Friday, May 29, 2015

মাদ্রাসা নয়, আধুনিক শিক্ষা চায় – এ দাবি জানাতে মুসলিমরা আর কটা শতাব্দী অপেক্ষা করবে



মাদ্রাসা বোর্ডের ২০১৫ – এর বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল
হাই মাদ্রাসার ফলাফল
পশ্চিমবঙ্গের হাই মাদ্রাসাগুলি থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলো ৪০৬৪২ জন ছাত্রছাত্রী যাদের মধ্যে ছাত্র ছিলো ১২৭২৯ জন [ ৩১.৩২% ] এবং ছাত্রী ছিলো ২৭৯১৩ জন [ ৬৮.৬৮% ]  ছাত্রদের পাশের হার ৮৫.৭৩%, ছাত্রীদের পাশের হার ৭৪.৬৬ % এবং গড় পাশের হার ৮০% ।  
সিনিয়র মাদ্রাসার ফলাফল 
আলিম [মাধ্যমিকের সমতুল্য] পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো এ বছর [গত বছরের অনুত্তীর্ণদের   বাদ দিয়ে] ৬৪৩৩ জন যাদের মধ্যে ৩১৩৭ জন [৪৮.৭৬%] ছাত্র এবং ছাত্রী ছিলো ৩২৯৬ জন [৫১.২৪] ।  গড় পাশের হার ৭৮.০৬% , ছাত্রদের পাশের হার ৮৮.৭৪%, ছাত্রীদের পাশের হার ৬৮.২০% ।
ফাজিল [উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য] পরীক্ষায় বসেছিলো ৩৪৪৬ জন যাদের মধ্যে ছাত্রসংখ্যা ছিলো ২১৮৯ জন [৬৩.৫২%],  এবং ছাত্রীসংখ্যা ছিলো ১২৯৭ জন [৩৭.৬৪%]    ছাত্রদের পাশের হার ৮৭.১১%,   ছাত্রীদের পাশের হার ৬৪.২২%] এবং গড় পাশের হার ৭৮.০৬%] । 
হাই মাদ্রাসা সিলেবাসের ব্যাপক আধুনিকীকরণ করা হয়েছে বাম সরকারের আমলে । ফলে  সিনিয়র মাদ্রাসার তুলনায় হাই মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত ও আধুনিক । তবুও হাই মাদ্রাসার সিলেবাস  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাসের চেয়ে এখনও কিছুটা পশ্চাদপদ ।  হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিকের  ছাত্রছাত্রীদের আরবি ভাষার জন্যে অতিরিক্ত একশ’ নম্বরের বোঝা বহন করতে হয় । আর পরিবেশগত ও পরিকাঠামোগতভাবে তো হাই মাদ্রাসাগুলি  মধ্যধিক্ষা পর্ষদের অধীন হাইস্কুলগুলি থেকে অনেক এতো বেশী  পশ্চাদপদ যা ভাবাই যায় না ।   হাই মাদ্রাসাগুলি  পশ্চাদপদ  ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব ও পরিবেশ থেকে  বেরিয়ে আসতে সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছে  আসলে সে চেষ্টাটাই নেই সে রকম প্রয়াস করলে সেক্ষেত্রে প্রবল বাধা আসে রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ থেকেই । কাজী মাসুম আক্তার  সেই প্রয়াসটা করছিলেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাঁর মাদ্রাসায় । তা করতে গিয়ে এখন তাঁর জীবন ও চাকরি দুটোই বিপন্ন । অপরদিকে সিনিয়র মাদ্রাসায়  মূলতঃ ধর্মীয় শিক্ষাই দেওয়া হয়, সেখানে আধুনিক শিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত সিনিয়র মাদ্রাসাগুলি যদিও সরকার অনুমোদিত এবং সরকারই যাবতীয় খরচ বহন করে তবুও সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসে  
ইসলামি শিক্ষার যা প্রাধান্য রয়েছে তা অবাক করার মতো  মুসলিম সমাজের  আলেমগণ তাই  হাই মাদ্রাসার  পরিবর্তে  সরকারের কাছে   সিনিয়র মাদ্রাসা স্থাপন  করার দাবিই করেন   তবে সিনিয়র মাদ্রাসাও তাঁদের প্রথম পছন্দ নয়, তাঁদের প্রধান পছন্দ ও দাবি হলো রাজ্যের  সমস্ত  খারিজি মাদ্রাসাগুলির  অনুমোদন দিতে হবে ।  সিনিয়র মাদ্রাসা তাঁদের দ্বিতীয় প্রধান পছন্দ    খারিজি মাদ্রাসার সিলেবাস বলা বাহুল্য সম্পূর্ণই শরিয়ত ভিত্তিক ।
                                            কিছু পর্যবেক্ষণ  
উপরে প্রদত্ত তথ্যগুলি থেকে যে ছবিটা পাওয়া যায় তা হলো - এক]. সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা  [৬৪৩৩ জন]  অপেক্ষা হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীর [৪০৬৪২ জন] সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’গুণ   এই পরিসংখ্যানটি বলছে যে সিনিয়র মাদ্রাসায়  ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হলেও মুসলিমরা  হাই মাদ্রাসাকেই বেশী পছন্দ করেনদুই].  হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায়  ছাত্রী [ ৬৮.৬৮% ] ছাত্র  [ ৩১.৩২% ] অপেক্ষা দ্বিগুণেরও বেশী ।  এটা প্রমাণ করে যে মুসলিম পরিবারগুলি তাদের পুত্র সন্তানদের হাই মাদ্রাসা অপেক্ষা   হাই স্কুলে পড়ানোতেই বেশী  আগ্রহী । তিন]. ফাজিল [উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য] পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা  যেখানে ৩৪৪৬,    আলিম পরীক্ষায় পরিক্ষার্থী সংখ্যা সেখানে  ৬৪৩৩ জন । আলিম পরীক্ষায় যেহেতু পাশের হার প্রায় ৮০%, সেহেতু ফাজিলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিলো পাঁচ হাজারেরও বেশী ।  তাহলে আলিম পরীক্ষায় পাশ করা প্রায় দু’হাজার ছেলেমেয়েরা কোথায় গেলো ? নিশ্চয় তাদের একটা অংশ পড়া ছেড়ে দিয়েছে এবং একটা অংশ সিনিয়র মাদ্রাসা ছেড়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো  এই ঘটনা থেকে দুটো জিনিষ প্রতীয়মান হয় যে, সিনিয়র মাদ্রাসায় ড্রপ আউটের সংখ্যা বেশী এবং সিনিয়র মাদ্রাসার  মুসলিম ছেলেমেয়েদের বিরাট একটা অংশ  ফাজিল পড়তে চাই না । চার]. এ বছর যে ৪০৪৬২ জন পড়ুয়া  হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলো তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছিলো ২৭৯১৩ জন  [৬৮.৬৮% ], অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশী সেটা কি এজন্যে যে  মুসলিমরা তাদের মেয়েদের  হাই মাদ্রাসাতেই পড়াতে বেশী আগ্রহী ?  তা কিন্তু নয় এ রাজ্যে  বহু অঞ্চলে যেখানে হাই মাদ্রাসা আছে কিন্তু হাই স্কুল নেইনিরাপত্তার কথা ভেবে  সে সব অঞ্চলে মুসলিমরা  তাদের মেয়েদের মাদ্রাসায় ভর্তি করেন  অপরদিকে অসংখ্য  অভিভাবক  বাড়ির কাছে হাই মাদ্রাসা ছেড়ে দূরবর্তী হাই স্কুলেই তাদের সন্তানদের পড়াতে পাঠান যার ফলে হাই মাদ্রাসা  মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্র সংখ্যার চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশী ।       
এই পর্যবেক্ষণগুলি থেকে  স্পষ্টভাবেই এটা প্রমাণিত হয় যে মুসলিমরা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ভরসা রাখতে পারছেন না । তাঁদের এটা উপলব্ধির মধ্যে এসেছে যে সন্তানদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশ  ও উন্নতির ক্ষেত্রে, এবং আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ  নির্মাণের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা তথা ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ভূমিকা নিতে পারছে না ।  মুসলিমদের মধ্যে সেই সংখ্যাটা ভীষণ কম যাঁরা  মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখেন এবং তাদের সংখ্যাটা ক্রমশঃ হ্রাসমান । তথাপি  দুঃখজনক ঘটনা  হলো এই যে, যখন মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও তাঁদের  সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি   খারিজি মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসার দাবিতে  সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে ,  তখন  মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনরা তার প্রতিবাদ করেন না এবং সরকারের কাছে মাদ্রাসা শিক্ষার অপকারিতার কথা বাখ্যা করে আধুনিক শিক্ষার জন্যে হাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সোচ্চার হন    না । ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র মুসলিম সমাজকে যখন প্রাণপণে পেছন দিকে টেনে নিয়ে  যেতে চাইছেন তখন কলেজ-ইয়ুনিভার্সিটির ডিগ্রীধারী উচ্চ শিক্ষিত এই মানুষগুলো পুতুলবৎ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন ।  
মাদ্রাসা বোর্ডের ‘মাদ্রাস ফাইনাল’ [মাধ্যমিকের সমতূল্য], ‘আলিম’  [মাধ্যমিকের সমতূল্য], এবং ‘ফাজিল’ [উচ্চ মাধ্যমিকের সমতূল্য], এই তিনটি পরীক্ষায় যারা পাশ করেছে তাদের সংখ্যা যথাক্রমে ৩২৩৭০, ৫০২২ ও ২৬৯০, মোট ৪০০৮২ জন ।  ‘আলিম’ ও ‘ফাজিল’  পরীক্ষায় যারা পাশ করেছে  তাদের অধিকাংশই জনারণ্যে হারিয়ে যাবে ।  তাদের মধ্যে থেকে একজনও ন্যূনতম সম্মানজনক বেতন ও পদমর্যাদার চাকরি অর্জন করতে পারবে না । তাদের কিয়দংশ হবে আলেম, তারপর  মসজিদ মসজিদে এবং খারিজি মাদ্রাসায় অত্যন্ত সামান্য বেতনে চাকরি করবে এবং স্বভাবতই তাদের পক্ষে নিজেদের সন্তানদের উপযুক্তভাবে  প্রতিপালন করা সম্ভব হবে না । ফলে এখন অনেক আলেমকেই দেখা যাচ্ছে যে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের হাই মাদ্রাসা বা সিনিয়র মাদ্রাসার পরিবর্তে হাইস্কুলে পড়াচ্ছেন ।   
যারা মাদ্রাসা ফাইন্যাল পাশ করেছে তারাও প্রায় সকলেই কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবে । মাদ্রাসায় পড়ে অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়র, ডাক্তার, বিডিও-এসডিও-ডিম, এসডিপিও-এসপি, গবেষক-বিজ্ঞানি হয়েছে এমন  কথা শোনা যায়  না  । বাস্তবে যা ঘটে তা হলো,  মাদ্রাসার ফাইন্যাল পরীক্ষায় রাজ্যস্তরে সর্বোচ্চ মেধাতালিকায় যাদের নাম থাকে তারাও সচরাচর হারিয়ে যায় ।  কারণ, যারা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও অন্যান্য নামিদামি পর্ষদের অধীনে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বা সমতুল্য কোনো পরীক্ষায় পাশ করে তাদের সঙ্গে কোনো বিভাগেই প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হয় না । এমনকি মাদ্রাসায় পড়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা রাজ্যস্তরের  সেরা ছাত্রছাত্রী বলে বিবেচিত  তাদের মেধা ও জ্ঞানের তুলনায়  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জেলা স্তরের সেরা ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও জ্ঞান অনেক মাত্রায় বেশী । ফলে মাদ্রাসা ফাইন্যাল পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফলাফল করার পরেও ছেলেমেয়েরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় । তাদের মধ্যে অতি নগণ্য একটা অংশ  প্রাথিমক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরি পেয়ে থাকে, বড়ো জোর দু’ একটা হাই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারে ।  মুসলিম সমাজের যাঁরা অধ্যাপক, ইঙ্গিনিয়র, ডাক্তার এবং   ডাব্লুবিসিএস ও আইএস অফিসার হয়েছেন তাঁরা কেউ মাদ্রাসায় পড়েছেন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ।  
কেনো হাই মাদ্রাস ও সিনিয়র মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে যায় ও হারিয়ে যায় হারিয়ে যায় সে বিষয়টি জানতে ও বুঝতে হলে মাদ্রাসার সিলেবাসের উপর দৃষ্টিপাত করতে হবে ।  হাই মাদ্রাসার সিলেবাসে অনেকটা আধুনিকীকরণ  করা হলেও  পঠন-পাঠনের  পরিকাঠামো    পরিবেশের দিক থেকে মাদ্রাসাগুলি ব্যাপক পিছিয়ে রয়েছে থাকায় হাই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্নই থেকে যায় ।  চোখ রাখা যাক সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসে । পরিসরের স্বল্পতা হেতু এই নিবন্ধে পুরো সিলেবাস তুলে ধরা যাবে না । (এই সিলেবাসটি নিয়ে কিছুটা বিস্তৃত আলোচনা করা আছে আমার ‘হিযাবঃ নারী দাসত্বের প্রতীক’ বইয়ের একটা নিবন্ধে )  তাই এখানে উক্ত সিলেবাসটিকে খুব সংক্ষেপে রাখা হলো । সেটা এ রকমঃ
সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে পড়ে যে ডিগ্রীগুলো অর্জন করা যায় সেগুলী হলো এক). আলিম,  দুই). ফাজিল,  তিন). কামিল (স্নাতক সমতুল্য), এবং চার). এম.এম (স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সমতুল্য)  আগেই বলেছি যে আলিম হলো মাধ্যমিকের সমতুল্য মাধ্যমিকের মোট নম্বর যেখানে ৭০০ (সাতশো) সেখানে আলিমে মোট নম্বর ৯০০ (নয়শো) ৯০০ নম্বরের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার জন্যে বরাদ্দ ৫৫০ নম্বর,  আর ইসলামি শিক্ষার জন্যে বরাদ্দ ৩৫০ নম্বর   ভৌত বিজ্ঞান, জীবন বিজ্ঞান ভূগোলের জন্যে বরাদ্দ ৫০ নম্বর, অপরদিকে আরবি, হাদিস তফসির এর প্রত্যেকটির জন্যে ১০০ নম্বর এবং ফেকা  (ইসলামি আইন শাস্ত্র)এর জন্যে ৫০ নম্বর   ফাজিল উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য  কিন্তু সিলেবাসে তারতম্য মাধ্যমিক ও আলিমের মতোই । ফাজিলের সিলেবাসে  একাদশ ও দ্বাদশ  শ্রেণিতে ইংরাজী, বাংলা ও ইতিহাসে ১০০ নম্বর করে মোট ৩০০ নম্বর, এবং আরবি ভাষার জন্যে ১০০ নম্বর এবং হাদিস ও ফেকাহ-এর জন্যে ১০০ নম্বর । লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো ফাজিলের সিলেবাসে বিজ্ঞান বিভাগের ঠাঁই নেই এবং   কলা বিভাগেও ঠাঁই পায় নি  ভূগোল, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও । কামিল ও এম.এম – এর সিলেবাস নিয়ে এখানে আলচনা করার অবকাশ নেই, তবে কামিল ও এম.এমের সিলেবাস যে আরো পশ্চাদপদ তা বলা বাহুল্য ।  

সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলিতে পড়াশোনা করে মুসলিম ছেলেমেয়েদের এই যে পিছিয়ে যাওয়া ও হারিয়ে যাওয়া – এটা নতুন কোনো ঘটনা নয় ।  ভারতের স্বাধীনতার আগের ও পরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে  মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ভবিতব্য এটাই, তারা ধারাবাহিকভাবে পশ্চাদগামী হয়েই চলেছে    ধারাবাহিকভাবে পশ্চাদগামী হওয়ার এই ছবিটা যে কথা নীরবে ঘোষণা করছে তা হলো ,   মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা ও মাদ্রাসা বোর্ড মুসলিম সমাজের  যে বিপুল ক্ষতি করছে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয় । ছবিটা আরো  বলতে চাই  যে  মুসলিম সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও বিকাশের স্বার্থে অবিলম্বে  মাদ্রাসা  শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দেওয়া আবশ্যক । কিন্তু খুবই দুঃখজনক ঘটনা হলো এই যে এ দাবিটি মুখ ফুটে  বলার লোক মুসলিম সমাজে আজো  জন্ম নেয়  নি ।  অথচ মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে গেছে কবেই, সেই ১৮৩৭ সালেই যখন  ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি আরবি ও ফার্সির বদলে ইংরাজীকে সরকারি ভাষা ঘোষণা করে এবং সরকারি সমস্ত পদে ইংরাজি ভাষা জানা আবশ্যক করে ।  তখন থেকে মাদ্রাসাগুলির কাজ হয়ে দাঁড়ায় কেবল কট্টর মোল্লা-মুফতি উৎপাদন করা । তখনই মুসলিম সমাজের উচিত ছিলো মুসলিমদের কল্যাণের জন্যে আরব থেকে আমদানি করা আরবি ভাষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে পেছনে সরিয়ে দিয়ে ইংরাজি ও বিজ্ঞানসহ  আধুনিক  শিক্ষাকে  আবাহন করা । কিন্তু সেটা করার জন্যে যে উদারনৈতিক ভাবধারা ও দূরদুর্শিতা আবশ্যক ছিলো তা মুসলিম সমাজে কারো মধ্যে ছিলো না । ফলে মুসলিম সমাজ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ও ইংরেজদের  ইসলাম-বিদ্বেষী তকমা দিয়ে এবং ইংরাজি ভাষাকে কাফেরদের ভাষা  জ্ঞানে আধুনিক শিক্ষার স্পর্শ এড়িয়ে গিয়ে  মাদ্রাসা শিক্ষার লেজ ধরে জীবন সমুদ্রে ক্রমশঃ ডুবতে থাকলো । হিন্দু সমাজ কিন্তু মুসলমানদের মতো অর্বাচীন ছিলো না কখনই । মুসলিম শাসনে  ধর্মীয় গোঁড়ামি হিন্দুদের সংস্কৃত ভাষায় আটকে রাখতে পারে নি, তারা তার বদলে আরবি ও ফার্সি ভাষা শিখে সরকারি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিমদের পিছনে ফেলে অনেক বেশী এগিয়ে গিয়েছিলো  । ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি যখনই ইংরাজীকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করে, তখনই তারা আরবি- ফার্সি ভাষা ত্যাগ করে ইংরাজী ভাষা    আধুনিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে ।  ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি হিন্দু নেতাদের তুষ্ট করতে যখন ১৮২৩ সালে কলকাতায় দ্বিতীয় একটি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়,  তখনই তৎক্ষণাৎ রাজা রাম মোহন রায় তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গভর্নরকে চিঠি পাঠান । সেই চিঠিতে তিনি দাবি করেন যে, ভারতীয়দের জন্যে ধর্মীয় শিক্ষা নয়, চাই ইংরাজিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধুনিক শিক্ষা । ভাবতে অবাক লাগে, তার চেয়ে বেশী লজ্জা লাগে, রাজা রাম মোহন প্রায় দু’শো বছর আগে যে দাবি সোচ্চারে জানিয়েছিলেন, মুসলিম সমাজ আজো  সে দাবি  উচ্চারণ করার যোগ্যতা ও সাহস অর্জন করতে  ব্যর্থ থেকেই গেছে । হয় তো আধুনিক শিক্ষার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই, কিন্তু আর ‘মাদ্রাসা শিক্ষা’ নয় এ কথা সোচ্চারে বলার স্পর্ধা আজো হলো না  মুসলিম সমাজের কোনো বুদ্ধিজীবী-বিদ্বজনের । মুসলি সমাজের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে  এই তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনরা  ক্ষমা পাবেন বলে মনে হয় না ।
নিবন্ধটি শেষ করার পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আর একটি কথা অন্ততঃ স্পর্শ করে যাওয়া আবশ্যক মনে হয় ।   তা হলো, নিবন্ধটি পড়ে মনে হবে যে মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু মুসলমানদেরই সর্বনাশ করছে । এটা আংশিক সত্য । সম্পূর্ণ সত্যিটা হলো যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা গোটা দেশের পক্ষে ও গোটা বিশ্বের পক্ষেই সর্বনাশা । জিহাদের শিক্ষা তথা মুসলিম সন্ত্রাসবাদের শিক্ষা এবং সর্বোপরি প্যান  ইসলামের পাঠ এবং তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মাদ্রাসাতেই । এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে চোখ রাখলেই তা টের পাওয়া যায় । যদিও এ কথা ঠিক যে ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয় । কারণ, ভারতে সেরূপ মাদ্রাসা স্থাপন করার অনুকূল  পরিস্থিতি  নেই । কিন্তু এ কথাও ঠিক নয় যে এ দেশে  সকল  মাদ্রাসাই সন্দেহের ঊর্ধে । বর্ধমানের খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সেটা দেখিয়ে দিয়ে গেছে । মূল কথা হলো, যেটা আমরা কখনোই অস্বীকার বা উপেক্ষা করতে পারি না যে,  মাদ্রাসা থাকলে সেটা জিহাদের আঁতুড় ঘর তৈরী হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায় ।

Sunday, May 10, 2015

একজন লেখকের জীবন ও চাকরি বিপন্ন অথচ বাংলার বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনরা নির্বাক দর্শক – ছিঃ !


গার্ডেনরিচের তালপুকুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আক্তারের উপর গত ২৬ শে মার্চ  মুসলিম মৌলবাদীরা ঝাঁপিয়ে পড়িয়েছিলো পুলিশের উপস্থিতিতেই । উদ্দেশ্য ছিলো তাঁকে হত্যা করা ।  কোনোক্রমে তিনি বেঁচে গিয়েছেন সে যাত্রা ।   সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও আবার যে কোনো মুহূর্তে তিনি আক্রান্ত হয়ে   মৃত্যুর কোলে ঢোলে  পড়তে   পারেন  ঐ ধর্মান্ধ মুসলিম দুষ্কৃতিরা এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাঁকে পেলেই হত্যা করবে বলে আস্ফালন করছে । আক্তারের অপরাধ কী ? তিনি ইসলামের অবমাননা করেছেন । মুসলিম সমাজের ধর্মীয়  নেতারা তাই তাঁকে মোরতাদ ঘোষণা করেছে । ইসলামে মোরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । ঐ ধর্মগুরুরা তাই সেদিন ধর্মান্ধ মুসলমানদের নিয়ে গিয়ে তাঁর উপর  ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো  মোরতাদদের  শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্যে । কিন্তু যেহেতু সেদিন তারা পুরোপুরি সফল হয় নি, তাই তারা আক্তারকে হত্যা করার জন্যে এখনও ওৎ পেতে রয়েছে ।   
কাজী মাসুম আক্তার  জানিয়েছেন যে ঘটনার সময়  পুলিশ তাঁকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করে নি এবং আক্রমণকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করে নি । ধর্মান্ধ মোল্লা-মুফতিরা এখনো প্রকাশ্যে  তাঁকে হত্যা করবে বলে আস্ফালন করছে  সে কথা  পুলিশকে  জানানো  সত্ত্বেও  পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছে, কাউকে গ্রেপ্তার করার তৎপরতা দেখায় নি   আক্তার আরো জানিয়েছেন যে তিনি মাদ্রাসায় কাজে যোগদান করতে  চান  এবং তার জন্যে   পুলিশের সাহায্যও  চেয়েছেন । কিন্তু   পুলিশ  সাফ জানিয়ে দিয়েছে  যে তাঁর নিরাপত্তা দিতে পারবে না ।  ফলে আক্তার এখন গৃহবন্দি এবং  তাঁর জীবন ও চাকরি দুটোই বিপন্ন ।
ধর্মগুরুদের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে আক্তার বলেছেন যে তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান,  তাঁর বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ অবান্তর ও ভিত্তিহীন । হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে আক্তার কখনই কোনো লেখায় ইসলামের সমালোচনা করেন  নি ।  তিনি সোচ্চার উলামা তথা ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে ।  তাঁর বক্তব্য হলো যে কোরানের অপবাখ্যা করে  মোল্লা-মুফতিরা ইসলামকে কলুষিত এবং  মুসলিমদের বিভ্রান্ত ও বিপদগামী করছে । তাঁর অভিমত হলো যে, বিয়ে, তালাক, শিক্ষা, নারীর অধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে মোল্লা-মুফতিরা যা বলছেন তা ইসলামের  নীতি নয় । কারবালা নিয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এবং ধর্মগুরুদের বর্ণিত ইতিহাসকেও তিনি  সম্পূর্ণ সঠিক নয়  বলে  একটি পুস্তিকায় দাবি করেছেন । তিনি বলেছেন কারবালা যুদ্ধের পেছনে   মূল কারণ ছিলো ক্ষমতার দ্বন্দ । সে কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন যে, তৃতীয় খলিফা ওসমান গণিকে যে বিদ্রোহীরা হত্যা করেছিলো তাদের পেছনে মুহাম্মদের জামাই আলির মদত ও প্রশ্রয় ছিলো । ওসমান যখন খলিফা হন তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দী ও প্রতিপক্ষ ছিলো আলি । আলি তাই ওসমানকে খলিফা হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি এবং যে কোনো মূল্যে ওসমানকে সরিয়ে তিনি খলিফার সিংহাসনটি দখল করতে  চেয়েছিলেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ওসমান নিহত হলে আলিই চতুর্থ খলিফা হয়েছিলেন ।  
এ কথা ঠিক যে আক্তার মুসলিম সমাজের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে কথা বলছেন যা নিঃসন্দেহে  অভিনন্দন যোগ্য তিন চান মুসলিমদের আধুনিক শিক্ষার সামনে  মাদ্রাসা শিক্ষার যে  অচলায়তনটি রয়েছে তাকে ভাঙতে । নারীরা  হিজাব ও গৃহকোণ ছেড়ে বেড়িয়ে আসুক এবং আধুনিক শিক্ষা অর্জন করে স্বনির্ভর হোক । নারী  পতি ও পরিবারের সেবা না করে দেশ ও সমাজের কাজে ব্রতী হোক । বাল্যবিবাহ,  বহুবিবাহ ও একপেশে তালাকের অভিশাপ  থেকে মুসলিম সমাজ  মুক্তি অর্জন করুক এটা সংশয়াতীত যে শরিয়তী আইন ও সংস্কৃতি  সভ্য সমাজের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত  । সুতরাং কাজী মাসুম আক্তার মুসলিম সমাজে যে  সংস্কারের কথা বলছেন তার বিকল্প নেই এবং  যথাযথ সংস্কারের  না হওয়ায়  এবং  শরিয়তী আইন-কানুন ও অনুশাসনে আটকে থাকার জন্যেই মুসলিম সমাজ ক্রমশঃ  পিছিয়ে পড়ছে ।   আক্তারের মতো উদারনৈতিক প্রগতিশীল মুসলিমরা অনেকেই তাই দীর্ঘদিন থেকেই মুসলিম সমাজে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করছেন । কিন্তু তাঁদের  দাবি হলো যে তাঁরা যা করছেন তার সঙ্গে  ইসলামের বিরোধ নেই এবং   ইসলাম সম্মত পথেই মুসলিম সমাজের  সংস্কার চাইছেন   সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে  ইসলাম কোনো অন্তরায় সৃষ্টি  করে নি, বরং যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে  মুসলিম সমাজকে যুগোপযোগী করার কথা ইসলাম বারবার বলেছে    অপরদিকে উলামা [আলেমগণ] বলছেন যে আকতাররা যা বলছেন তা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী ।  তাঁরা  মুনাফেক,  নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করলেও আসলে তাঁরা  ইসলাম ও  মুসলমানদের শত্রু ।  মুসলমান সেজে ইসলামকে হত্যা করতে চায়ছেআধুনিক শিক্ষা এবং  নারীশিক্ষা ও নারীর অধিকারের নামে  মুসলিম সমাজকে  বিপথগামী করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য এখন প্রশ্ন হল, কারা সঠিক বলছেন ? আক্তার, না উলামা ?
প্রগতিশীল বা আধুনিকমনা মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ মুসলিম সমাজে সংস্কারের যে দাবি তুলেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংশনীয় । কিন্তু তারজন্যে ইসলামের দোহায় পাড়তে হবে কেনো ? আমিও  দশ বছর ধরে এই সমাজের  আমূল  সংস্কারের দাবিতে  নিরলসভাবে  লিখে যাচ্ছি ও সভা সমিতিতে বলে যাচ্ছি, আমার তো ইসলামের দোহায় লাগে না কিন্তু মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের প্রয়াসের প্রতি   শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই যে  মুসলিম সমাজে সংস্কার সম্পূর্ণ ইসলাম সম্মত বলে যা দাবি করছেন তা   যথার্থ  নয় । এটাই নির্মম সত্য যে  ইসলাম  কোনোরূপ সংস্কার অনুমোদন করে না । এ প্রসঙ্গে কোরান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে,    আল্লাহর ওহির [আয়াতের]  একটি অক্ষরও পরিবর্তন করা যাবে না ।  ইয়ুনুস সুরায় কোরান বলছে, “এবং যখন আমার [আল্লাহর] উজ্জ্বল প্রবচন সকল তাহাদের নিকট পঠিত হয় তখন যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না তাহার বলে, ইহা ব্যতীত অন্য কোরান উপস্থিত কর, তুমি বলিও হে মুহাম্মদ, আমার ক্ষমতা নাই যে নিজের পক্ষ হইতে পরিবর্তন করি, আমার প্রতি যাহা প্রত্যাদেশ হয় তদ্ভিন্ন আমি অনুসরণ করি না, নিশ্চয় আমি প্রতিপালকের বিরুদ্ধাচারণ করিতে মহাদিনের শাস্তিকে ভয় করি ।” [১০/১৫]  কোরানের গুরুত্ব সম্পর্কে   আরো বেশ কয়েকটি  আয়াত বা ওহি  [প্রত্যাদেশ বলে যা দাবি করা হয়] আছে যেগুলির কয়েকটি  উল্লেখ করা এক্ষেত্রে খুবই  প্রাসঙ্গিক হবে  আয়াতগুলি  হলো – “আমি সত্যসহ কোরান অবতীর্ণ করেছি এবং সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে ।” [১৭/১০৫]  “ ... এ কুরআন মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলিল এবং নিশ্চিত  বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ ।” [৪৫/২০]   “ ... পরম করুণাময় আল্লাহ, তিনিই কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন ।” [৫৫/১,২]    এই আয়াতগুলি থেকে দুটো কথা অত্যন্ত স্পষ্ট – এক]. কোরানের পথনির্দেশকেই  মুসলমানদের  শিরোধার্য করতে হবে,  এবং দুই]. কোরানের বিধি-নিষেধে  কোনোরূপ সংশোধনা বা পরিবর্তন করা চলবে না ।
অবিশ্বাস্য হলেও এ কথাই সত্যি যে ইসলাম কখনই আধুনিক শিক্ষা অনুমোদন করে না । কারণ আধুনিক শিক্ষা কোরান ও হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক । বিজ্ঞান পৃথিবীর গতি, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, ঝড়-বৃষ্টি, দিন-রাত, আকাশ, পাহাড়-পর্বত, খরা-বন্যা-ভূমিকম্প ইত্যাদি সম্পর্কে যা যা বলে কোরান হাদিসের তা বিপরীত     বিজ্ঞানকে মানলে কোরান ও হাদিস তথা আল্লাহ ও তার নবিকে অমান্য করতে হয় ।  সুতরাং আধুনিক শিক্ষা ইসলামে নিষিদ্ধ । ইসলাম নারীর অধিকার ও নারীশিক্ষাও অনুমোদন করে না ।  ইসলাম বলে  নারী অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারবে না, তারা গৃহকোণে অবস্থান করবে, ঘরের বাইরে বের হতে হলে তাদের হিজাব পরতে হবে ।  এ প্রসঙ্গে কোরান কী বলেছে তা শোনা যাক । “তোমাদের বাড়িতে তোমরা অবস্থান করবে, প্রাক ইসলাম যুগের মতো সাজসজ্জা করে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়িও না ।”  [৩৩/৩৩]   “ ... বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বলো তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ  মুখের উপর টেনে দেয় ।” [৩৩/৫৯]   এ রকম আরো বহু নারীবিরোধী আদেশ রয়েছে কোরানে । অসংখ্য হাদিসও [হাদিস মানে মুহাম্মদের উক্তি] আছে যেখানে নারীকে অপমান, হেয়, ছোট ও পুরুষের অধীন করা হয়েছে । মুহাম্মদ নারীদের প্রসঙ্গে যে সব মুক্তামাণিক্য  ঝরিয়েছেন তার কয়েকটি নমুনা এরকমঃ  “আমি যদি কাউকে সেজদা করতে বলতাম তবে স্ত্রীদের বলতাম তাদের  স্বামীকে সেজদা করতে ।” [তিরমিযি]  [সেজদা মানে পদতলে মাথা নত করা ]      “আমি আমার অনুপস্থিতিতে পুরুষের  জন্যে মেয়েদের  চেয়ে অধিকতর ফিতনা ক্ষতিকর কিছু রেখে যায় নি ( বোখারি মুসলিম )   “চারটি জিনিষ  দুর্ভাগ্য বয়ে আনে – মন্দ স্ত্রী, মন্দ প্রতিবেশী, খারাপ বাহন ও অপ্রশস্ত ঘর ।” (মুসলিম )  বিশেষঃ কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব যদি স্ত্রীলোকদের হাতে সোপর্দ করা হয়, তখন ভূপৃষ্ঠের উপর জীবন ধারণ করার চাইতে কবরের জীবন তোমাদের জন্যে উত্তম মনে হবে ” [তিরমিযি]   এই উদ্ধৃতিগুলি থেকে এটা স্পষ্ট যে নারীর অধিকার ও শিক্ষা ইসলাম অনুমোদন করে না । ইসলাম ধর্মের প্রধান দুটি স্তম্ভ হলো কোরান ও হাদিস । এই দুটি গ্রন্থের বিরুদ্ধাচারণ করা মানেই ইসলামের অবমাননা করা ।  সুতরাং মাদ্রাসা শিক্ষার বদলে আধুনিক শিক্ষার প্রবর্তন করতে চাওয়া এবং নারীকে গৃহ ও হিজাব থেকে মুক্তি দিয়ে আধুনিক শিক্ষার অঙ্গনে নিয়ে এসে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর করে তুলতে  চাওয়া যে ইসলামের অবমাননা করা তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই  তাই আক্তার যখন বলেন যে তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবং তাঁর বিরুদ্ধে ইসলামের অবমাননার প্রশ্ন অবান্তর  তখন সে কথা আলেমগণ ধর্তব্যের মধ্যে না এনে তাঁকে মোরতাদ ঘোষণা করেছেন ।  আর মোরতাদের যে শাস্তি [মৃত্যুদণ্ড] সেটা কার্যকর করার জন্যে তাঁর উপর হামলা চালিয়েছেন   আক্তার কারবালা পুস্তিকায় আলি সম্পর্কে যা বলেছেন [সত্যি কথাই বলেছেন] তাতেও ইসলামের অবমাননা হয়েছে । কারণ, আল্লাহ ও নবির চোখে আলি একজন  নিষ্পাপ ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ব্যক্তি যাঁর স্থান ঠিক মুহাম্মদের পরেই ।

কারা মোরতাদ ?  যারা ইসলাম গ্রহণ করার পর  ইসলাম ত্যাগ করে  তারা     আর যারা কোরান ও হাদিসে সম্পূর্ণ আস্থা রাখে না, এবং কোরান ও হাদিসের আইন তথা শরিয়ত আইনের সংশোধন ও পরিবর্তন করে তার চেয়ে ভালো আইন প্রবর্তন করতে চায় তারা মুনাফেক ।  কোরান বলেছে মুনাফেকরা ইসলামের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, তাদেরকে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে । কোরানের বাকারা সুরার ৮, ৯ ও ১১ নং আয়াতে এই কথাগুলি বলা হয়েছে । তাই আক্তার  ইসলামের শত্রু এবং তাঁদের কঠোরতম শাস্তি দিতে আলেমরা তৎপর ও মরিয়া  হয়ে উঠেছে । আক্তারকে হত্যা করার ফতোয়া ও  হত্যা করার বিধান ইসলামে রয়েছে  । গোঁড়া ধর্মীয় নেতারা  দশ বছর আগে দক্ষণ ২৪ পরগণার আক্রা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক মোরসালিন মোল্লাকেও  মোরতাদ ঘোষণা করে তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলো, আগুন লাগিয়ে তাঁকে  হত্যা করতে চেয়েছিলো । তিনি যে পত্রিকায় লিখেছিলেন তাঁর সম্পাদকও একজন মুসলিম সমাজের মানুষ [তাঁর নাম বোধ হয় মহম্মদ আলি] । তাঁকেও  মোরতাদ ঘোষণা করে তাঁর বাড়িতেও হামলা করে অগ্নি সংযোগ করেছিলো ।  পরে তাঁরা উভয়েই  ওই ধর্মীয় নেতাদের  কাছে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে এবং ভবিষ্যতে এ রকম কথা আর লিখবেন না বলে মুচলেকা লিখে দিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন । এ রকম ঘটনার দৃষ্টান্ত  এ রাজ্যে আরো অনেক আছে ।  মুসলিম দেশগুলিতে অবস্থা তো আরো ভয়ঙ্কর । বাংলাদেশে তসলিমা নাসরিনকে কতল [হত্যা] করার ফতোয়া দিয়েছিলো  এবং তাঁকে হত্যা করার জন্যে আলেমদের নেতৃত্বে হাজার হাজার ধর্মান্ধ মুসলমান রাস্তায়ও নেমেছিল আত্মরক্ষার জন্যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত ১৯৯৪ সালে  দেশ ছাড়তে হয়েছিলো । বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, ইরান প্রভৃতি মুসলিম দেশ থেকে এ রকম অসংখ্য মুক্তচিন্তার খ্যাতিমান লেখকদের  স্বদেশ ত্যাগ করে পশ্চিমের দেশগুলিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে  যাঁরা দেশের মধ্যে থেকে আধুনিক ও সভ্য মানব সমাজ নির্মাণের পক্ষে কলম ধরেছেন মুসলিম মৌলবাদীরা তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করে চলেছে সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিত  ও ওয়য়াশিকুরকে হত্যা করেছে । তার কিছুদিন আগে আর একজন মুক্তমনা ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করেছিলো ।  ধর্মান্ধ ঘাতক বাহিনী  সে দেশেরই প্রখ্যাত মুক্তমনা লেখক ও সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদকে এমনভাবে আঘাত করেছিলো যে আঘাতেই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্য হয়েছিলো ।   কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সলমান তাসির এবং মন্ত্রীসভার সংখ্যালঘু দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত  মন্ত্রীকে [যিনি ছিলেন একজন খৃষ্টান]  তারা গুলি করে হত্যা করেছিলো । তাঁদের অপরাধ তাঁরা ব্লাসফেমি আইনে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত একজন নির্দোষ মহিলাকে মুক্তি দেওয়ার দাবিসহ  ব্লাসফেমি আইন সংশোধনের দাবি তুলেছিলেন ।  কয়েক দিন আগে, গত ২৪শে এপ্রিল,  মুক্তমনা মানবাধিকার কর্মী ও  নারী ব্যক্তিত্ব সাবিন মাহমুদকে মুসলিম মৌলবাদীরা হত্যা করেছে  এই হত্যার পেছনে পাক সরকারের সামরিক বাহিনীরও হাত আছে বলে  সন্দেহ করা হচ্ছে । কারণ, সাবিন সামরিকি বাহিনীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন । শুধু নিজে সোচ্চার ছিলেন না, সমমনোভাবাপন্ন মানুষদের জড়ো করে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং পাক সরকারের দমনপীড়ন নীতির বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যে ‘দ্য সেকেণ্ড ফ্লোর’ নামে তিনি একটি কাফে তৈরী করেছিলেন যেটা ‘টি-টু-এফ’ নামে ইতিমধ্যেই প্রচুর  খ্যাতিলাভ করেছিল  পাক সরকারের সীমাহীন  বঞ্চনার বিরুদ্ধে  বালুচিস্তানের মানুষ যে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা গৃহযুদ্ধের চেহারা নিয়েছে । সেই আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে  দমন করতে গিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে সামরিক বাহিনী হত্যা করেছে না হয়ে জেলে পুড়েছে সাবিন এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এটা তাঁর অপরাধ ছিলো যার জন্যে তাঁকে হত্যা করলো সামরিক বাহিনী ও মুসলিম মৌলবাদীরা    গোটা বিশ্বের দিকে চোখ রাখলে এই ছবিটাই আমরা দেখতে পাই যে   মুসলিম দেশে এবং  অমুসলিম দেশের মুসলিম সমাজে মুক্তচিন্তার মানুষের ঠাঁই নেই । তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, না হয় দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে  প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মুসলিম মৌলবাদিদের সে দেশের মুক্তমনা মানুষদের উপর অবাধে লাগাতার এই আক্রমণের ঘটনা উৎসাহিত করছে এ দেশের মুসলিম মৌলবাদীদের । ফলে এ দেশেও, বিশেষ করে এ রাজ্যে আমাদের মতো মুক্তচিন্তার মানুষদের উপর আক্রমণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে । সলমান রুশদিকে কলকাতায় আসতে বাধা দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে । তসলিমাকে কলকাতা থেকে বিতাড়ন করার জন্যে কলকাতাকে অবরুদ্ধে করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে । ওয়াইসি ভাইরা প্রকাশ্যেই এ কথা বলার দুঃসাহস দেখাতে পারে যে,  জার্মানে শার্লু এবদুর সাংবাদিকদের যারা হত্যা করেছে তারা সঠিক কাজই করেছে, তাদের আমি মোটা টাকা দিয়ে পুরস্কৃত  করতে চাই ।
মুক্তচিন্তার মানুষদের উপর কেনো এতো আক্রোশ ? সে কি কেবলই আলেমদের দোষ ? বলা হয় আলেমরা কোরান ও ইসলামকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়ে এ সব হিংসাত্মক ফতোয়া দিচ্ছে ও কর্মকাণ্ড করছে । যারা এ সব বলে তারা হয় ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ,  না হয় ভণ্ড । ইসলাম এমন একটা ধর্ম যেখানে ভিন্ন মত ও বহুত্ববাদের  স্থান নেই । ইসলাম গণতন্ত্র ও  ধর্মনিরপেক্ষাতায়  বিশ্বাস করে না । ইসলাম সমালোচনা ও বিরুদ্ধ মত সহ্য করে না । ইসলামে সহনশিলতার  কোনো স্থান নেই এবং  ইসলামের মতো অসহিষ্ণু  ধর্ম আর একটিও নেই । বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ইসলাম চরম  শত্রুভাবাপন্ন  । অনেক আয়াত আছে কোরানে যেখানে বিধর্মীদের সরাসরি আক্রমণ করতে বলেছে, আঘাত করতে ও হত্যা করতে বলেছে । বিধর্মীদের সম্পর্কে কোরান  যেভাবে বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হিংসা প্রচার করেছে তা নিজের চোখে না দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হবে ।  অন্য নিবন্ধে ও বইয়ে কোরানের এই আয়াতগুলি সবিস্তারে আলোচনা করেছি । ইসলামের প্রবক্তা স্বয়ং মুহাম্মদ নিজেও ছিলেন চরম  অসহিষ্ণু ।  তিনি সামান্যতম বিরোধিতা ও সমালোচনা সহ্য করতেন না । মুহাম্মদ নিজে কেমন অসহিষ্ণু ছিলেন এবং তাঁর সমালোচনা ও বিরোধিতা করার জন্যে তাদের সঙ্গে কী আচরণ করেছিলেন তার দু-একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক ।  মদিনায় যাওয়ার মাত্র দু’বছর পর মুহাম্মদ দু’জন ইহুদি কবিকে হত্যা করেছিলেন যাঁদের মধ্যে একজন মহিলা কবিও ছিলেন । তাঁদের নাম আসমা বিনত মারওয়ান এবং আবু আফাক । সে সময়েই বদর যুদ্ধে কোরেশদের পরাস্ত করে ৭০ জন কোরেশকে বন্দি করেছিলো  মুহাম্মদের সৈন্যবাহিনী  মুহাম্মদ তাদের মধ্যে ৬৮ জনকে মোটা টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন,  কিন্তু দু’জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন  যাদের নাম ছিলো আল নদর ইবন হারিস এবং উকবা বিন আবু মুয়াত ।  সেই কবি ও কোরেশদের একমাত্র  অপরাধ  ছিলো যে তাঁরা মুহাম্মদ ও ইসলামের সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছিলেন । সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে মুহাম্মদের শিষ্য ও অনুগামীরাও যে  ইসলাম ও মুহাম্মদের সমালোচনা ও বিরোধিতায় অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে এবং  হিংস্র  আচরণ করবে ।
এবার ফিরে আসা যাক কাজী মাসু আক্তারের উপর আক্রমণের ঘটনায় । আক্তারের উপর যে হামলা করা হয়েছে তা  ইসলামের বিধি মতে ঠিকই হয়েছে । গোঁড়া ধর্মীয় নেতারা ও ধর্মান্ধ মুসলিমরা তাদের যা করণীয় ঠিক তাই করেছে ।  কিন্তু সরকার ও পুলিশ যারা সবিধানের রক্ষক তারা কী করলো ?   তারা কেনো মুসলিম দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না । প্রত্যেকটি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন । তিনি কেন আক্তারকে তাঁর জীবন ও চাকরির   নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন  না ?    তিনি  যেনো ভারতীয় সংবিধানকে স্থগিত রেখে  শরিয়তি সংবিধানের  পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করছেন ।  অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও নিশ্চুপ । এমনকি হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল বিজেপিও । সরকার ও বিরোধী দলগুলোর এই ন্যক্কারজনক ভূমিকা আমাকে ক্ষব্ধ করলেও লজ্জিত করে না । কারণ, তারা সবাই ক্ষমতার দাস ও  ভোটের  কাঙাল । পাছে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নষ্ট হয়  এই ভয়ে সর্বদা  মোল্লা-মুফতি-পীর-পয়গম্বরদের পদতলে হাঁটু গেড়ে তাদের তোয়াজ করতে ব্যস্ত । আমাকে লজ্জিত করে বাংলার, বিশেষ করে কলকাতার বুদ্ধিজীবী, বিদ্বজন এবং শিল্পী ও কলাকুশলীদের নীরবতা   তারা কেনো আক্তারের উপর কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করবেন না ? সরকার ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা করবেন না ?  আক্তারের জীবন ও  চাকরির নিরাপত্তার জন্যে সরব হবেন না ? কেনো তাঁরা আক্রান্ত ও অসহায় একজন লেখক ও প্রধান শিক্ষকের পাশে দাঁড়াবেন না ?  চোখের সামনে ধর্মান্ধ মুসলমানরা একের পর এক হামলা করছে, সন্ত্রাস করছে, মানুষ হত্যা করছে, তবু তাঁরা কোনো প্রতিবাদ করছেন না, পুতুলবৎ নীরবের দর্শকের ভুমিকা পালন করছেনতাঁদের এই নীরবতা   ধর্মান্ধ মুসলমানদের  আরো বেপরোয়া করে তুলতে সাহায্য করছে । তাঁদের কি কোনো সামাজিক কর্তব্যই থাকতে নেই ? এও  তো এক প্রকার  কাপুরুষতা । কাপুরুষতা গ্রাস করেছে গোটা বাংলাকে, গোটা কলকাতাকে । ধিক বাংলা ! ধিক কলকাতা ! 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...