Saturday, January 31, 2015

সৌদি আরবের রাজা সালমান কি রাজা আবদুল্লাহর সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, না কি পিছন দিকে হাঁটবেন – গোটা বিশ্ব সে দিকে তাকিয়ে


গত ২৩শে জানুয়ারী সৌদি আরবের  বাদশা আবুদুল্লাহ বিন আজিজ সৌদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর সৎভাই সালমান বিন আজিজ সৌদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আবুদুল্লাহ কি উপলব্ধি করেছিলেন যে কোরান ও শরিয়তি আইন আধুনিক যুগে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে?  তিনি কি বুঝেছিলেন যে শরিয়তি আইন ও সংস্কৃতির নাগপাশ ছিঁড়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা আবশ্যক হয়ে পড়েছে?  তিনি কি এ রকম কিছু উপলব্ধি করেছিলেন যে, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে অন্ততঃ কিছুটা হলেও তাল মিলিয়ে না চললে সৌদি আরবের অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে? হ্যাঁ, প্রয়াত আবদুল্লাহ এমন কিছু পদক্ষেপ করেন এবং এমন কিছু ঘোষণা দেন তাঁর ম্যৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে যা থেকে ঐ প্রশ্নগুলো অনেকের মনেই তৈরী হয়েছে। 
২০০৮ সালে তিনি ভ্যাটিকানে যান পোপের সাথে দেখা করতে। এটা স্পষ্টতই ইসলামবিরোধী। পোপকে আশ্বাসও দেন যে তিনি খৃষ্টানদের গীর্জা স্থাপন এবং ধর্মাচরণ করার অনুমতি দেবেন। এটা  মুহাম্মদের নির্দেশের বড় উলঙ্ঘন। কারণ, মুহাম্মদ মৃত্যুকালে মক্কা ও মদিনা-সহ আরবকে মুশরিক মুক্ত করার নির্দেশ দেন। ২০১১ সালে তিনি নারীর ভোটাধিকার দেবার ঘোষণা দেন। এটাও ইসলামি আইন বিরুদ্ধ। আবদুল্লাহ প্রথমটা কার্যকরী করে যেতে পারেন নি। নারীর ভোটাধিকারের ঘোষণা আংশিকভাবে কার্যকরী করেন ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালে আর একটা অবিশ্বাস্য সাহসি পদক্ষেপ করেন আবুদুলাহ। তিনি নারীদের খেলাধুলার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন।
সৌদি বাদশা আবুদুল্লাহর এই সব পদক্ষেপ নিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড় হয়েছিলো।  তা নিয়ে সে সময় [১২.১০. ২০১১]  আমি একটি প্রবন্ধ লিখি যেটা আজো প্রাসঙ্গিক। সেই প্রবন্ধটি নীচে তুলে দিলাম। তার আগে একটা কথা বলি যেটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে।  কথাটা হলো,  বর্তমান বাদশা সালমান বিন আজিজ সৌদ কি আবদুল্লাহ বিন আজিজ সৌদের আরব্ধ কাজ সম্পূর্ণ করবেন, না কি আবদুল্লাহর পথ থেকে সরে এসে সৌদি আরবকে পেছন দিকে চালিত করবেন? 


সৌদিতে গীর্জা স্থাপন ও নারীকে ভোটাধিকার প্রদান করা হলে তা হবে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ        
২০০৮ সালে সংবাদপত্রের একটি  ছবি এবং তার নীচে লেখা সংবাদে চমকে উঠেছিলো সারা বিশ্ব। কারণ, একই ফ্রেমে ছিলো ভ্যাটিকানের পোপ ষোড়শ বেন্ডিক্ট এবং সৌদি আরবের বাদশা আবদুল্লাহর ছবি সৌদি বাদশা স্বয়ং গিয়েছেন ভ্যাটিকানের পোপের নিকট। গোটা বিশ্বের চোখ আটকে গিয়েছিল ছবিতে সেদিন। আটকে তো যাবারই কথা। মুসলিম-খৃষ্টান বৈরীতামূলক দ্বন্দ যে ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই। সৌদি আরবের বাদশা শুধু একজন রাষ্ট্র-প্রধানই নন, তিনি মুসলিম বিশ্বের একজন প্রধান নেতাও। ইসলামের চোখে খৃষ্টানরা আল্লাহর এবং মুসলমানদের শত্রু। তাই সৌদি বাদশা ও ভ্যাটিকানের পোপের সাক্ষাৎ ও একই ফ্রেমে তাঁদের ছবি দেখতে পাওয়া ততটাই অবিশ্বাস্য যতটা অবিশ্বাস্য দিনের আকাশে চাঁদ দেখতে পাওয়া। ওঁদের দুজনের এক ফ্রেমে দেখতে পাওয়াটা যতটা বিষ্ময়ের ততধিক বিষ্ময়ের ছিলো ছবির নীচের ক্যাপশনটি। ওতে লেখা ছিলো, পোপ বাদশাকে সৌদি আরবে গীর্জা স্থাপনের অনুমতি দিতে অনুরোধ করলে বাদশা সহাস্যে তাতে সম্মতি প্রদান করেন।  

উক্ত সংবাদের বিষ্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই সৌদি আরবের বাদশার আর একটি ঘোষণা আর একবার  চমকে দেয় গোটা বিশ্বকে।  ভ্যাটিকান থেকে ফিরে মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০১১ সালে বাদশা ঘোষণা করলেন যে, সৌদি আরবের নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হলো। নারীরা এবার থেকে ভোট দিতে পারবে, এমনকি পুরুষের সঙ্গে ভোটে দাঁড়াতেও পারবে এবং মজলিসে শুরা (বাদশার উপদেষ্টামন্ডলী) সদস্যও হতে পারবে। পোপের  সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া এবং সৌদি আরবে গীর্জা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যতটা বিষ্ময়কর ঠিক ততটাই বিষ্ময়কর নারীকে ভোটাধিকার প্রদান করা। ফলে সৌদি আরবে নারীকে ভোটাধিকার দেওয়া হতে পারে তা  বিশ্বের  মুসলিমদের কাছে কল্পনাতীত ছিল। সৌদি আরব হলো মুহাম্মদের জন্মভূমি ও কর্মভূমি। সেই ভূমিতে তাঁর আদেশ-উপদেশের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত বাদশা নিতে পারেন তা ছিলো মুসলমানদের কাছে কল্পনাতীত। সৌদি আরব ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আপাদমস্তক শরিয়তি শাসন ও শৃঙ্খলে আবদ্ধ ও শৃঙ্খলিত।তাই বহিরঙ্গে এই দেশের সর্বত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চোখ ধাঁধানো সব কর্মকান্ড চোখে পড়লেও এর অভ্যন্তরীণ সমাজে এবং প্রশাসনিক আইন-কানুনে আধুনিক সভ্য সমাজের কোন চিহ্ন চোখে পড়ে না। অভ্যন্তরীণ সমাজে ও সংবিধানে আজও আধুনিক  সমাজের আইন-কানুন ও শিল্প-সংস্কৃতি  প্রবেশ করতে পারে নি, সেখানে শুধুই মধ্য যুগের নিকষ কালো অন্ধকার। মধ্যযুগীয় ধর্মীয় কুসংস্কার এবং পশ্চাদপদ ও প্রতিক্রিয়াশীল আইনের নিঃসীম অন্ধকারে সৌদি আরব আজও নিমজ্জিত রয়েছে। আর সেই অন্ধকার যুগের আইনের শিকার হলো সকল অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এবং সমগ্র মুসলিম নারীজাতি। মুসলিম নারী সকল প্রকার স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। বস্তুতঃ তাদের যাপন করতে হয় মানবেতর এক শোচনীয় জীবন। 
 সৌদি আরবে এখন (২০১১) ৮ লক্ষ মতো খৃষ্টান নাগরিক রয়েছেন । কিন্তু তাঁরা কেউ সে দেশের নাগরিক নন। সেখানে অন্যান্য অমুসলিম যারা থাকেন তাদের অবস্থাও তাই।  নানা পেশায় কর্মরত বিধর্মীরা কেউ সে দেশে আজীবন থেকে যেতে চেয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব চাইলেও তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় না। সৌদি আরবের সংবিধানেই সে সুযোগ নেই। একমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই সে দেশের নাগরিক হতে পারবে। সে দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে হলে বিধর্মীদের ক্ষেত্রে তাঁদের স্বধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। শুধু নাগরিকত্ব অর্জনের উপরেই নয়, বিধর্মীদের স্ব স্ব ধর্ম পালনের উপরেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করার   অধিকার নেই। নেই নিজেদের ধর্মীয় উপাসনা গৃহ স্থাপন করার অধিকারও। এমন কিছু অঞ্চল আছে (মক্কা, মদীনা ইত্যাদি) যেখানে বিধর্মীদের প্রবেশ করাও নিষেধ। সৌদি আরব এমনিতেই আল্লাহ ও রাসুলের (মুহাম্মদ )পবিত্র ভূখন্ড। তবে বিশেষ করে মক্কা ও মদিনা হলো মুসলমানদের কাছে  সর্বাধিক পবিত্র ভূমি। কারণ মক্কা হলো মুহাম্মদের জন্মভূমি এবং মদিনা হলো তাঁর প্রধান কর্মভূমি। সুতরাং মক্কা ও মদিনার পবিত্রতার সাথে কোনো আপোষ করা চলবে না। অমুসলিমরা অপবিত্র, তাদের স্পর্শে মক্কা ও মদিনার পবিত্রতা বিনষ্ট হবে বলে তাদের জন্যে এই দু'টি নগরীর দ্বার চিরতরে বন্ধ। সৌদি আরবে প্রবেশের সময় খ্রিস্টানরা আগাম অনুমতি ব্যতীত তাদের সঙ্গে ক্রশ ও বাইবেল নিয়ে যেতে পারে না। আর ক্রশ ও বাইবেল সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাওয়াটাও সহজ ব্যাপার নয়। সৌদি আরবে রমজান মাসে দিনের বেলায় পানাহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইন শুধু মুসলমানদের জন্যেই নয়, বিধর্মীদের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য। সৌদি আরবে নারীদের অবস্থা আরও শোচনীয় ও করুণ। তাঁদের শুধু ভোটাধিকার নেই ব্যাপারটা এমন নয়, বস্তুতঃ কোনো অধিকারই নেই তাঁদের। নেই তাঁদের কোনো প্রকার মান-সম্মান ও আত্মমর্যাদাও। অনাত্মীয় কোনো পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করার অধিকার নেই। এমন কি অধিকার নেই অন্য পুরুষদের সঙ্গে একটা কথা বলারও। ঘরের বাইরে একা কোনো নারীর পা রাখার অধিকার নেই। ঘরের বাইরে যাওয়া একান্ত আবশ্যক হলে অনুমতি নিতে হবে পুরুষ অভিভাবকের (পিতা বা পতির) নিকট থেকে। শুধু অনুমতি নিলেই হবে না, তাদের কারো পেছন পেছন যেতে হবে। নারীর গাড়ি চালানোর অধিকার নেই। অধিকার নেই চাকরি বা ব্যবসা করার। উৎপাদন ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়ায় নারী সম্পূর্ণ ব্রাত্য। নারী কলুর বলদের মতো বাঁধা পুরুষের সংসারের যাঁতাকলে। এমনই হলো নারীর জীবন যা গৃহপালিত পশুপ্রাণীর থেকে উন্নত তেমন কিছু নয়। নারীর জীবনে ‘অধিকার’ বলতে কিছু নেই, কিন্তু আছে পুরুষের আরোপ করা রাশি রাশি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ও নিষেধাজ্ঞা। পুরুষের সেবা করা, মনোরঞ্জন করা, বংশ রক্ষা করা, সংসারে ঘানি টানা ইত্যাদি কত কর্তব্য নারীর জন্যে রয়েছে মুখ বুঁজে পালন করার। এর বাইরেও রয়েছে আরও কত কি – মুখ বুঁজে পতির আনুগত্য মেনে চলা, পতির তিরস্কার ও প্রহার হাসিমুখে সহ্য করা, পতি অক্ষম হলে নিজের যৌবনকে অবদমিত করে রাখা, নিজের সতীত্ব সযত্নে রক্ষা করা, কুমারী হলে কুমারীত্ব রক্ষা করা ইত্যাদি কত প্রকার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য নারীর ওপর আরোপিত আছে তার ইয়ত্তা নেই। পুরুষতন্ত্রের আরোপ করা এই সব বিধি-বিধানের  অধিকাংশই অন্য সব দেশে হয় শিথিল না হয় বর্জিত হুলেও সৌদি আরবে তা আজও সমানে টিকে আছে। সৌদি আরবের সমাজ ব্যবস্থায় এগুলি শুধু নিয়ম বা প্রথা হিসাবে প্রবর্তিত আছে তা নয়, এগুলি সংবিধানে আইন হিসাবেও লিপিবদ্ধ আছে। না, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সৌদি আরব যে আল্লাহর সংবিধান মেনে চলে কঠোরভাবে। এই সৌদি আরবে সেখানকার বাদশা তাই যখন নারীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার, ভোটে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার এবং খৃষ্টানদের গীর্জা স্থাপন করার অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয় তখন সেটা আকাশে চাঁদ দেখতে পাওয়ার মতোই অবিশ্বাস্য বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সৌদি আরব হলো মুহাম্মদের জন্মভূমি। মক্কা হলো সৌদি আরবের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর যেখানে মুহাম্মদ জন্ম গ্রহণ করেন এবং ইসলাম ধর্মের প্রচারণা শুরু করেন। মক্কায় তিনি তাঁর ধর্মকে প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যর্থ হলে সৌদি আরবের আর একটি শহর মদিনায় যান এবং সেখান গিয়ে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হন। মক্কা ও মদিনা এই দুটি শহরের সৌজন্যে সৌদি আরব বিশ্বের সমস্ত ইমানদার মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও পবিত্র, এমন কি তাদের নিজেদের জন্মভূমি ও স্বদেশ অপেক্ষাও। ওই একই কারণে সৌদি আরবের বাদশা তাদের কাছে শুধু একজন বাদশাই নয়, তিনি তাঁদের কাছে সর্বাধিক শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও আস্থাভাজন ধর্মগুরুও। সৌদি বাদশাগণ মুসলমানদের কাছে, বিশেষ করে সুন্নি মুসলমানদের কাছে এত উঁচু মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত আরও দুটি কারণে। তাহলো, তারা বিশ্বাস করে যে সৌদি আরবের বাদশাগণ আসলে মুহাম্মদের প্রতিনিধি এবং এবং তাঁরা সর্বদা আল্লাহর করুণা, কৃপা ও সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আর সে কারণেই বহু কাল ধরে সৌদি আরবের খলিফা তথা বাদশাগণ সে দেশের বুকে শত বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করে শরিয়তি শাসন ব্যবস্থাকে অবিকৃত ও অটুট রাখতে তথা ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। 
                                   , 
    , 

সৌদি আরব ও সে দেশের বাদশার প্রতি এরূপ অন্ধ আবেগ ও বিশ্বাসের কারণে সৌদি আরবের বাদশার উক্ত দুটি সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে মুসলিম দেশ ও মুসলিম সমাজে একটি গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। শরিয়তি গোঁড়ামিমুক্ত আধুনিক সমাজ নির্মাণের যে আন্দোলন ও প্রক্রিয়া চলছে মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরে অত্যন্ত মন্থর গতিতে , তাতে এবার আশা করা যায় যে কিছুটা বাড়তি গতি সঞ্চারিত হবে। অপরদিকে উক্ত ঘোষণা গোঁড়া শরিয়তপন্থীদের মধ্যে যথেষ্ট নিরাশা ও হতাশার সঞ্চার ঘটাবে যা তাঁদের গোঁড়ামিপূর্ণ মনোবলের উপর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সৌদি বাদশার এই ঘোষণায় ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। মুসলিম সমাজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মোল্লা-মুফতি ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একাংশ বাদশার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন বাদশা শরিয়ত সম্মত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন এবং এর মধ্য দিয়ে ইসলামের উদারনৈতিক চিন্তাধারাকে আরও সমুন্নত করেছেন। অন্য অংশের মতে বাদশার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অনৈসলামিক, শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ধর্মপ্রাণ ইমানদার মুসলমানদের কাছে খুবই হতাশাজনক ও বেদনাদায়ক। তাঁরা বলছেন বাদশার এই পদক্ষেপ ইসলামের মৌলনীতি ও ভিত্তিভূমিকে আঘাত ও দুর্বল করবে।
দ্বিতীয় অভিমত ও উদ্বেগটি যে আধুনিক, উন্নত ও সভ্য মানব সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত তা সংশয়াতীত। কিন্তু কোরান, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাসের আলোকে বিচার করলে এটা অনস্বীকার্য যে এই অভিমতটি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও সঠিক। সৌদি আরবে কোথাও গীর্জা নির্মাণ করার অনুমতি প্রদান করা হলে তা হবে নিঃসংশয়ে মুহাম্মদের নির্দেশের উলঙ্ঘন। এর অকাট্য প্রমাণ কোরান ও হাদিসের বহুস্থানে রয়েছে। স্বয়ং মুহাম্মদ সৌদি আরবের স্বর্গীয় পবিত্রতা রক্ষা করার জন্যে সেখান থেকে সমস্ত মুশরিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে গেছেন তাঁর মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে। মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ তাঁর সাহাবীদের উদ্দেশ্যে কতিপয় নির্দেশ প্রদান করেন যার মধ্যে ছিল একটি এরূপঃ ‘কোনও মোশরেক যেন আরবে থাকিতে না পায়’। ( দ্রঃ মৃত্যুর দুয়ারে মানবতা/মাওলানা আবুল কালাম আযাদ/পৃ-১৬) । মুহাম্মদ অবশ্য নিজেই তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সময়ে  আরব থেকে মুশরেকদের বহিষ্কারের কাজটি শুরু করেছিলেন এবং মদিনা থেকে ইহুদীদের বহিষ্কার করেছিলেন। শুধু বহিষ্কারই নয়, তিনি অসংখ্য ইহুদীকে নির্মমভাবে হত্যাও করেন। মদিনা থেকে  বিতাড়িত করার জন্যে ইহুদীদের উপর তিনি যেরূপ অত্যাচার ও নির্যাতন সংগঠিত করেছিলেন তার নজির ইতিহাসে খুব কমই আছে। এই সব নারকীয় ঘটনার সাক্ষ্য কোরান ও হাদিস আজও বহন করে চলেছে। হয় ইসলাম গ্রহণ করো, না হয় মদিনা পরিত্যাগ করো – এটা ছিল মুহাম্মদের নীতি ও নির্দেশ। এর প্রমাণ হিসাবে অনেকগুলি হাদিস বর্ণনা করা যায় । এখানে মাত্র দুটি হাদিস উদ্ধৃতি করবো। একটি হাদিসের শিরনাম হলোঃ ইয়াহুদী নাছারাদেরকে হেজাজ (মক্কা-মদীনা) হতে বহিষ্কার করা। হাদিসটি এরূপঃ ‘...  আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদিন আমরা মসজিদে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ রাসুলে পাক (সাঃ) আমাদের দিকে চলে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা ইয়াহুদীদের নিকট চল। অতঃপর আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। ইয়াহুদীদের নিকট গিয়ে তিনি তাঁদেরকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিয়ে বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ কর। তা হলে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে। ... এর পর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা দ্বীন-ইসলাম গ্রহণ কর, তা হলে শান্তিতে কাল যাপন করতে পারবে। ... এর পর তিনি তৃতীয়বার তাদেরকে বললেন, তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয় দুনিয়া আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের। আর আমার ইচ্ছা এটাই যে, তোমাদেরকে আমি এ ভূখন্ড থেকে বের করে দিব। অতএব তোমাদের মধ্য হতে কেউ যদি তোমাদের সম্পদ বিক্রয় করে দাও, নতুবা রেখে দাও, সারা দুনিয়া আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসুলের।’ (মুসলিম শরীফ, হাঃ নং- ৪৪৪১)  আর একটি হাদিস এরূপ যেখানে স্পষ্টাক্ষরে ইহুদীদের নির্মমমভাবে হত্যা করার নির্দেশে রয়েছে। হাদিসটি হলো,  ‘... আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন। বানু কুরাইজার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবিনে মুয়ায (রাঃ) – এর নির্দেশ মেনে নিতে রাজী হল। রাসুলে পাক (সাঃ) সা’দ (রাঃ) – এর নিকট লোক পাঠালেন। ... তিনি মসজিদের নিকটবর্তী হলে রাসুলে পাক (সাঃ) আনছারগণকে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা এবং উত্তম ব্যক্তির সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও। রাসুলে পাক (সাঃ) সা’দ (রাঃ)-কে বললেন, এ অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মেনে নিতে রাজী হয়েছে। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের যোগ্য লোকদেরকে কতল করা হোক। আর তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রাসুলে পাক (সাঃ) বললেন, তুনি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফায়ছালা করেছ’। (মুসলিম শরীফ, হাঃ নং- ৪৪৪৬)  উল্লেখিত হাদিস দুটির প্রথমটিতে মুহাম্মদ ইহুদীদের মদিনা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন কারণ তাঁরা মুহাম্মদের দাওয়াত (আমন্ত্রণ) রক্ষা করতে তথা স্বধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হতে সম্মত হন নি। আর দ্বিতীয় হাদিস প্রসঙ্গে এ কথা জানানো দরকার যে মুহাম্মদ সা’দের নির্দেশ তথা বিচার অক্ষরে অক্ষরে কার্যকর করেন এবং তা কার্যকর করতে গিয়ে ৭০০/৮০০ জন পুরুষ ইহুদীকে ন্শৃসভাবে কতল করেন। এভাবেই মুহাম্মদ স্বয়ং আরবকে পবিত্র(!) করার নিমিত্ত মুশরিকদের হত্যা অথবা নির্বাসিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি যেহেতু কাজটি সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেন নি, তাই মৃত্যুর পূর্বে তা সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে যান তাঁর সাহাবীদের (অনুগামী) উপর। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর ইসলামের খলিফারা (মুহাম্মদের প্রতিনিধিরা) সেই নির্দেশটি অতি নির্মমভাবে কার্যকর করেন। ফলে আরবের বিধর্মীরা আত্মরক্ষার্থে হয় মুসলমান হয়ে যায়, না হয় স্বধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেয় মুসলমানদের হাতে। সে সময় বলা বাহুল্যে যে আরব ভূখন্ডে বিধর্মীদের যত উপাসনা গৃহ ছিল তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই সৌদি আরবে অমুসলমানদের বসবাস করা বা ধর্ম পালন করা নিষিদ্ধ রয়েছে। স্বভাবতই সৌদি আরবে গীর্জা স্থাপনের অনুমতি প্রদান যে একটি অনৈসলামিক কাজ তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। গীর্জা স্থাপনে অনুমতি প্রদান করার অর্থই হলো খ্রিস্টানদের সাথে তথা মুশরিকদের সাথে সদ্ভাব স্থাপন করা যা কোরান একেবারেই অনুমোদন করে না  কোরানে অনেক আয়াতেই এ বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে । কোরানের কয়েকটি আয়াত এরূপঃ  ‘... তখন তোমরা নামায সংক্ষেপ করলে কোনো অপরাধ নেই, যদি তোমরা ভয় করো- অবিশ্বাসীগণ তোমাদের বিব্রত করবে। নিশ্চয় অবিশ্বাসীরা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। (৪/১০১)  ‘আল্লাহর নিকট অবিশ্বাসকারীরাই নিকৃষ্ট জীব, যেহেতু তারা অবিশ্বাস করে’। (৮/৫৫) ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের আপনজন ব্যতীত আর কাউকেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। ... এবং তাদের হৃদয়ে যা গোপন রাখে তা আরও গুরুতর’। (৩/১১৮)  এই আয়াতটিতে ‘তোমাদের আপনজন ব্যতীত আর কাউকেই’ – এই কথার অর্থ স্পষ্ট করা হয়েছে কোরানের তফসিরে। তফসিরটি এরূপঃ ধর্মোদ্রোহী লোকের সঙ্গে বিশ্বাসীর বন্ধুতা করা উচিত নহে, তাহারা সর্বদা শত্রু । ( দ্রঃ কুরআন শারীফ/গিরিশ চন্দ্র সেন, পৃ-৬২) 
নারীর ভোটাধিকারের প্রশ্নে আলোকপাত করা যাক। নারীকে ভোটাধিকার ও ভোটে প্রার্থী হবার অধিকার প্রদান করার অর্থ হলো তাঁদের ঘরের বাইরে একা একা ঘোরাঘুরি করার অধিকার ও স্বাধীনতা প্রদান করা এবং তাঁদের হাতে দেশ পরিচালনা করার অধিকার অর্পণ করা। ইসলাম ধর্মে কিন্তু এর উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে।  ঘরের বাইরে নারীর একা বাহির হওয়ার অনুমতি নেই এবং নারীর বোরখা পরা বাধ্যতামূলক। নারী যে ঘরের বাইরে একা একা ও সাজসজ্জা করে ঘোরাঘুরি করতে পারবে না তা স্পষ্ট করে কোরান বলেছে। সেই আয়াতটি হলো – ‘এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে, প্রাক-ইসলামি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়িও না, তোমরা নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অনুগত হবে ‘। ( ৩৩/৩৩ ) নারীর যে বোরখা পরা বাধ্যতামূলক সে কথা বলা হয়েছে ৩৩/৫৯ নং আয়াতে। আর নারীর নেতৃত্ব?  ইসলাম একেবারে নাকচ করে দিয়েছে সেটা। কোরান বলছে পুরুষ নারীর কর্তা এবং হাদিস বলছে যে জাতি নারীর নেতৃত্ব মেনে চলবে তারা কোনোদিন সফলকাম হতে পারবে না। কোরানের কথাটি হলো – ‘পুরুষগণ নারীদিগের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত কর্তা। যেহেতু আল্লাহ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সেহেতু যে তারা স্বীয় ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে থাকে; এই জন্য স্বাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত হয়, ...’। (৪/৩৪)  নারী-নেতৃত্ব প্রসঙ্গে মুহাম্মদ বলেছেন – ‘... নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছিল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনই সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন রমণীর হাতে অর্পণ করে’। (বোখারী শরীফ, ১ম-৭ম খন্ড একত্রে, হাঃ নং – ১৮০৩,৩৩৬৬) 
এরূপ আরও অনেক আয়াত ও হাদিস আছে যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে সৌদি আরবের বাদশার নেওয়া সিদ্ধান্ত দুটি সম্পূর্ণরূপে শরিয়ত ও ইসলাম বিরোধী। বাদশাও তা বিলক্ষণ জানেন। তাই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যে সব কথা বলেছেন তা কার্যতঃ কৈফয়ত বৈ নয়। তিনি বলেছেন উলামা (ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ) ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলেই নারীকে ভোটাধিকার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তার ফলে ইসলামের অবমাননা হবে না। সৌদি আরবে গীর্জা স্থাপনের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছেন। বাদশার এই জবাব যে বিন্দুমাত্র  বলিষ্ঠতা ও আত্মপ্রত্যয়ের দৃপ্ত স্বর বা ভঙ্গী নেই তা বলা বাহুল্য।
সৌদি আরবের বাদশা সিদ্ধান্ত দুটি কতটা আন্তরিকতার সাথে কিংবা উদারনৈতিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গ্রহণ করেছেন তা বলা মুসকিল আরবের বিভিন্ন দেশ এবং আরবের বাইরে বিভিন্ন মুসলিম দেশে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নে বিক্ষোভ ক্রমশঃ বাড়ছে কোথাও সশস্ত্র বিদ্রোহও শুরু হয়েছে। মানুষের প্রধান চাওয়া হচ্ছে  চাইছে গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা। তাই কোথাও বিক্ষোভ তো কোথাও বিদ্রোহ। এই বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে সামিল শুধু পুরুষরাই নয়, সামিল নারীও।  খোদ সৌদি আরবেও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার। এমন কি নারীরাও রাস্তায় নেমে পড়েছে।  তারাও তাদের নিজেদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করছে। তারা ভোটাধিকার চাইছে বহুদিন থেকেই, এখন তো চাইছে গাড়ি চালাবার অধিকারও। সৌদি আরবের বাদশা এসব আন্দোলন ও বিক্ষোভকে হাল্কাভাবে নেওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। ভয় পাচ্ছেন পাছে মিশর, লিবিয়া, সিরিয়ার মতো বিদ্রোহের রূপ না নিয়ে নেয় এসব আন্দোলন।  সেই ভয়েই হয়তো তিনি মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবী অনিচ্ছা সত্বেও স্বীকার করে নিতে  বাধ্য হয়েছেন। অপরদিকে অমুসলিমদেরও স্ব স্ব ধর্মাচরোণের অধিকার দিতে হবে মুসলমানরা যেমন সারা বিশ্বে সেই অধিকার ভোগ করছেন – এটা দীর্ঘদিনের একটা আন্তর্জাতিক দাবী। আন্তর্জাতিক এই চাপটি ক্রমশঃ প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ফলে  ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই দাবী বা চাপটি আর অগ্রাহ্য করা বা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  তাই বোধ হয় একেবারেই নিরুপায় হয়েই সৌদি আরবে কর্মসূত্রে বসবাসকারী আট লক্ষ খৃষ্টান সম্প্রদায়ের গীর্জা স্থাপনের দাবীকেও স্বীকার করে নিতে হয়েছে।  
মোদ্দা কথা হলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বাস্তবোচিত মূল্যায়ন করেই সৌদি আরবের বাদশাকে প্রায় ১৪০০ বছরের কট্টর শরিয়তি ঐতিহ্য তথা গোঁড়ামি থেকে কিছুটা পশ্চাদপসারণ করতে হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও নারী-স্বাধীনতার মুক্ত বায়ু যাতে কোনোভাবেই সৌদি আরবে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্যে শত শত বছর ধরে ছিল সতর্কতা। কড়া প্রহরা এবং তীক্ষ্ণ নজরদারী। অবশেষে অনেক বিলম্বে হলেও, সেই কড়া প্রহরা কিছুটা শিথিল করতেই হলো এবং একটু হলেও ফাঁক করে দিতে হলো শরিয়তি ভূখন্ডের মুক্তবায়ু-নিরুদ্ধ সকল দরজা-জানালার বন্ধ কপাটগুলি। অবশেষে মুহাম্মদের নিজের জন্মভূমি ও কর্মভূমি সৌদি আরবের শরিয়তি ফুসফুসে ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারী-স্বাধীনতার কিছুটা মুক্ত বায়ু প্রবেশ করার ছাড়প্ত্র দিতেই হলো। এটা একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা যা বিশ্ব-মোল্লাতন্ত্রকে নিশ্চিতভাবেই একটা ঝাঁকুনি দেবে। এবং ভবিষ্যতে এই ঘটনাটি   বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলি ও মুসলিম সমাজকে শরিয়তি গোঁড়ামি থেকে বেড়িয়ে এসে আধুনিক সমাজ নির্মাণের প্রশ্নে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...