা করেছিলেন । আসিয়ার কথায় অবিশ্বাসের কিছু দেখেন নি তিনি ।     তিনি আসিয়ার মুক্তির জন্যে সরকারের কাছে অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছিলেন ।   এও বলেছিলেন যে বৃটিশ আমলের তৈরী ব্লাসফেমি আইনটির সংশোধন করা ভীষণ জরুরি । তাসির শুধু রাজ্যপালই ছিলেন না, ছিলেন তৎকালীন শাসক দল পিপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও ।  কিন্তু  ঐ কথা বলার কিছু দিনের মধ্যেই, ২০১১ সালের ৪ঠা জানুয়ারী, তিনি  তাঁরই একজন দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন  যে তাঁকে হত্যা করেছিল  তার মাথায় ফুল ছিটিয়ে  আদালতে তাকে বীরের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো    আজো সে বীরের মর্যাদা পাই ঐ একই দোষে কিছুদিন পরই পাকিস্তানের সংখ্যালঘু দপ্তরের একজন মন্ত্রীকেও খুন হতে হয়েছিলো । অবশ্য তাঁর একটা বেশী অপরাধ ছিলো বটে । তিনি যে  খৃষ্টান  ছিলেন ।   মুসলিম রাষ্ট্রে খৃষ্টান মন্ত্রী ! রাগ তো আগে থেকেই ছিলো, তারপর সে কী না বলে যে আসিয়াকে মুক্তি দিতে হবে !   ব্লাসফেমি আইনের সংস্কার করতে হবে ! তাঁর এতো বড়ো দুঃসাহস ! দুঃসাহসের মাশুল দিতে হয়েছিল তাঁকে প্রাণ দিয়ে ।     আসিয়ার প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ ধ্বনিত  হওয়ায়  পাকিস্তান সরকার  অবশ্য  মৃত্যুদণ্ড কার্যকর  করার সাহস পায় নি ।  
প্রকৃত ঘটনাটি হলো, আসিয়ার সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম নারীর ঝগড়া হয়েছিলো  মাঠে স্ট্রবেরি তোলাকে কে কেন্দ্র করে ।  ঐ মুসলিম মেয়েরা তখন আসিয়াকে  মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বলেছিলো যে,  আসিয়া  কুয়ো থেকে  জল তুলে কুয়োকে দুষিত করেছে ।  বিধর্মীরা অপবিত্র, তাই আসিয়ারা যে কুয়ো থেকে জল নেবেন সেটা দুষিত না হয়ে পারে না  কয়েক দিন পর  তারা আসিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে  সে তাদের  নবীকে ব্যঙ্গ করেছেমন অভিযোগ  শুনে কী আর চুপ করে থাকা যায় ! একদল সাচ্চা  মুসলমান  শোনামাত্রই আসিয়াকে ধাওয়া করে ।  আসয়া তখন মাঠে ছিলেন । এ ঘটনার  প্রত্যক্ষ সাক্ষী  আসিয়ার ১৪ বছরের মেয়ে এশমা  জানিয়েছে  যে, তারা মাঠে যায় এবং তাকে প্রহার করে তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলে আমাদের সামনেই প্রহার করে   
ব্লাসফেমি আইন একটি ঘৃণ্য আইন যা মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে খর্ব করেব্লাসফেমি কথার অর্থ হলো ঈশ্বর, ঈশ্বরের ধর্ম ও ঈশ্বরের দূতের সমালোচনা বা  নিন্দাযারা ঈশ্বর ও তার প্রতিনিধিদের সমালোচনা করবে তাদের কঠোর শাস্তি দেবার  জন্যে ব্লাসফেমি আইন । পৃথিবীর বহু  দেশেই এখন ব্লাসফেমি কোনো অপরাধ বা দোষের কিছু নয় । সে রকম একটি দেশ হলো ইংলণ্ড অথচ ইংলণ্ডেই  ১৬৯৭ সালে এই আইনটি চালু হয়েছিলো এবং সে বছরেই  স্কটল্যাণ্ডের মাত্র কুড়ি বছরের তরুণ টমাস আইকেনহেডকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো । তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি ওল্ড টেস্টামেন্টের সত্যতা ও যীশুর অলৌকিক শক্তিকে অস্বীকার করেছিলেন । ইংলণ্ডে তারপর অবশ্য আর কাউকে ব্লাসফেমি আইনে  মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় নি । সেই ইংলণ্ড   ব্লাসফেমি আইনটি তুলে  দিয়েছে ।   আমেরিকার সংবিধানেও ব্লাসফেমি কোনো দোষের কিছু নয় । শুধু ইংলণ্ড ও আমেরিকা নয়, পাশ্চাত্যের উন্নত ও ধনী দেশগুলিতে এবং   জাপান ও  তাইওয়ানের মতো পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলিতেও ব্লাসফেমি আইনটি হয়  তুলে দেওয়া হয়েছে, নয়তো আইনটিকে মৃতবৎ ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে । ইউরোপের পার্লামেন্টারি  এ্যাসেম্বলী অব কাউন্সিল তো তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলির কাছে বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে  সুরক্ষা দেয় এমন একটি আইন প্রণয়ন করার সুপারিশও করেছে ।  তবে  মুসলিম বিশ্বের ছবিটি আলাদা । অধিকাংশ মুসলিম দেশেই এই কুৎসিৎ ও কালো  আইনটি রয়েছে পুরো মাত্রায় সক্রিয়রূপে ।
কোন দেশ কত উন্নত, ধনী, আধুনিক  ও সভ্য তা বোঝার ক্ষেত্রে ব্লাসফেমি আইন অবশ্যই একটা অন্যতম বড়ো মাপকাঠিযে দেশ  যতো উন্নত ও সভ্য সে দেশ ব্লাসফেমি আইনটিকে হয়  বর্জন  করেছে,  না হয় ডাস্টবিনে বাজে কাগজের ন্যায় ফেলে রেখে দিয়েছে  এই দেশগুলি তার স্থলে মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি ও আইনগত বৈধতা প্রদান করেছে    এটা করেছে এ জন্যে যে  একটা দেশের বিকাশ ও উন্নতির জন্যে সর্বাগ্রে দরকার বিজ্ঞান গবেষণা ও সাধনার উন্মুক্ত পরিবেশ । আর তারজন্যে তো চাই মানুষের মস্তিষ্কের মুক্তি মস্তিষ্কের মুক্তি ছাড়া মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে না । আর মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ব্যতীত কোনো জাতি বা দেশ  দার্শনিক, বিজ্ঞানী, গবেষক ইত্যাদি ব্যক্তিত্বদের জন্ম দিতে পারে না সে কথা  বলা বাহুল্য মুসলিম দেশগুলিতে বাক-স্বাধীনতা ও  মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভীষণ সঙ্কুচিত এর ফলশ্রুতিতে এই দেশগুলি সেই মুসলিম দেশ হয়েই থেকে গেছে, এই এক বিংশ শতাব্দিতেও উন্নত, আধুনিক ও  সভ্য দেশ হয়ে উঠতে পারে নি এই দেশগুলির মতো পশ্চাদপদ দেশ খুব কমই আছে পৃথিবীতে ।  যারা  সালমান তাসিরের মতো চিন্তাশীল মানুষদের মস্তিষ্কগুলিকে গুলি করে হত্যা করে, কিংবা  মৃত্যুদণ্ডের  ভয় দেখিয়ে  সেই মস্তিষ্কগুলিকে নিষ্ক্রিয় ও স্তব্ধ  করে  রাখে তাদের পরিণতি তো এটাই হবে ।  তারা তো  পিছনেই পড়ে থাকবে সমুদ্রের জলে ও জলের তলে, ভূগর্ভে ও ভূপৃষ্ঠে এবং মহাকাশে স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে প্রকৃতির মহাভাণ্ডার । মুসলিম বিশ্বকে তো প্রকৃতি যেনো দুহাত উপুর করে ঢেলে দিয়েছে তার যাবতীয় সম্পদ । সব চেয়ে দামি যে সম্পদ, তরল সোনা, সে তো সব চেয়ে বেশী মুসলিম বিশ্বেই । তবুও সব চেয়ে দীন ও দরিদ্র এই বিশ্বই । কেনো ? কারণ, মোল্লাতন্ত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধ্যয়ন, সাধনা ও গবেষণাকে হারাম জ্ঞানে বর্জন করেছে । মোল্লাতন্ত্র শেখায় যে রুজি-রুটি ও জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই তোমার সব কিছু  খোদা তা’আলার কাছে সর্বস্ব নিয়ে আত্মসমর্পণ করে যা চাওয়ার তার কাছেই চাও । মুসলিম বিশ্ব তাই জ্ঞানের এবাদত [আরাধনা] ত্যাগ করে আল্লাহর এবাদতে দিনরাত মগ্ন । মগ্ন রোযা-নামাযে, মগ্ন সবেবারাত ও শবে কদরের রাত্রে কোরআন তেলাওয়াতে [পাঠে] । ফলে বিশ্বপ্রকৃতির মহাভাণ্ডার হতে মহা মূল্যবান সম্পদগুলি আহরণ করার জন্যে যে জ্ঞান এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা আবশ্যক তা অর্জন করতে মুসলিম দেশগুলি ব্যর্থ । তাই তো মুসলিম দেশগুলিই সবচেয়ে পশ্চাদপদ ।
মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি থাকলেও এই আইনটি কিন্তু ইসলামের আবিষ্কার নয় । কোরান ও হাদিসে কোথাও এই আইনের উল্লেখ নেই । এমনকি এই আইনের উৎপত্তি হয়েছিলো যখন তখন মুহাম্মদেরই জন্ম হয় নি । উইকিপিডিয়া সূত্র বলছে যে ইংলণ্ডে নয়,  দেড় হাজার বছর আগে রোমে ব্লাসফেমি আইন চালু হয়েছিলো ।  সামন্ত  রাজারা  খৃষ্টান ক্যাথলিক চার্চের  যাজকদের সহায়তায় জনগণের উপর ধর্মের নামে অত্যাচার  নামিয়ে  আনার জন্যে এই আইনটি তৈরী করেছিলেন    যাজকদের দিয়ে রাজারা বলিয়েছিলেন যে তাঁরা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তাঁরা যা বলেন তা ঈশ্বরেরই  কথা এবং রাজার আইন মানে ঈশ্বরের আইন । সুতরাং রাজার কথা অবিশ্বাস করা ও  রাজার আইন অমান্য করা  ঈশ্বরকে অবিশ্বাস ও অমান্য করার মতোই অমার্জনীয় অপরাধ, যে অপরাধের  শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড । সামন্ত রাজারা আসলে যে সীমাহীন শোষণ ও জুলুম করতো জনগণের ওপর তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে দমন করার জন্যে এই আইন প্রবর্তন করেছিলো । এই কুৎসিত আইনটি পরে ধার করে নেয় মুসলিম রাজা-বাদশারা ও মুসলিম ধর্মীয় নেতারা । ইসলামি আইনের সঙ্গে এই আইনটি খাপ খেয়েও যায় দারুণভাবেকারণ, মুহাম্মদ দাবি করেন যে তিনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি ।  ঈশ্বর তাঁর মুখ দিয়েই তার বিধি-নিষেধ ও আদেশ-উপদেশগুলি মানুষের কাছে প্রেরণ করার জন্যে তাঁকে তাঁর প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছে । ক্যাথলিক চার্চের যাজকরা যা যা বলেছিলেন ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তনের সময় মুহাম্মদ সেই কথাগুলিই একটু অদল-বদল করে বলে গিয়েছেনঅদল-বদল করে যা বলেছেন তা ব্লাসফেমি আইনের চেয়েও অমানবিক, কঠোর,  নির্মম ও নৃশংস । তিনি বলেছেন – “যারা আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাস করে না, এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল যা বৈধ করেছেন, তা বৈধ করে না, এবং যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সত্য ধর্ম স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত তারা অধীনতা স্বীকার করে স্বহস্তে জিজিয়া না দান করে ।” [৯/২৯] স্পষ্ট আদেশ – যারা আল্লাহ ও আল্লাহর নবীকে অস্বীকার করবে তাদের কোনো ক্ষমা নয়এ রকম আরো আয়াত আছে যেখানে সরাসরি তাদেরকে হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে । ইসলামের এই মন্ত্রগুলির ভিত্তিতেই মুসলিম রাজা-বাদশাগণ মোল্লাদের দিয়ে  প্রথমে ব্লাসফেমি আইনকে শরিয়া আইনের অন্তর্ভুক্ত করিয়ে নেন, পরে তাঁরা  ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রের  সংবিধানে জুড়ে দেন   পাকিস্তানের কুখ্যাত স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হক তাঁর স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার  কালো আইনটিকে   ইংলণ্ডের সংবিধান থেকে ধার করে পাকিস্তানের দণ্ডবিধিতে ১৯৮২ সালে ২৯৫[খ] এবং ১৯৮৬ সালে ২৯৫[গ] ধারা সংযুক্ত করেন ঠিক সেই দুটি আইন কে জামাত সাংসদ নিজামিও সেটাকে বাংলাদেশের দণ্ড বিধির ২৯৫[খ] ও ২৯৫[গ] ধারা হিসাবে সংযুক্ত করার জন্য বিল আকারে সংসদে পেশ করেছিলেন । হেফাজতে বাংলাদেশও ২০১৩ সালে ঢাকা লং মার্চের সময় যে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছিলো তাতেও ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করার দাবি ছিলো । ২৯৫[খ] অনুসারে  কোরানের অবমাননা করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে এবং ২৯৫[গ] মুহাম্মদের সমালোচনা বা অবমাননা করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হবে ।  পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনে ২৯৮[গ] ধারায় আহমদিয়া মুসলিম জামাতভুক্ত মুসলিমদের অমুসলিম বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং কেউ আহমদিয়া মুসলিম বলে দাবি করলে তার সাজাও হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হয় মৃত্যুদণ্ড ।   
বিশ্বজুড়ে স্বভাবতই বিতর্ক ক্রমশঃ জোরদার হচ্ছে ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে ও বিপক্ষে । ভারত ও বাংলাদেশে ঐরূপ কঠোর ব্লাসফেমি আইন না থাকলেও নরমরূপে এই আইনটি এখনো বলবত আছে যার পূর্ণ অবসান আমরা দাবি করছি । ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, ঈশ্বর, ঈশ্বরের দূত, দেব-দেবীর বাস্তবসম্মত  সমালোচনা করার অধিকার আজো আমাদের নাগালের বাইরে  যা আমাদের বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে ।   এ দেশে ধর্মের নামে যে অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যালীলা চলে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করার অধিকার আমাদের নেই । অথচ যারা ধর্মের নামে অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার ফতোয়া দেয় তাদের রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা । এ রাজ্যে একদিকে অশোক সিঙ্ঘল, প্রবীণ তোগাড়িয়া, রাজ ঠাকরে, উদ্ধব ঠাকরে প্রমুখ এবং অপরদিকে  বুখারী, বরকতি, ত্বহা সিদ্দিকি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী প্রমুখ ধর্মীয় নেতাদের হত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা আছে,  কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা লেখক সলমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিন  যাঁরা হত্যা ও হিংসার বিরুদ্ধে ও মানবাধিকারের পক্ষে লেখেন তাঁদের  প্রবেশ করার অধিকার নেই । 
রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতা হাসিল করার স্বার্থে ধর্মীয় মৌলবাদীদের তুষ্ট করতে নরম ব্লাসফেমি আইনটিকে পাহারা দিচ্ছে ও লালন-পালন করছে । ব্লাসফেমি আইন বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই শুধু খর্ব করে না,  এই আইনটি মানবাধিকার ও মনবতাবিরোধীও । স্বভাবতই ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে এবং বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত ক্রমশঃ জোরদার হচ্ছে বিশ্বজুড়ে । তা দেখে মুসলিম দেশগুলি যথেষ্ট ভীত হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে । ৫৬টি ইসলামী দেশের সংগঠন ওআইসি বহুবার চেষ্টা করেছে ধর্মের অবমাননা নিষিদ্ধ করার একটি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের ব্যাপারে জাতিসংঘের সমর্থন পেতে। তাদের মহাসচিব আইয়ান আমিন মাদানি বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাথে ইসলামের শিক্ষার সংঘাত ঘটছে।"  খুবই দুঃখজনক ঘটনা হলো জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ওআইসির আবেদনে সাড়া দিয়ে বলছে, ধর্মীয় অবমাননার ইস্যুটি সউদি আরবের এক অনুরোধের প্রেক্ষপটে মার্চ মাসে একটি অধিবেশনে তোলা হবেআমরা জাতিসঙ্ঘের এই ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি । আমরা দাবি জানাচ্ছি যে ধর্মের অবমাননা নিষিদ্ধ করাকে আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিবর্তে ব্লাসফেমি আইন নিষিদ্ধ করার দাবিকে অন্তর্ভুক্ত করুক । 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...