Tuesday, December 2, 2014

ইসলাম ধর্মে ক্ষমা ?



‘ক্ষমা’ মাত্র দুটি অক্ষরের শব্দ । কিন্তু এর গভীরতা, বিস্তার,  ও বিরাটত্বের যেনো কোনো সীমা নেই । গভীরতার নিরিখে মনে হয় যেনো এক বিশাল সাগর, বিস্তারে মনে হয় যেনো সীমাহীন আকাশ এবং বিরাটত্বের বিচারে একমাত্র তুলনীয় হতে পারে যেনো হিমালয় । ‘ক্ষমা’ নিয়ে কাব্য  বা সাহিত্য রচনার বাসনা বা ধৃষ্টতা কোনোটাই আমার নেই । নেই, কারণ সে সাধ্য আমার নেই । ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে এটুকুই শুধু বলতে চাই এটা মানবের এমন একটা মহা বা মহৎ গুণ যার তুলনা হয় না এবং যার সঙ্গে কিছুরই তুলনা করা চলে না, তুলনা টানা যায় না । ‘ক্ষমা’কে বোধ করি শুধু ক্ষমা শব্দ দিয়ে বিশেষ কিছুই বোঝা যায় না । আসলে এটা ঠিক সাধারণভাবে বোঝার বিষয় যতটা তার চেয়ে অনেক বেশী উপলব্ধির বিষয় ।  যথার্থভাবে ‘ক্ষমা’কে উপলব্ধি করতে হলে মানবের অন্যান্য গুণবাচক বা দোষবাচক শব্দগুলিকে ওর আশে-পাশে কিংবা অগ্রে-পশ্চাতে স্থাপন করা আবশ্যক । সততা, সহনশীলতা, ভালোবাসা, ক্ষোভ, ক্রোধ, ঘৃণা, প্রতারণা প্রভৃতি দোষগুণগুলির মাঝে ‘ক্ষমা’কে স্থাপন করলে এই শব্দটি সম্পর্কে অনেকটা  স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হতে পারে । তবুও তাতেই যে ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে সম্যক ও সম্পূর্ণ ধারণা বা উপলব্ধি পাওয়া যাবেই এমনটাও বোধ করি খুব জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয় । ‘ক্ষমা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও সম্পৃক্ততা রয়েছে আরো কয়েকটি মানবিক গুণের, যেমন মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, নিঃস্বার্থপরতা, উদারতা, দয়া, মায়া, মমতা, স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ প্রভৃতি । যে কোনো ‘ভালো’ গুণই অর্জন করতে হয়, অর্থ ও ধন-সম্পত্তির মতে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায় না । আর ‘ক্ষমা’ এমন একটি মহৎ গুণ যা সহজে, স্বচ্ছন্দে ও অনায়াসে অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব । এটাকে অর্জন করতে হলে একই সঙ্গে অনেকগুলি  শুভ গুণ অর্জন ও অনেকগুলি  দোষ-ত্রুটি বর্জন করা অপরিহার্য । ক্ষুদ্র হোক কিংবা ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্রই হোক, কোনোরূপ স্বার্থসিদ্ধির বাসনা যার মধ্যে আছে তার দ্বার ক্ষমার নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব । অসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসার সঙ্গে আর যারই সহাবস্থান সম্ভব হোক না কেনো, ক্ষমার সঙ্গে কোনো মতেই সম্ভব নয় । ক্ষমা শুধু শ্বাসকার্য সম্পাদন করতে পারে প্রেম, ভালোবাসা, উদারতা, সহিষ্ণুতা ও ত্যাগের পরিবেশে । ‘ক্ষমা’র তো চরম আড়ি হিংসার সঙ্গে । হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ ও ঘৃণার পরিবেশ তো ‘ক্ষমা’র জন্যে সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী ।
‘ক্ষমা’ নিয়ে সকলেই এতো টানাটানি করে এবং এর ওপর ‘স্বত্ব’  আরোপ  করে যে মনে হয় যেনো এই সময়ের মানব সমাজটা যেনো শুধুই ক্ষমাময়, আর সর্বত্রই যেনো ক্ষমার ছড়াছড়ি, হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণা-ক্রোধ-লোভ-লালসা যেনো মানব সংসার থেকে চির বিদায় নিয়ে বনবাসে চলে গেছে । কিন্তু বাস্তবটা  ঠিক এর বিপরীত । সেজন্যেই ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে একটু দীর্ঘ ভুমিকার অবতারণা করতে হলো । যাঁদের অন্তরে অনুবীক্ষণ যন্ত্র সহযোগেও ক্ষমার সন্ধান পাওয়া  দুষ্কর তাঁরাও অবলীলায় মানুষকে ক্ষমা করার  উপদেশ প্রদান করে থাকেন ।  যাঁরা প্রতি পদক্ষেপে বিদ্বেষ ও ঘৃণার বীজ বপন করেন তাঁরাও দাবী করেন, ‘ক্ষমা আমাদের পরম ধর্ম’ ।  যাঁরা উচ্চিকিত কণ্ঠে হত্যাকারীকে ‘আমাদের সম্পদ’,  ‘আমাদের গর্ব’ বলে তাদের মাথায় ‘বীর যোদ্ধা’র শিরোপা প্রদান করে তাঁরাও নির্দ্বিধায় নীতিবাক্য শোনান – ‘হত্যা করা মহাপাপ’, ‘ক্ষমা পরম ধর্ম’ ইত্যাদি । এভাবেই অবিরাম বেপরোয়াভাবে ‘ক্ষমা’ শব্দটি মানুষের মুখে মুখে ঘোরে । ফলে ‘ক্ষমা’ শব্দটি এখন অতি ব্যবহারে এবং অবশ্যই অপব্যবহারে বড়ো বিবর্ণ ও ক্লীশেফলে ‘ক্ষমা’র মহত্ত্ব পুনরুদ্ধারের জন্যে নিবন্ধের প্রারম্ভে ‘ক্ষমা’ নিয়ে একটু বিশদে আলোচনায় যেতে হলো ।
আমরা প্রায়শঃই লক্ষ্য করি যে  যাঁদের মুখে ‘ক্ষমা’ কথাটি একেবারেই অশোভনীয় মনে হয় তাঁরা    এমন ভাণ করে যেনো ‘ক্ষমা’র উপর একমাত্র তাঁদেরই অধিকার রয়েছে । এই ‘তাঁরা’ হলেন প্রধানতঃ ধর্মগুরু, ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দযে ধর্মের গোঁড়ামি রাজা রামমোহনকে ত্যাজ্য পুত্র করেছিলো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে  তৎকালীন হিন্দু সমাজ  সমাজত্যুত করেছিলো, কবি মধূসুদনকে বুকে টেনে নিতে পারে নি, অসংখ্য বিধবাকে মৃত পতির চিতায় পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো, ভগবানের মন্দিরে শূদ্রদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, বিধবা বিবাহ আইন হওয়া সত্ত্বেও আজো যে ‘ধর্ম’ বিধবাকে পুনর্বিবাহের অযোগ্য বলে অসম্মান ও অপমান করে, ভগবানের নামে লক্ষ লক্ষ পশু বলি দেয় এবং জাত-পাত, বর্ণভেদ ও অস্পৃশ্যতাকে  বৈধতা  দিয়েছে সেই হিন্দু ধর্মের ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রচারকগণও কতো অবলীলায় প্রচারণা চালায় যে হিন্দু ধর্ম সর্ব্বংসহা, হিন্দু ধর্ম ক্ষমার ধর্ম, ভগবান পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল ইত্যাদি । এ একই রকম  চোরের মায়ের বড়ো গলা’র মতো গলাবাজি  শোনা যায় অন্য সকল ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রচারকদের কণ্ঠেও । তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে পারদর্শী মনে হয় ইসলামের ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রচারকদের । ‘আল্লাহ ক্ষমাশীল’ এমন দাবী কোরানে উচ্চারিত হয়েছে অসংখ্যবার । ইসলামের ধারক ও বাহকগণই ‘ইসলাম ধর্মই একমাত্র ক্ষমার ধর্ম এবং ‘মুহাম্মদ হলেন  ক্ষমার মূর্ত প্রতীক’ এরূপ প্রচারে সর্বাধিক অক্লান্ত ও বাকপটু ।  তাঁদের সেই প্রচারের একটা  নমুনা এরূপঃ   “মানব চরিত্রের ক্ষমা একটি বিশেষ গুণ, মহানবীর চরিত্রে তা পূর্ণতা লাভ করেছিল  মহানবী বলেন – “যে মানুষকে ক্ষমা করে, মহান আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন ।” মহানবী এতই ক্ষমাশীল ছিলেন – ব্যক্তিগত ব্যাপারে জীবনে একবারও প্রতিশোধ নেন নি । আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আপনজন, এদের ক্ষমা করা তাঁর নিকট এমন কিছুই বড়ো কাজ ছিল না ।” [দ্রঃ ড.ওসমান গণি, মহানবী, পৃ – ৪৭০] গণি ঐ গ্রন্থেই আরো লিখেছেন, “ক্রোধ সম্পর্কে মহানবী বলেন – তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে বিলম্বে ক্রোধান্বিত হয়, কিন্তু দ্রুত ক্রোধকে দমন করে এবং নিকৃষ্ট ঐ ব্যক্তি, যে হঠাৎ ক্রোধান্বিত হয় এবং বিলম্বে তার ক্রোধ প্রশমিত হয় ।” “যে ব্যক্তি ক্রোধ প্রকাশের শক্তি থাকা সত্ত্বেও দমন করে, আল্লাহ তাকে প্রতিদান দেয়  ” যে ক্রোধকে দমন করে আল্লাহ তাকে পুরস্কার দেবেন । একটি মাত্র হারামকে ইসলাম খেয়ে ফেলার জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছে, সেটা ক্রোধ ।” [পৃ – ৪৭৪]  ইসলাম ও মুহাম্মদ সম্পর্কে এরূপ প্রচারের ধারা অন্তহীন ।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ  আজো ধর্মভীরু ও ঈশ্বরবিশ্বাসী । এই মানুষগুলির বিশ্বাস, ধর্ম হলো মঙ্গলময় এবং ধর্মের উদ্দেশ্য হলো মহৎ এবং এর প্রধান লক্ষ্যই হলো মানুষের মঙ্গল সাধন করা এই  মানুষগুলোর দৃঢ় বিশ্বাস যে ঈশ্বর দপয়াময় ও ক্ষমাশীলতারা এরূপ  একই বিশ্বাস  পোষণ করে  তাদের ধর্মপ্রবর্তক ও ধর্মগুরুদের  প্রতি । বলা বাহুল্য যে তাদের এই বিশ্বাস কেবলই বিশ্বাস, একেবারেই অন্ধবিশ্বাস । এরূপ অন্ধবিশ্বাস মানব সমাজের পক্ষে ভীষণ  ক্ষতিকরধর্মভীরু মানুষরা এভাবে ভাবে না, ধর্মের মূল মন্ত্রই যদি হয় ‘ক্ষমা’, তবে পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হলো কীরূপে ?   পৃথিবীতে কেনই বা ক্রমশঃ হিংসা ও রক্তপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে  ইজরায়েল, প্যালেস্তাইন, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার প্রভৃতি  দেশগুলিতেই যেখানে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৮০% - এর উপর ?  এই প্রশ্নগুলিকে অবান্তর বলে এড়ানো যায় না, অগ্রাহ্যও করা যায় না । চারিদিকে  এতো হিংসা, এতো যুদ্ধ – এগুলো কী প্রমাণ করে ?  এই প্রশ্নগুলির  উত্তর পাওয়ার জন্যে  ধর্মের  গভীরে প্রবেশ  করতে হবেপ্রবেশ করতে হবে স্বর্গের প্রলোভন ও নরকের ভীতি উপেক্ষা করে প্রবেশ করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে   সততা, সহিষ্ণুতা, দয়া, মায়া, মমতা, প্রেম, ভালোবাসা, ক্ষমা এইসব বিষয়ে ধর্মগ্রন্থগুলিতে যে সব বড়ো বড়ো বাণী ও উপদেশ রয়েছে তা সবই অন্তঃসারশুন্য এবং স্ববিরোধীতায় পরিপূর্ণ । ঈশ্বরকেন্দ্রিক সমস্ত ধর্মের জন্যেই এই কথাটা কমবেশী প্রযোজ্য  কোনো ধর্মই ব্যতিক্রম নয় । না, ইসলামও নয়, যদিও মুসলিমরাই সব থেকে বেশী প্রচার করে যে  ইসলামই একমাত্র ক্ষমার ধর্ম এবং মুহাম্মদ হলেন ক্ষমার মূর্ত প্রতীক । সেই ইসলাম ধর্মে ক্ষমার স্থান কতটুকু তা আলোচনা করার জন্যে এই নিবন্ধের অবতারণা ।
প্রাতিষ্ঠানিক সকল ধর্মের সার কথা ইহকাল ও পরকাল এবং স্বর্গ ও নরকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ   ইসলাম ধর্মও এই চেনা ছকের বাইরে যায় নি । স্বর্গ ও নরকের এই গল্পকে সত্যি মানলে,আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল এই তত্ত্বটি বা বাণীটি অর্থহীন ও অবাস্তব হয়ে যায় । কারণ নরকে নিক্ষেপ করা হবে যে সব মানুষকে তারা নিশ্চয় আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হবে ।   সুতরাং  আল্লাহ ক্ষমাশীল – এ কথাটার অর্থ হয় না  উলামা [মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ]  বা মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ সাধারণতঃ যে সত্যটা আড়াল করতেই পছন্দ করেন তা হলো এই যে, আল্লাহ সকলকেই দাতা কর্ণের মতো ক্ষমা বিতরণ করে না । কোরান অধ্য্যয়ন  করলে এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম ধর্মে ‘ক্ষমা’ ভীষণ শর্ত-কণ্টকিত ।  প্রধান শর্তটি হলো আপন বিশ্বাস ও বোধ-বুদ্ধি বর্জন করে আল্লাহ ও তার রাসুল তথা মুহাম্মদের উপর বিশ্বাস ও  আনুগত্য স্থাপন করতে হবে । এই শর্তটি যে অমান্য করবে  সে ক্ষমার অযোগ্য । কোরানে এই কথাটা  দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বহুবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । কোরান এ প্রসঙ্গে একটি আয়াতে বলছে – “নিশ্চয় যাহারা আমার নিদর্শন সকলের বিরুদ্ধাচারী হইয়াছে, আমি অবশ্য তাহাদিগকে অনলে প্রবেশ করাইব, যখন তাহাদের চর্ম দগ্ধ হইবে তখন তাহার বিনিময়ে তাহাদিগকে অন্য চর্ম দিব, যেন তাহারা শাস্তির আস্বাদ প্রাপ্ত হয়; নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রান্ত নিপুন হন ।” [৪/৫৬]   ভয়ঙ্কর কোনো অন্যায় কর্মের জন্যে কাউকে ক্ষমার অযোগ্য ঘোষণা নয়, অযোগ্য ঘোষণা শুধু এই জন্যে যে সে একজন অবিশ্বাসী । অর্থাৎ কোনো প্রকার ভুল কিংবা দোষ-ত্রুটি করে সততা ও আন্তরিকতার সহিত তা স্বীকার করে অনুতাপ ও অনুশচনায় দগ্ধ হয়ে কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাইলে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যাবে না । ক্ষমা পেতে হলে আজন্ম সযত্ন লালিত অন্তরের আপন বিশ্বাস ও স্বধর্ম পরত্যাগ করে  ‘ইসলাম’ গ্রহণ করতে হবে । এটা যে  অসম্মান ও অপমান জনক শর্ত  তা বলা বাহুল্য । আবার  কেউ যদি জীবনভোর অন্যায় কাজকর্মে লিপ্ত থেকে জীবনের উপান্তে এসে মুসলমান হয়, কিংবা কোনো মুসলমান যদি সারা জীবন অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজ করবার পর শেষ জীবনে একবার হজ্ব ক্রিয়া সম্পন্ন করে কিংবা যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়ে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে মুশরিকদের হত্যা ও তাদের ধন-সম্পত্তি লুন্ঠন করে, তবে তার অতীতের সকল মন্দ ও অন্যায় কাজগুলি ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং সে পাবে বেহেস্ত [স্বর্গ]  যেখানে থাকবে ৭২টি  স্বর্গীয় ঊর্বশী [হুরী] তার যৌনদাসি হিসেবে এবং তার পায়ের নীচে বইবে সুরা [মদ] বাহিত নদী ।   কোরান এ প্রসঙ্গে একটি আয়াতে বলছে  – “তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি যদি বিশ্বাস স্থাপন কর, এবং আল্লাহর পথে আপন ধনপুঞ্জ ও আপন জীবন দ্বারা জিহাদ কর, যদি তোমরা বুঝিয়া থাক তবে তোমাদের জন্য ইহাই কল্যাণ । আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের পাপপুঞ্জ ক্ষমা করিবেন, এবং যাহার নিম্ন দিয়া পয়ঃপ্রণালী সকল প্রবাহিত হইতেছে সেই স্বর্গোদ্যানে এবং নিত্য স্বর্গে বিশুদ্ধ আলয় সকলে তোমাদিগকে লইয়া যাইবেন, ইহাই মহা মনোরথ সিদ্ধি ।” [৬১/১০,১১]  হজ্ব প্রসঙ্গে একটি হাদিসে বলা হয়েছে   “সাহাবী হযরত আমর ইবনুল আস [রাঃ] বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছিলেন, হে আমর! কেউ যদি ইসলামে দীক্ষিত হয়, তবে ইতিপূর্বে তার কৃত সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায় । তেমনি হজ্বও ইতিপূর্বে কৃত সমস্ত গোনাহ শেষ করে দেয় ।”  [মুসলিম শরীফ]  কারো স্বধর্ম বর্জন করা বা অন্য ধর্ম   গ্রহণ করা রুক্ষ ও কঠিন এই মানব সংসারে কারো কাছে খুবই কঠিন কাজ,  আবার কারো কাছে খুবই তুচ্ছ কাজ । অথচ এই তুচ্ছ কাজের [ইসলাম ধর্ম গ্রহণ]  জন্যে স্বর্গলাভ হবে, অর্থাৎ নব মুসলমানের অতিতের সকল অন্যায়, কুকর্ম ক্ষমা করে দেওয়া হবে । ক্ষমতা ও ‘ক্ষমা’র  এতো চরম অপব্যবহারের নিদর্শন । জিহাদ করলে সব অপরাধ মাফ করা হবে – এই  প্রলোভোন  তো  উস্কানিমূলকও বটেএরূপ ক্ষমা মানব সমাজকে ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় ।  এটাকে  ক্ষমা বলা যায় না,  আসলে এটা হলো  ক্ষমার আবরণে মোড়া  যুদ্ধ বাধানোর  প্ররোচনা ।
অবিশ্বাসীদের জন্যে কোনো ক্ষমা নেই আল্লাহর সংবিধানে । আল্লাহ অসংখ্যবার ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে   দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে অবিশ্বাসীদের নিক্ষেপ করা হবে দোজখে [নরকে] । তাদের জন্যে আল্লাহ সাতটি দোজখ তৈরী করে রেখেছে । আল্লাহ এই প্রশ্নে নিজে যতো কঠোর, তার বান্দাদেরও  ঠিক ততোটাই কঠোর হতে নির্দেশ প্রদান করেছে । এই নির্দেশ ভুলক্রমে প্রদত্ত হয়েছে এমনটা ভাবা চলে না, কারণ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে বহুবার এরূপ নির্দেশ এসেছে আল্লাহর নিকট থেকে । আল্লাহ কখনো নির্দেশ দিচ্ছে – “... আমি নিশ্চয় তোমাদের সঙ্গে আছি , অতএব যাহারা বিশ্বাসী হইয়াছে, তাহাদিগকে দৃঢ় কর, যাহারা ধর্মদ্রোহী হইয়াছে তাহাদের অন্তরে আমি অবশ্য ভয় স্থাপন করিব । অবশেষে গলদেশের উপর আঘাত কর ।” [৮/১২]   মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহ অবিশ্বাসীদের প্রতি আরো কঠোর অবস্থান নেয় । এবার শুধু ভয় প্রদর্শন বা গর্দানে ও আঙুলের গিটে গিটে আঘাত নয়, সরাসরি সংহার  করার নির্দেশ দিচ্ছে । মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সেই নির্মম ও কঠোর নির্দেশটি হলো – “অনন্তর হজ্বক্রিয়ার মাস সকল অতীত হয়, তখন যে স্থানে অংশীবাদীদিগকে প্রাপ্ত হও, সেই স্থানেই তাহাদিগকে সংহার করিও, তাহাদিগকে ধর এবং আবেষ্টন কর এবং তাহাদের জন্য প্রত্যেক গম্যস্থানে উপবিষ্ট হও, পরে যদি প্রতিনিবৃত্ত হয় ও উপাসনাকে [নামাজ] প্রতিষ্ঠিত রাখে, এবং জাকাত দান করে, তবে তাহাদের ছাড়িয়া দেও, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।” [৯/৫]  স্পষ্ট নির্দেশ আল্লাহর যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের ক্ষমা করবে, যারা করবে না তাদের হত্যা করবে । অর্থাৎ সাধারণভাবে ক্ষমা নয়, ইসলাম মুসলমানদের বিধর্মীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করতে এবং প্রতিশোধ নিতেই নির্দেশ প্রদান করেছে ।
শুধু বিধর্মী বা কাফেরদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়ার নীতি নয়, এটা ইসলাম ধর্মের একটা সাধারণ নীতিও বটে । কোরানে সমান মাপের প্রতিশোধ [কিসাস]  নেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশও রয়েছে । আল্লাহ বলছে – আমি তাওরাতে [আল্লাহ প্রদত্ত পূর্বের একটি গ্রন্থ] বিধান দিলাম যে জানের বদলে জান, চক্ষুর বদলে চক্ষু, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম হইবে । কেহ ক্ষমা করিলে তাহারই পাপ মোচন হইবে ” [/৪৫]   এখানে ক্ষমার কথা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু জোর দেওয়া হয়েছে কিসাসের ওপর ।   প্রতিশোধ প্রসঙ্গে কোরানে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে – “হে বিশ্বাসী লোক সকল, তোমাদের সম্বন্ধে হত ব্যক্তির বিনিময়ে হত্যা করা লিখিত হইয়াছে, স্বাধীন স্বাধীনের তুল্য, দাস দাসের তুল্য, ন্রী নারীর তুল্য, যে ব্যক্তি তাহার ভ্রাতার পক্ষ হইতে তাহার নিজের জন্য কিছু ক্ষমা প্রাপ্ত হইবে তৎপর বিধির অনুসরণ করিয়া তাহার চলা এবং সদ্ভাবে [হত্যার মূল্য] পরিশোধ করা কর্তব্য, ইহা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে লঘু করা হইল, অনন্তর ইহার পরে যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করিবে তাহার জন্য দুঃখকর শাস্তি আছে ।”   [২/১৭৮]    এই আয়াতটি পূর্বোক্ত আয়াতটির [৫/৪৫] অনুরূপই, বরং এখানে কিসাসকে আরো সহজ ও স্পষ্ট করে ব্যক্ত করা হয়েছে । বলা হয়েছে স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তিকে, দাসের বদলে দাসকে এবং নারীর বদলে নারীকে হত্যা করার বিধান দেওয়া হলো । তবে নিহতের ভাই ইচ্ছা করলে অর্থের বিনিময়ে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পারে । কিন্তু বস্তুত এখানে ক্ষমা করার বিষয়টি অপেক্ষা হত্যার বদলে হত্যা করার উপরেই অধিক জোর দেওয়া হয়েছে । কেহ ইচ্ছা করলে বা সদয় হলে অর্থের বিনিময়ে ক্ষমা করতে পারে এমন বিধান থাকলেও ইসলামকিন্তু ক্ষমাকারী অপেক্ষা প্রতিশোধ গ্রহণকারিকেই অধিক পছন্দ করে । হ্যাঁ, আল্লাহ তার এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন এইভাবে, “তোমাদের জন্য বিনিময় হত্যাতেই জীবন, হে বুদ্ধিমান লোক সকল, তাহা হইলে তোমরা রক্ষা পাইবে ” [২/১৭৯]  পারস্য ভাষায় এই আয়াতটির তফসিরে বলা হয়েছে – “অর্থাৎ বিচারকদের উচিৎ যে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করিতে ত্রুটি না করেন । তাহাতে ভবিষ্যতে হত্যা নিবারিত হইবে” [দ্রঃ কুরআন শারীফ, গিরিশচন্দ্র সেন, পৃ –২৪] এই বাখ্যায় ইসলামের নীতিটি আরো স্পষ্টঃ হত্যা নিবারনের জন্যে হত্যাকেই নীতি ও বিধান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে,ক্ষমাকে কখনো নয় ।  
যুক্তিহীন ও অন্ধবিশ্বাসী হিন্দুদের নিকট যেমন  ‘বেদ’ হলো ঐশী গ্রন্থ, ধর্মান্ধ মুসলমানদের নিকট তেমনি কোরান হলো ঐশী গ্রন্থ তথা আল্লাহর গ্রন্থ । কোরানের কথগুলিকে তারা কালামুল্লাহ [আল্লাহর কথা] বলে বিশ্বাস করে এবং এও বিশ্বাস করে যে কোরানের প্রত্যেকটি কথাই নির্ভুল, চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় । সেজন্যে কোরানের কথা ও আইনগুলি ইসলামের কথা ও আইন । কোরানে ‘আল্লাহ দয়ালু ও ক্ষমাশীল’ এই কথাটার পুনরুক্তি এতোবার হয়েছে যা বড়োই  শ্রুতিকটূ । বারবার একই কথা উচ্চারণ করা হয়েছে সম্ভবতঃ মানুষের মনে বিশ্বাস উৎপাদনের জন্যে যে আল্লাহ সত্যিই দয়ালু ও ক্ষমাশীল । কিন্তু খোলা মন নিয়ে এবং গভীর মনোযোগ সহকারে কোরান   অধ্যয়ন করলে আল্লাহকে তেমনটা মোটেই মনে হয় না ।  মনে হয় ঠিক এর বিপরীতটাই । মনে হয়  আল্লাহ যেন বড়োই নির্মম, প্রচন্ড নিষ্ঠুর ও অতিশয় স্বৈরাচারী সম্রাট বৈ নয় । ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী সম্রাট হিসেবে কোরানে ফেরাউন ও নম্রুদকে চিহ্নিত করা হয়েছে । এবং স্বৈরাচারী শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসের বিস্তারিত বর্ণনাও লিপিবদ্ধ রয়েছে কোরানে । অর্থাৎ মুসলিমদের কাছে স্বৈরাচারী সম্রাট তথা শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার নির্দেশ রয়েছে ।
কিন্তু আল্লাহর কার্যক্রম ও কার্যপদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করলে তাকেও ঐ দুই স্বৈরাচারী সম্রাটের চেয়ে কিছুই কম বলে মনে হয় না । আল্লাহ বারবার বলেছে, ‘আমাকে ভয় করো, আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, আমার অনুগত হও, এবং অনুরূপ আচরণ করো আমার রসুলের [মুহাম্মদ] প্রতি, এবং যা চাইবার কেবল আমার আমার রসুলের কাছে চাও ।’ আল্লাহ কোনোরূপ সমালোচনা, অবিশ্বাস, অনানুগত্য ও অবাধ্যতা বরদাস্ত [সহ্য] করে না । যারা আল্লাহর সমালোচনা করে, কিংবা এমনকি তার প্রতি অন্ধবিশ্বাস ও অন্ধ আনুগত্য স্থাপনে দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে থাকে  তাদের প্রতিও  আল্লাহ অত্যধিক নির্মম ও কঠোর  মনোভাব গ্রহণে এতটুকু দ্বিধা করে না । না, এটা শুধু কথার কথা নয় । তিনি অবাধ্য সকল মানব জাতি ও গোষ্ঠীকে কঠোরতম ও অতি অমানবিক শাস্তি প্রদান করেছেন সে কথা তিনি নিজেই গর্বের সংগে ব্যক্ত করেছেন । তিনি মানুষকে অবলীলায় একথা  শুনিয়েছেন যে অবাধ্য বহু জাতিকে   সমূলে বিনাশ করতেও  তিনি দ্বিধা করেন নি । সমুদয় একটি জাতির বিনাশের এমন একটি ঘটনার কথা তিনি অনায়াস ভঙ্গীতে বর্ণনা করেছেন কোরানের একাদশ অধ্যায়ের [সুরা হুদ] ছত্রিশ থেকে আটচল্লিশ নম্বর আয়াতে । ঘটনাটি এরূপ – আল্লাহর প্রেরিত রসুল নুহু-র  প্রতি অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করে নি । সেই দলে  তাঁর পুত্রও ছিলোতাদের অবিশ্বাস ও অবাধ্যতার জন্যে  আল্লাহ একটি অভূতপূর্ব মহা প্লাবন সৃষ্টি করেছিলেন । সেই প্লাবন থেকে নুহু ও তাঁর অনুগামীদের রক্ষা করার জন্যে তিনি নুহুকে একটি বিরাটাকার নৌকা বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেটা বানাতে সহায়তাও প্রদান করেছিলেন । নুহু আল্লাহর হুকুম মতো তাঁর সকল অনুগামী এবং প্রাণীকুলের সকল  প্রজাতি থেকে এক জোড়া [স্ত্রী-পুরুষ] করে সেই নৌকায় তুলে নিলে আল্লাহ মহাপ্লাবনে সমগ্র পৃথিবীটাকেই ডুবিয়ে দেন । এভাবেই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের সমগ্র মানবজাতি ও সমস্ত প্রজাতির সকল প্রাণীকে ধ্বংস করে দেন । কোরানের সপ্তম অধ্যায়ে আল্লাহ স্বয়ং জানাচ্ছেন যে, সম্রাট হেরাউন তাঁকে এবং তাঁর রসুলকে অবিশ্বাস ও অমান্য করার জন্যে তার [ফেরাউনের] সাম্রাজ্যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে তিনি সকলকে হত্যা করেছিলেন । কোরানের সেই ভাষ্যটি হলো – “এবং সত্যি সত্যিই আমি ফেরাউনের দলকে দুর্ভিক্ষ দ্বারা ও ফল সকলের অপচয় দ্বারা আক্রান্ত করিলাম, তাহাতে তাহারা যেন উপদেশ গ্রহণ করে   [/১৩১]   কোরানের এই অধ্যায়েই জানানো হয়েছে যে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ অর্থাৎ আল্লাহর দূত সালেহাকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করার জন্যে সমুদয় ‘সমুদ জাতি’কে ভূমিকম্পের দ্বারা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিলো [দ্রঃ ৭/৭৫-৮০]   ৭/৮০ নম্বর আয়াতটি হলো – “অবশেষে ভূমিকম্প তাহাদিগকে আক্রান্ত করিল, পরে তারা আপন গৃহে প্রাতঃকালে অধোমুখে কালগ্রাসে পতিত হইল । ”
অবিশ্বাস, অনানুগত্য ও অবাধ্যতার শাস্তি হলো হয় ভয়ঙ্কর খরা, নয়তো ভয়ঙ্কর বন্যা, নয়তো ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প, নয়তো ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ  এরূপ প্রকৃতিক মহা দুর্যোগ সৃষ্টি করে সমুদয় মানবজাতির ধ্বংস ও বিনাশ সাধন করা হলো আল্লাহর নীতি ও বিধান । সেই আল্লাহর একমাত্র ধর্ম ইসলামের নীতিতে ‘ক্ষমা’ কীভাবে স্থান পেতে পারে তা  বোধগম্য হয় না  । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ [১৯৩৯-১৯৪৫]  বাধিয়েছিলেন এ্যাডলফ হিটলার । তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ব-সম্রাট হতে এবং বিশ্বকে পদানত করতে । সেই যুদ্ধে অপরিমিত ক্ষতি-ক্ষতি হয়েছিলো । নিহত হয়েছিলো দু কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষ,  আহত হয়েছিলো তিন কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ এবং আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল ১,৩৪৮,০০০,০০০,০০০ [ তেরো লক্ষ আটচল্লিশ হাজার কোটি] ডলার যার মধ্যে কেবল সামরিক খাতেই ব্যয় হয়েছিলো ১,১৬৭,০০০,০০০,০০০ [এক লক্ষ ষোলো হাজার সাতশো কোটি] ডলার । মহা ভয়ঙ্কর এই বিশ্বযুদ্ধের মহা খলনায়ক ছিলেন এ্যাডলফ হিটলার । তারপর থেকেই হিটলার ও একনায়কতন্ত্র এবং হিটলার ও স্বৈরাচার শব্দগুলি সমার্থক হয়ে গিয়েছে । কোরান অধ্যয়ন কালে তাই হিটলারের মুখটা যেন বারে বারে ভেসে ওঠেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেই ভূমিকায় যেনো অবতীর্ণ হয়েছে । মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও চায় পৃথিবীকে পদানত করতে । এই সাম্রাজ্যবাদের একদা অধিশ্বর [রাষ্ট্রপতি] দ্বিতীয় বুশের  কণ্ঠে আল্লাহর কণ্ঠস্বরই যেনো  শুনেছি আমরা । বুশের সেই ভয়ঙ্কর  উক্তি ‘হয় তুমি আমার সঙ্গে, নয়তো তুমি আমার শত্রু’ আজো আমাদের কানে বাজে আলাদা আলাদা মিথ্যে অজুহাতে  বুশ আফগানিস্তান ও ইরাকের উপর  একতরফা  অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন যে যুদ্ধে  লক্ষ লক্ষ  নিরীহ মানুষ হতাহত হয়েছে এবং  ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য জনপদ ও ধন-সম্পদ । এই যুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো   দেশ দুটিকে পদানত   ও শোষণ করা  একপেশে যুদ্ধের শেষে এই  দুটি স্বাধীন দেশের নিজেদের সরকারকে উৎখাত করে সেখানে তাঁর আজ্ঞাবহ দুটি পুতুল সরকার  চাপিয়ে দিয়েছিলেন । বুশকে এই   অন্যায় যুদ্ধ দুটির জন্যে ইতিহাস কোনোদিন ক্ষমা করবে বলে মনে হয় না । হিটলারের সঙ্গে একই নিঃশ্বাসে  উচ্চারিত হয় ইতালির আর একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র প্রধান মুসলিনির নাম ।  আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে সমুদয় জাতিকে ধ্বংস করেছেন বলে কোরানে বর্ণনা করা হয়েছে সেই একই উদ্দেশ্যেই  হিটলার, মুসলিনি ও জর্জ বুশরাও  ব্যাপক গণহত্যা ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলেন ।  উদ্দেশ্য হলো সবাইকে পদানত করা, নিজের প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব পৃষ্ঠা করা । তাই আল্লাহ, হিটলার, মুসোলিনি, জর্জ বুশ  এই নামগুলোকে সন্ত্রাস ও স্বৈরাচারের  মূর্ত প্রতীক বলে মনে হয় ।
অনানুগত্য, অবাধ্যতা ও প্রতিবাদ যে আল্লাহর নিকট একদম অসহনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য তা ইসলামের গোড়ার কথাতেই পরিষ্ফুট হয়ে রয়েছে । আদম ও হাওয়া ও ইবলিসের [শয়তান] সৃষ্টি রহস্যে সে বর্ণনা রয়েছে কোরানে [দ্রঃ ২/৩০-৩৮, ৭/১১-২৫, ১৫-২৬-৪০ প্রভৃতি] । কোরানের ভাষ্য অনুসারে আল্লাহ প্রথমে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত কাদা-মাটি থেকে সৃষ্টি করেন প্রথম মানব তথা আদমকে । আদমকে সৃষ্টি করে সকল ফেরেস্তাকে [স্বর্গীয় দূত] ডেকে তাদেরকে আদমের প্রতি সিজদা [মাথা নতো করে  অভিবাদন জানানো]  করার নির্দেশ প্রদান করেন ।  প্রধান ফেরেস্তা ‘মকরম’ ব্যতীত সকল  ফেরেস্তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে ।   মকরম প্রতিবাদ করে বলেছিলো, ‘আদমকে আপনি কাদা-মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর আমাদের সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে । সুতরাং আমরা আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ।’ মকরম আল্লাহর মুখের উপর এই কথা বলে আদমকে সেজদা  করার নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করেছিলো । মকরমের এই ন্যায্য ও যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আল্লাহ সহ্য করেন নি । তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে শয়তান নামে আখ্যায়িত করে বেহেস্ত থেকে বহিষ্কার  করে দেন ।   আল্লাহ  আদমের বুকের পাঁজরের একটি হাড় থেকে  তার [আদম] জন্যে একজন নারী [হাওয়া] তৈরী করেন । তারপর তারা আল্লাহর হুকুমে দুজনকেই স্বর্গে বসবাস  করতে থাকেওদের জন্যে স্বর্গ ছিলো অবাধ বিচরণের লীলাভূমি , কেবল একটি বৃক্ষের [জ্ঞানবৃক্ষ] ফল খাওয়া নিশেধ ছিলো কিন্তু একসময় ওরা শয়তানের দ্বারা  প্ররোচিত হয়ে  নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে বসে । এই একটি ভুলই তারা করেছিলো ।  এই একটি মাত্র ভুলের জন্যেও আল্লাহ  তাদের ক্ষমা করেন নি ।    স্বর্গ থেকে বহিষ্কার করে  তাদের  মর্তে নিক্ষেপ করে দেন কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ    
‘ক্ষমা’ সম্পর্কে আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গী ও বিচারধারা কীরূপ তা জানবার ও বুঝবার জন্যে কতিপয় বাণী ও ঘটনার কথা উপরে আলোচনা করা হয়েছে । সে আলোচনায়  ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে ইসলামের তাত্ত্বিক দিকটি  স্পষ্ট হয়েছে । তত্ত্ব কথায় অনেক অস্পষ্টতা ও ধোঁয়াশা থাকে এবং একই কথার নানা জন নানা  বাখ্যা দিয়ে থাকে । সেজন্যে ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে  ইসলামের সঠিক  নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গী কী তা নিখুঁতভাবে জানার জন্যে মুহাম্মদের নিজের  কার্যকলাপের প্রতি আমাদের চোখ রাখতে হবে ।  মুহাম্মদ বেঁচে ছিলেন ৬২ বছর যার মধ্যে তাঁর নবী জীবন মাত্র ২২ বছরের । ২২ বছরের মধ্যে ১২ বছর কেটেছে তাঁর মক্কায় যেখানে তিনি ইসলামের পতাকা তলে বেশী লোককে টানতে পারেন নি, ফলে তিনি ছিলেন তখন সম্পূর্ণ রক্ষণাত্মক ভূমিকায় ।  মক্কায়  ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে       তিনি ৬২২ খৃষ্টাব্দে মদিনা চলে  যানতাঁর নবী জীবনের আসল অধ্যায়ের শুরু হয়  তখন থেকেই তিনি মারা যান ৬৩২ খৃষ্টাব্দে  । মুহাম্মদ ক্ষমাকে কীভাবে দেখতেন ও বুঝতেন তা সঠিকভাবে জানতে হলে তাঁর শেষ দশ বছরের আদেশ-উপদেশ ও কর্মকান্ডকে ভাল করে জানতে হবে । কারণ, ‘ক্ষমা’  করার জন্যে সবদিক থেকেই যে শক্তি ও সামর্থ থাকা দরকার তা মুহাম্মদ অর্জন করেছিলেন শেষ দশ বছরেই । দূর্বল ও অসহায় মানুষদের  কাছে ক্ষমা করার প্রশ্নটাই অবান্তর, সবল মানুষদের যাবতীয় অত্যাচার সহ্য করা বেঁচে থাকাটাই মানব সমাজের রীতি ।  বলা বাহুল্য যে   মুহাম্মদও  ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তি ।  
এটা সর্বজন সুবিদিত যে মুহাম্মদ মদিনায় গিয়ে আমূল বদলে যান । ইসলাম প্রচারের জন্যে মক্কায় যে নীতি ও পথ তিনি অবলম্বন করেছিলেন মদিনায় যাওয়ার অব্যবহিত পরেই তা সম্পূরণরূপেই পরিত্যাগ করেন ।  মক্কায়  ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে  মুহাম্মদের যে কথাগুলি  বলেছিলেন তা ছিলো এ রকম  – “তোমাকে [মুহাম্মদ] ওদের উপর জবরদস্তি করার জন্য প্রেরণ করা হয় নি, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কোরানের সাহায্যে উপদেশ দান কর ।” [কোরান, ২/২৫৬]  “ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য কেবল স্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেওয়া ।”  [১৬/৮২]  “লোকে যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর  এবং সৌজন্য সহকারে ওদের পরিহার কর ।” [২৯/৪৬]   “সকাতরে ও গোপনে রবকে ডাক, সীমা লঙ্ঘণকারীদের তিনি পছন্দ করেন না ।” [৭/৫৫]  “তোমাদের জন্য তোমার ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম ।”  [১০৯/৬]  “কেহ কাহাকে হত্যা করিলে সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করিল । আর কাহারো জীবন রক্ষা করিলে সে যেন সকলের জীবন রক্ষা করিল ।” [৫/৩২]  কোরানে রয়েছে এরূপ আরো কিছু আয়াত যা থেকে মক্কায় ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ কোন নীতি অনুসরণ করেছিলেন তা স্পষ্ট বোঝা যায় । উল্লেখিত আয়াতগুলির মধ্যে দুটি আয়াত [প্রথম ও শেষেরটি] মদিনায় যাওয়ার একেবারে গোড়ার দিকের । কিন্তু মদিনায় এসে কিছুদিনের মধ্যেই  মুহাম্মদ তাঁর সেই নীতিটি পরিত্যাগ করেন । এবং  নীতি হিসেবে বিধর্মীদের উপর আক্রমণ, লুঠতরাজ, অপহরণ ও হত্যা করার নীতি গ্রহণ করেন । এই নীতিকে তিনি আল্লাহর পথে পবিত্র জিহাদ বলে আখ্যায়িত করেন । তিনি প্রথম  শিষ্যদের জানালেন যে ইসলামের প্রচার ও  প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহ জিহাদ করার অনুমতি প্রদান করেছে ।   মুসলমানদের মধ্যে জিহাদে কিন্তু বিশেষ উৎসাহ পরিলক্ষিত হয় নি মুহাম্মদ তখন অনেকগুলি ওহির কথা বললেন যাছিলো  জিহাদের পক্ষে উৎসাহব্যঞ্জক । কিন্তু মুহাম্মদ তাতেও খুব বেশী সাড়া পান নি ।  আল্লহ তখন প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে জিহাদে অংশ গ্রহণকরা বাধ্যতামূলক করেজিহাদের পক্ষে  প্রথমে অনুমতি, তারপর জিহাদে উৎসাহ প্রদান এবং অবশেষ একেবারে জিহাদকে বাধ্যতামূলক করা –  জিহাদের  নীতিতে পর্যায়ক্রমে এই   পরিবর্তনগুলি এসেছিলো মাত্র ২/৩ বছরের মধ্যে । যে  আয়াতগুলির হাত ধরে পর্যায়ক্রমে এই আমূল পরিবর্তন  এসেছিলো সেগুলির কয়েকটি  হলোঃ  যুদ্ধের অনুমতি  - “যাহাদের সঙ্গে সংগ্রাম [জিহাদ] করিতে প্রবৃত্ত, তাহাদিগকে ধর্মযুদ্ধ [জিহাদ] অনুমতি দেওয়া হইয়াছে, যেহেতু তাহারা উৎপীড়িত, নিশ্চয় আল্লাহ তাহাদের সাহায্য দানে সমর্থ   [সুরা হজ্ব, ২২/৩৯]     যুদ্ধে উৎসাহ প্রদান – “আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিয়া নিহত হউক বা বিজয়ী হউক, তাহাকে মহা প্রতিদান দিব ।”  [সুরা নিসা, ৪/৭৪]  “ ... আল্লাহর পথে জান-মাল দ্বারা জিহাদ করিবে । ইহাই কল্যাণ, যদি বুঝ । তোমাদের পাপ ক্ষমা করিবেন, জান্নাতে ঢুকাইবেন ... ।” [ সুরা সয়াফ, ৬১/১০,১১]  যাহার ইমান আনে, হিজরত করে, জান-মাল দিয়া আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, তাহারা আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ।” [সুরা মায়দা, ৯/২০]  যুদ্ধ করা ফরজ [বাধ্যতামূলক] -  “তোমাদের উপর জিহাদ বিধিবদ্ধ হল, এটা তোমাদের নিকট অপ্রীতিকর, এবং সম্ভবত তোমরা যা পছন্দ করো না তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, এবং তোমরা যা পছন্দ করো, সম্ভবত তা তোমাদের পক্ষে অকল্যাণকর । আল্লাহ যা জানেন, তা তোমরা জান না ।” [সুরা বাকারা, ২/২১৬]
বলা বাহুল্য যে মুহাম্মদ এই পথ [জিহাদ]  ধরেই মহা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন । মুহাম্মদের জীবদ্দশায় মুসলিমরা ৮২ টি যুদ্ধ [যুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে ] করেছিলো । তার মধ্যে মুহাম্মদ নিজে ৪৩টি জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন । ‘ক্ষমা’ করার স্তরে উন্নীত হতে গেলে যে আর্থিক সঙ্গতি এবং সাংগঠনিক ও  সামাজিক ক্ষমতা ও  প্রতিপত্তি থাকা আবশ্যক তা তিনি এই পথেই অর্জন করেছিলেন । তারে আগে মুহাম্মদের সে ক্ষমতা ও  প্রতিপত্তি ছিলোনা । কারণ,  তিনি  ছিলে দীন ও  দুর্বল ব্যক্তি ।  তিনি এতোই দরিদ্র ছিলেন  যে  তাঁকে একজন নারী বণিক খাদিজার অধীনে চাকরি  নিতে হয়েছিলো ।   আর্থিক দিক থেকে খানিকটা স্বচ্ছল পরিস্থিতি আসে তাঁর  ৬২৪ খৃষ্টাব্দে বদর যুদ্ধে জয়লাভের পর । সেই যুদ্ধে পরাজিত কোরেশ বাহিনীর  বহু ধন-সম্পত্তি সহ ৭০ জন কোরেশ সৈন্য তাঁর হস্তগত হয়েছিল । এবং সেই প্রথম তাঁর জীবনে কাউকে ক্ষমা করার পরিস্থির উদ্ভব হয়েছিলো  কিন্তু তিনি কোরেশদের ফেলে যাওয়া সেই  ধন-সম্পত্তি তাদের  ফিরিয়ে  দিয়ে ও বন্দিদের মুক্তি দিয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করেন নি ।   লুন্ঠিত সমস্ত ধনরাশি ও দ্রব্যাদি নিজে পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিয়ে বাকিটা যারা তাঁর সঙ্গে জিহাদে  গিয়েছিলো তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছিলেন । বন্দি কোরেশদের দুজনকে তিনি নির্মমভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন ।  বাকি  বন্দিদের  মধ্যে মাত্র একজনকে ক্ষমা করেছিলেন, বাকি সকলকে মোটা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছিলেন যাঁকে তিনি ক্ষমা করেছিলেন এবং বিনা মুক্তিপণে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাঁর নিজের জামাই   
মুহাম্মদের জীবনে সেবার শত্রুকে ক্ষমা করে দয়া, উদারতা ও মহানুভবতা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার  একটা বড়ো সুযোগ এসেছিলো । কিন্তু তিনি সে সুযোগ নেন নি । তার বদলে সেই সুযোগটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন অর্থবল ও বাহুবল বৃদ্ধির কাজে । কিন্তু তিনিই আবার  তাঁর জামাইকে  ক্ষমা প্রদর্শন করে   ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহারও করেছিলেন মুহাম্মদকে ন্যায় বিচারের মূর্ত প্রতীক বলে মুসলিমরা গর্ব করে থাকেন, এই হলো তাঁর ন্যায় বিচারের নিদর্শন ! শুধু ঐ একবারই নয়, মুহাম্মদ  তাঁর সেই  জামাইকে  আরো একবার ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন ।   ঘটনাটি এরূপঃ সে সময় সিরিয়া  ছিলো একটি বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্র । মক্কার বণিকগণ স্বভাবতই সিরিয়া যেতেন দল বেঁধে । মক্কা ও সিরিয়ার পথের ধারে কিছুটা দূরে  মদিনা অবস্থিত   মুহাম্মদের নির্দেশে মুসলমানরা  মক্কার বাণিজ্য কাফেলার উপর আক্রমণ করার জন্যে পথের ধারে ওঁৎ পেতে থাকতেন । কখনো কখনো মুহাম্মদ স্বয়ং তাদের সঙ্গে থাকতেন । সেই বাণিজ্য কাফেলা মদিনার নিকটবর্তী হলে মুসলমানরা  তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে  তাদের  টাকা-পয়সা ও পণ্যসম্ভার লুণ্ঠন করে এবং তাদেরকে বন্দী করে মদিনায় নিয়ে আসতো  শত্রুদের জন্যে ওঁৎ পেতে থেকে তাদের উপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সর্বস্ব লুঠ করা এবং শত্রুরা বাধা দিলে তাদের হত্যা করো -  এটাই  ছিলো তখন   মুহাম্মদের  নীতি    বিধর্মীদের জন্যে ওঁৎ পেতে  থাকা এবং তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের লুঠ করা, বন্দি করা যে ইসলামের নীতির অঙ্গ তার প্রমাণ কোরানে রয়েছে ।    কোরানের  এ রকম একটি হলো – “অতঃপর নিষিদ্ধ মাসগুলো যখন অতিক্রান্ত হয়ে যায় মুশরিকদের কতল [হত্যা] করো যেখানে ওদের পাও, আর তাদের বন্দি করো, আর তাদের ঘেরাও করো, আর তাদের জন্যে ওঁৎ পেতে থাকো প্রত্যেক ঘাঁটিতে কিন্তু যদি তারা তওবা করে ও নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও । নিঃসন্দেহে আল্লাহ পরিত্রাণকারী অফুরন্ত ফলদাতা ।[সুরা  ৯/৫]   বিধর্মীদের লুণ্ঠন ও হত্যা করার এই নীতি মুহাম্মদকে তাঁর অর্থবল ও বাহুবল বৃদ্ধিতে প্রভূত সাহায্য করেছিলো । সে রকম একটি অভিযানে [বদর যুদ্ধের তিন বছর পর ] মুহাম্মদের সেই জামাতা আবুল আস আর একবার মুসলমানদের হাতে সদলবলে বন্দি হয়ে মদিনায় মুহহামদের নিকট আনীত হয়েছিলেন । এই ঘটনাটি সম্পর্কে অধুনা বাংলাদেশের কবি গোলাম মোস্তফা লিখেছেন – “তিন বৎসর পর সেই আস সিরিয়া হইতে বণিজ্য-কাফেলা সহ মক্কায় ফিরিবার পথে পুনরায় বন্দী অবস্থায় মদীনায় আনীত হইলেন । এইবার আস গোপনে স্ত্রীর সহিত সাক্ষাত করিলেন । জয়নবের মধ্যবর্তিতায় এবারও আসকে মুক্তি দিলেন । তাঁহার সমুদয় লুণ্ঠিত দ্রব্যও ফিরাইয়া দেওয়া হইল । আসের সঙ্গে তাঁহার সঙ্গীরাও মুক্তি পাইল ।” [বিশ্বনবী, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, পৃ - ২০৮]  বলা বাহুল্য যে এই ক্ষমা প্রদর্শন কোনো সাধারণ নীতির জন্যে হয় নি ।  কন্যার  প্রতি স্নেহের বশে মুহাম্মদ তাঁর নিজের জামাতাকে ক্ষমা করেছিলেনআসকে ও তাঁর সঙ্গীদের বাণিজ্য-সম্ভার সহ মুক্তি দেওয়ার এই ঘটনাটিকে মুহাম্মদের ক্ষমাশীলতার  অনন্য দৃষ্টান্ত হসেবে তুলে ধরা হয়ে থাকে । কিন্তু এটা যে উলামা, মুসলিম ঐতিহাসিক ও জীবনীকরদের একটা নিকৃষ্ট মিথ্যাচারের নিদর্শন তা বলা বাহুল্য । এই ঘটনা আমাদের সামনে মুহাম্মদের চরিত্রের দুটি দিক  উন্মোচন  করে । এক – মুহাম্মদ ন্যায় বিচারের মূর্ত প্রতীক ছিলেন এই প্রচারটি অন্তঃসারশুন্য । দুই – মুহাম্মদ মানুষ হিসেবে মোটেই নীতিনিষ্ঠ ছিলেন না এবং আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই নীতির উপরে  আত্মীয়-স্বজনদের স্বার্থকে স্থাপন করতে কুণ্ঠিত হতেন না ।    
ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে মুহাম্মদের সামনে প্রধান অন্তরায় ছিলো মক্কার কোরাইশরা বিধায় তিনি তাদের  প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তাই শত্রু নিধনে তিনি তাদের উপর অনেক আক্রমন সংগঠিত করেছিলেন   তার পাল্টা আক্রমণ কোরেশোরাও করেছিলোকোরেশরা ছাড়াও  কয়েকটি  উপজাতি গোষ্ঠী এবং ইহুদি ও খৃষ্ঠানরাও ছিলো মক্কা ও মদিনায় এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে    তাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা তেমন আসে নি । মুহাম্মদ   আশা করেছিলেন ছিলেন যে   ইহুদি ও খৃষ্টানরা, বিশেষ করে ইহুদিরা   তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে । কিন্তু তারা তাঁর সে আশা পূরণ করে তাঁকে বাধিত করার মতো  কোনো কারণ দেখতে পায় নি ।  তারজন্যে তিনি   ইহুদিদের শত্রু বলে গণ্য করেন এবং  নজিরবিহীন নৃশংসতায়  মদিনা তাদের নিশ্চিহ্ন করেন বানু কাইনুকা, বানু নাজির ও বানু কুরাইজা নামে মদিনায় ইহুদিদের তিনটি গোষ্ঠী ছিলো ।  প্রথম দুটি গোষ্ঠীকে তিনি ৬২৪ ও ৬২৫ খৃষ্টাব্দে  মদিনা থেকে বলপ্রয়োগ পূর্বক  নির্বাসিত  করেন    মুসলিম ধর্মগুরু ও ঐতিহাসিকগণ এই বর্বর নির্বাসনকান্ডকেও মুহাম্মদের একটি উদারতা ও ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত বলে গর্ব করেন যেহেতু তিনি তাদেরকে হত্যা করেন নি । মুহাম্মদের প্রতি তাঁদের এই অন্ধ আনুগত্যপূর্ণ শ্রদ্ধা ও প্রশংসা  মানব সমাজের কলঙ্কমুহাম্মদ সেই তথাকথিত ‘ক্ষমা’র নীতিটিও মুহাম্মদ নির্মমভাবে  ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন আরব সাগরে বানু কুরাইজাদের বেলায় । ৬২৬ খৃষ্টাব্দে খন্দক যুদ্ধের শেষে মুহাম্মদ  বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবরোধ শুরু করেন    পনেরো দিন অবরুদ্ধ থাকার পর বানু কুরাইজা গোষ্ঠী মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করে । তারা দূত মারফত বানু কানুইকা ও বানু নাজির গোষ্ঠীর মতো  সমস্ত  কিছু পরিত্যাগ করে  মদিনা থেকে  চলে যাওয়ার অনুমতি ভিক্ষা করে  কিন্তু মুহাম্মদ তা নির্মমভাবে  প্রত্যাখান করেন । তিনি বলেন যে,  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে এবার আর ক্ষমা করা হবে না ।  ক্ষমার বদলে বিচার করা হবে । খন্দক যুদ্ধে কোরেশদের পক্ষে  তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার  অভিযোগ এনে  তাদের বিরুদ্ধে বিচার  বসানো হয়  অভিযোগটি ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যে সেই সাজানো বিচারে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে  তিন প্রকার শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো – [এক]. প্রাপ্ত বয়স্ক সকল ইহুদির  মৃত্যুদন্ড, [দুই]. তাদের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করার আদেশ এবং [তিন]. সকল নারী ও শিশুদের  ক্রীতদাসী ও ক্রীতদাস রূপে  মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করার আদেশ বিচার তথা প্রহসনের শেষে   ৮০০/৯০০ ইহুদিকে শিরচ্ছেদ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার বীভৎস হত্যাকান্ডটি মুহাম্মদ স্বয়ং তদারকি করেছিলেন ।  শুধু  ওই তিনগোষ্ঠীর উপরেই নয়,  মদিনার পার্শবর্তী সমস্ত ইহুদী গোষ্ঠীর উপরেও তিনি সহসা সশস্ত্র  অভিযান সংগঠিত করে তাদের হত্যা ও সর্বস্ব লুণ্ঠন করেছিলেন । তাদেরও অপরাধ  ছিলো ঐ একটাই। তারা স্বধর্ম পরিত্যাগ করে মুহাম্মদের ধর্মকে স্বীকার করে মুসলমান হতে স্বীকৃত হয়  নি । 
 
মুহাম্মদ মক্কা জয় করেন ৬৩০ খৃষ্টাব্দে । মুসলিমদের দাবী করেন যে মক্কা বিজয়ের পর কোরেশদের  উপর মুহাম্মদ কোনো প্রতিশোধ নেন নি এবং সকলকে নিঃশর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন   এই ক্ষমার ঘটনাটি মুসলিম লেখকগণ কীভাবে গর্ব ভরে  বর্ণনা করে থাকেন তার একটি নমুনা দেওয়া যাক -   “আজ হযরত মহম্মদ [দঃ] দাঁড়িয়ে আছেন তাদেরই মাঝে, যারা ছিলো তার চিরশত্রু, যারা তাকে একদিন গালাগালি করেছে, পাথর নিক্ষেপ করেছে, বিতাড়িত করেছে, মৃত্যু কামনা করেছে, যুদ্ধ করেছে বহুবার । এমনকি বহু সাহাবার স্থাবর-অস্থাবর থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকেও কেড়ে নিয়েছে । এহেন শত্রুকেও কেউ ক্ষমা করলেন । এমনকি আপন সম্পদগুলোও আর ফিরে নিলেন না । সেই নির্যাতিত নবী [দঃ] আজ তাদের মৃত্যুর মালিক । কিন্তু কোন প্রতিশোধ নেই, একটি কথার ভিতর দিয়ে সবকিছুর অবসান করে দিলেন । ‘আজ তোমাদের উপর কোন প্রতিশোধ নেই, তোমরা আজ মুক্ত ।’”   [দ্রঃ মহানবী, ড.ওসমান গণি, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা, পৃ ৩৩৪]  মক্কার কোরেশদের নিঃশর্তে ক্ষমা করে দেওয়ার এই দাবির কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তিই নেই, এটা ইতিহাসের একটা জঘন্য মিথ্যাচারের নিকৃষ্ট উদাহরণ মাত্র ।  মুহাম্মদ মক্কার মানুষদের  ক্ষমা করেছিলেন কারণ তারা ইহুদিদের মতো স্বধর্মে অনড় না থেকে   মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তারা   ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুহাম্মদকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করে  তাঁর কাছে বয়াত [আনুগত্যের শপথ] নিতে বিশেষ বিলম্ব  করে নি তাঁর ধর্ম গ্রহণ না করলে  তিনি কী  ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারেন তা ইহুদি-  নিধনকান্ড থেকে কোরেশরা জেনে গিয়েছিলো । তাই জীবন রক্ষা করার জন্যে মুহাম্মদের অধীনতা স্বীকার  করে মুসলমান না হওয়া ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প পথ খোলা ছিলো না । মক্কার মানুষ স্বধর্ম পরিত্যাগ করে মুসলমান  হওয়ার পরই যে মুহাম্মদের ক্ষমা লাভ করেছিলো তার ভুরিবুরি প্রমাণ রয়েছে । এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় মুসলিম লেখকদের গ্রন্থের মধ্যেই । মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে সর্ব প্রথম মুহাম্মদের যিনি সব চেয়ে বড়ো শত্রু ছিলেন সেই আবু সুফিয়ান মুহাম্মদের নিকট আত্মসমর্পন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ।  আবু সুফিয়ান কীভাবে ও কোন পরিস্থতিতে তাঁর আত্মসমর্পণের ঘোষণা করেছিলেন সে প্রসঙ্গে ড.গণি লিখেছেন   – “পরদিন সকালে হযরত মহম্মদ [দঃ] তাঁর তাঁবুতে দরবার বসালেন । যখন আবু সুফিয়নকে আনা হলো, তিনি বললেন, -‘আবু সুফিয়ান! দুঃখ তোমার জন্য! তোমার এখনও কি সময় হয় ন জানার – ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু’ ব্যতীত উপাস্য নেই ।’ ...          ...   ...  তাই আব্বাসের ভয় গেল না । কারণ আবু সুফিয়ান ছিলেন ইসলামের জাতশত্রু । এদিকে হযরতের প্রতি ওমরের প্রভাবও কম নেই । কোন দিন  আবু সুফিয়ানের প্রাণদন্ডের আদেশ হয়ে যায়    সুতরাং তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে আবু সুফিয়ানকে বললেন – ‘আপনি আপনার বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দিয়ে বলুন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি – আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । এবং মুহাম্মদ আল্লাহর দূত । নতুবা আপনার মাথা শরীর থেকে পৃথক হয়ে যাবে ।’  আবু সুফিয়ান তাই করলেন । এখানে লক্ষ্য করার বিষয় আবু সুফিয়ান  তাঁর দেহ, ধড় ও মাথাকে একত্রে রাখার জন্যই ইসলাম গ্রহণ করলেন ।”  [দ্রঃ প্রাগুক্ত, পৃ – ৩৩০] প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে প্রাণের ভয়েই মক্কার মানুষরা ইসলাম গ্রহণ করলেও সকলেই যে   সুড়সুড় করে তাদের  উপাস্য দেবতাদের বিগ্রহ সরিয়ে ফেলে দিয়ে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো তা কিন্তু নয় । মুহাম্মদ  তাদের বাধ্য করেছিলেন  আরাধ্য দেবতার বিগ্রহগুলি  তাদের বাড়ি-ঘর থেকে  অপসারণ করতে   কোরেশদের বাড়ি-ঘর থেকে তাদের দেবতাদের মূর্তিগুলি সরিয়ে  ফেলতে যে বাধ্য করা হয়েছিল  সে কথা  চেপে রাখতে পারেন নি ড.গণিও । তিনি লিখেছেন এ প্রসঙ্গে   – “খালেদের অনুপ্রেরণায় ও অনুরোধে  হযরত মক্কাতে ১৫ দিন অতিবাহিত করেছিলেন বাকি কাজগুলো সমাধা করার জন্য । তিনি নির্দেশ দিলেন কোন বিশ্বাসীর ঘরে কোন পুতুল বা মূর্তি থাকবে না  বা তারা রাখবে না । তখন কতকগুলো পাঠালেন ওইগুলিকে  দূর করতে বিনা রক্তপাতে[দ্রঃ, প্রাগুক্ত,  পৃ – ৩৩৭]  ‘বিনা রক্তপাতে’  মূর্তি অপসারণ ? কী হাস্যকর  সাফাই!
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে কাউকে  ক্ষমা নয় – এটাই যে  মুহাম্মদের  নীতি ছিলো তার বহু প্রমাণ রয়েছে কোরান ও হাদিসে ।  কোরানের ৯/৫ নং আয়াতটি ইতিমধ্যেই উদ্ধৃত করা হয়েছে । উক্ত আয়াতটি মুহাম্মদ আবৃত্তি করেছিলেন মক্কা বিজয়ের অব্যবহিত পরেইসেই আয়াতের একটি অংশে বলা হয়েছে যে, ‘ যদি তারা তওবা করে ও নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও ।’  একেবারে স্পষ্ট ও কথা স্পষ্ট নীতি – ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তবেই ক্ষমা, নচেৎ নয় এই নীতিটা কী তা আরো স্পষ্ট করে বাখ্যা করা হয়েছে উক্ত আয়াতটির তফসীরে । সেই তফসীরটি হলো  – “... হজরত বলিয়াছেন যে, অন্তরের তত্ত্ব ঈশ্বর জানেন, যাহারা বাহ্যে মুসলমান, তাহারা অন্য সকলের তুল্য আশ্রয় পাইবে । মোসলমানদের বাহ্যিক লক্ষণ এই নির্ধারিত, মূলমতে বিশ্বাস স্থাপন করা, পৌত্তলিকতাদি হইতে নিবৃত্ত থাকা, নমাজ পড়া ও যাকাত দান করা । যে ব্যক্তি নমাজ ও যাকাত হইতে বিরত, সে আশ্রয় পাইবে না ।”  [দ্রঃ কুরআন শারীফ, গিরিশচন্দ্র সেন, পৃ- ২০৫]   মক্কা বিজয়ের পরে আর একটি আয়াতে বলা হয়েছে – “মহা হজ্বের দিন আল্লাহ ও তাঁহার প্রেরিত পুরুষের পক্ষ হইতে মানব মন্ডলীর প্রতি বিজ্ঞাপন এই যে, আল্লাহ ও তাঁহার প্রেরিত পুরুষ অংশীবাদীগণের প্রত অপ্রসন্ন, পরন্ত যদি তোমরা বিদ্রোহীতা হইতে প্রতিনিবৃত্ত হও, তবে তাহা তোমাদের জন্য মঙ্গলকর, এবং যদি অগ্রাহ্য কর, তবে জানিও যে, তোমরা আল্লাহর পরাভবকারী নহ, যাহারা ধর্মদ্রোহী হইয়াছে, তাহাদিগকে হে মুহাম্মদ দুঃখকর শাস্তি সম্বন্ধে সংবাদ দান কর ।”  [সুরা মায়দা, ৯/৩]  এই আয়াতটি  কোন পরিপ্রেক্ষিতে সে কথা তফসিরে  উল্লেখ করা হয়েছে  সেখানে বলা হয়েছে – “মক্কা অঞ্চলের বহু সম্প্রদায়ের সঙ্গে হজরতের সন্ধি ছিল । মক্কা জয় হওয়ার এক বৎসর পর এইরূপ আজ্ঞা হইল যে, ‘কোন অংশীবাদীর সঙ্গে সন্ধি রাখিবে না, এই কথা হজ্বের দিন অর্থাৎ ঈদ কোরবানের প্রাতঃকালে সকলকে ডাকিয়া জ্ঞাত করিবে । কাফেরদিগকে অবকাশ দেও, তাহারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হউক, কিংবা মক্কা ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাউক, অথবা মোসলমান হউক ।” [দ্রঃ কুরআন শারীফ, গিরিশচন্দ্র সেন, পৃ- ২০৪]  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে গিরিশচন্দ্র সেনের এই পটভূমি বিশ্লেষণ তাঁর  নিজস্ব কল্পনা প্রসূত  নয় । তিনি কোরানের পারস্য-ভাষা পুস্তক ‘তফসীর হোসেনী’কে উদ্ধৃত করেছেন মাত্র । মুহাম্মমদ যে অমুসলমান কাউকে ক্ষমা করেন নি বা করতে চান নি তার প্রমাণ আমরা পাই হাদিসেও । শুধু মক্কা বা মদিনায় নয়, মুহাম্মদ মৃত্যুর প্রাক্কালে সমগ্র আরব উপদ্বীপ থেকেই অমুসলমানদের  বসবাস নিষিদ্ধ করার  আদেশ দিয়ে যান তাঁর সাহাবিদের    এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন যে মুহাম্মদ  মৃত্যু শয্যায় তাঁর  সাহাবিদের তিনটি কাজ সম্পাদন করার আদেশ দিয়ে যান ।   সেই কাজগুলির একটি  হলো  – “ কোন মোশরেক যেন আরবে থাকিতে না পায় ।”  [দ্রঃ মৃত্যুর দুয়ারে মানবতা, পৃ-১৬]  এই কথাটি  সকল সহিহ হাদিসেও আছে । মুসলমান ব্যতীত অন্যদের প্রতি যে মুহাম্মদ  ভয়ঙ্কর ক্রোধ পোষণ করতেন  ও তাদের প্রতি যে তিনি প্রবল প্রতিশোধপরায়ণ ও প্রতিহিংসাপরায়ণও ছিলেন সে সব  কথা তাঁর সাহাবীগণ  বহু হাদিসে বর্ণনা করে গিয়েছেন ।  সেই হাদিসগুলির মধ্যে  তিনটি হাদিস এখানে উদ্ধৃত করা হলো । হাদিসগুলি হলো – “... অতঃপর তিনি তার পেছনে মুআস ইবনে জাবাল [রাঃ] -কে পাঠালেন । যখন তিনি সেখানে পৌঁছালেন, তখন আবু মুসা [রাঃ} তারজন্য একটি গদি বিছালেন । আর বললেন নেমে আসুন । ঘটনাক্রমে তাঁর কাছে একজন লোক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ লোকটি কে ? আবুমুসা [রাঃ] বললেন, সে প্রথমে ইহুদী ছিল এবং মুসলমান হয়েছিল । কিন্তু সে আবার ইহুদী হয়ে গেছে । আবু মুসা {রাঃ] বললেন বসুন । মুআস [রাঃ] বললেন, না বসব না যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে । এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালা ।”  [বোখারী শরীফ, ১ম থেকে ৭ম খন্ড একত্রে, মল্লিক ব্রাদার্স, হাঃ নং ৩২৫৬]     দ্বিতীয় হাদিসটি   হলো – “... আলীর কাছে একদল নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীকে আনা হলো । তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন । এ সংবাদ ইবন আব্বাস [রাঃ] – এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি হলে তাকে পুড়িয়ে দিতাম না । কারণ নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিষেধ রয়েছে । তিনি বলেন  ... বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম । কেননা  নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর হুকুম রয়েছে, কেউ তার দ্বীন বদলে ফেললে তাকে তোমরা হত্যা করো । (দ্রঃ ঐ, হাঃ নং ৩২৫৫]  তৃতীয় হাদিসটি হলো আরো ভয়াবহ । সেটা এ রকম – “আনাস [রাঃ] বলেন যে, উকল গোত্রের আটটি লোকের একটি দল রাসূলে পাক [সাঃ] – এর নিকট উপস্থিত হয়ে দ্বীন ইসলামের উপর বায়-আয় গ্রহণ করলঃ কিন্তু তথাকার আবহাওয়া তাদের অনুকূল না হওয়ার কারণে তাদের দেহ পীড়িত হয়ে পড়ল । তারা এব্যাপারে রাসূলে পাক [সাঃ] – এর নিকট অভিযোগ পেশ করল । তিনি বললেন, তোমরা কি আমাদের রাখালদের সাথে গিয়ে উটের দুগ্ধ ও মূত্র পান করতে পারবে ? তারা বলল, অবশ্যই পারব । সয়ই তারা তাই করে সুস্থ হয়ে গেল । তারপর তারা উটের রাখালদের হত্যা করতঃ উটগুলো নিয়ে পালিয়ে গেল । এ খবর রাসূলে পাক [সাঃ] – এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদের পেছনে লোক প্রেরণ করলেন । তারা তাদেরকে পাকরাও করে নিয়ে এল । তাদের প্রতি শাস্তির নির্দেশ দেয়া হল । তাদের হাত-পা কর্তন করা হল । উত্তপ্ত লৌহ শলাকা চক্ষু কোটরে প্রবেশ করানো হল । তারপর তাদেরকে বেঁধে রৌদ্রের তাপে ফেলে দেয়া হল । শেষ পর্যন্ত তারা মৃত্যুমুখে পতিত হল । রেওয়াতকারী বলেন, অতঃপর তাদের চক্ষুগুলো উৎপাটন করা হল ।”  [মুসলিম শরীফ, ১-৮ খন্ড একত্রে, সোলেমানিয়া বুক হাউস, ঢাকা, হাঃ -৪২০৯]
ইসলামের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির কথা এখানে আলোচনা করা আবশ্যক  এই নীতিটি বুঝবার সুবিধার্থে প্রথমেই একটি হাদিসের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাক । হাদিসটি হলো – “নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তথায় তাশরীফ এনে আমাদের বললেন, ইহুদীদের মহল্লায় চলো । আমরা যাত্রা করলাম এবং তাদের একটি শিক্ষাগারে উপস্থিত হলাম । তথায় নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, শান্তি লাভ করবে । তোমরা বুঝে নাও এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহতালা  তথা তাঁর প্রতিনিধি রাসূল,  আমি তোমাদেরকে এ এলাকা থেকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা করেছি । অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্বীয় সম্পত্তি বেচে ফেলার সুযোগ পায় সে যেন তা বিক্রি করে ফেলে নতুবা একথা বাস্তবে পরিণত হবে যে, এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহতালা তথা তাঁর প্রতিনিধি রাসূল ।” (দ্রঃ ঐ, হাঃ নং ১০৮৯]   ইসলাম তথা মুহাম্মদের নীতিটি এখানে একেবারেই স্পষ্ট – পৃথিবীর মালিক আল্লাহ, সুতরাং পৃথিবীতে বাস করতে হলা আল্লাহর ধর্ম গ্রহন করতে হবে,  সবাইকে মুসলমান হতে হবে এবং আল্লাহর শাসন মেনে চলতে হবে । ‘হয় মুসলমান হও, না হয় এ ভুখন্ড থেকে  তোমরা চলে যাও’ এই হিটলারি আদেশ শুধু ইহুদিদের দিয়েই মুহাম্মদ ক্ষান্ত থাকেন নি । তিনি এই একই হুকুম একটার পর একটা পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের বাদশা-সম্রাটদেরও । যাঁরা তাঁর  হুকুম  শোনেন নি, - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শোনেন নি - তাঁদের  উপর  তিনি  সশস্ত্র  জিহাদ চাপিয়ে দিয়েছেন  সেই সব  জিহাদে  যেখানে জয় পেয়েছেন   সেখানকার অধিবাসীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার  হুকুম জারি   করেছেন । ফলে প্রাণ রক্ষার্থে ব্যাপকহারে বিধর্মীরা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছেযারা স্বধর্ম  পরিত্যাগ করতে কোনোভাবেই সম্মত হয় নি তাদেরকে জিম্মি [দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক] বানানো  হয়েছে এবং তাদের উপর চাপানো হয়েছে জিজিয়া করের বিশাল বোঝা মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরী খলিফাগণ ঐ একই নীতি অনুসরণ করেছেন । ফলে একদিকে যেমন  ইসলামি সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে, অপরদিকে তেমনি পাল্লা দিয়ে বিধর্মীদের মধ্যে  ধর্মান্তরের ঘটনাও  বৃদ্ধি লাভ করেছে   প্রায় অর্ধেক বিশ্বজুড়ে ইসলামি সাম্রাজ্যের  বিস্তার ও মুসলিম জনসংখ্যার  প্রসার এভাবেই সম্ভব হয়েছে । এখন বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলি সহ  সারা বিশ্বে যে সব  সন্ত্রাসবাদি কর্মকান্ড  চলছে তা ঐ নীতিরই অঙ্গ – অর্থাৎ আল্লাহর ভূখন্ডে আল্লাহর আইন  ছাড়া মানুষের আইন   চলতে পারে না  এটাই তো প্রকৃত ইসলাম । ইসলামের  দুটি ধারা -  একটি আধ্যাত্মিক এবং অপরটি  রাজনৈতিক রাজনৈতিক ইসলামই হলো প্রকৃত ইসলামএই ইসলাম হলো একটি সাম্রাজ্যবাদী ও সর্বগ্রাসী ধর্ম,  ইসলাম চায় সমগ্র বিশ্বকে পদানত করতে ।  ইসলামের গোড়ার দিকে  মুহাম্মদ ও তাঁর উত্তরাধিকারী খলিফাগণ সেই চেষ্টা করে গেছেন । এখন সেই অপচেষ্টা চালাতে চাইছে  অসংখ্য মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলি ।  এটা আল-কায়দা ও আইসিস [Islamic State of Iraq and Syria] – এর  কার্যকলাপ থেকে  স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । আল-কায়দার কর্মকান্ড শুধু  আফগানিস্তান ও পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ নেই, সারা বিশ্বেই তাদের সংগঠনের জাল ছড়িয়ে গিয়েছে ।  তারা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে  যে ভারতেও শাখা খুলবে । আইসিসও ঘোষণা করেছে যে তারা যে  ‘ইসলামি খেলাফত’ গঠন করেছে সেটা শুধু ইরাক ও সিরিয়ার জন্যে নয়, তাদের খলিফা আবুবকর আল-বাগদাদি হলেন সারা বিশ্বের মুসলমানদের খলিফা  আইএস [Islamic State] এও ঘোষণাও দিয়েছে যে পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানকেই বাগদাদির  খেলাফত [শাসন]  মেনে নিতে হবে ।  
ক্ষমা সম্পর্কে ইসলামের নীতি কী তা বুঝতে কোরান থেকে এবং  হাদিস  থেকে উপরে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে । কোরান আল্লার বাণী বলে কথিত । আসলে কোরানের কথাগুলো মুহাম্মদেরই কথা, তিনি আল্লাহর মুখে বসিয়েছিলেন যাতে মানুষ বিশ্বাস করে   ভালোভাবে লক্ষ্য করলে  দেখা  যাবে ক্ষমা  সম্পর্কে  আল্লাহর নীতি ও মুহাম্মদের নীতি অবিকল  একই রকমএই নীতির মোদ্দা কথা হলো – ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য কেবল মুসলমানগণ, অমুসলমানগণ নয় ।  যে কোনো প্রকার কুকর্ম ও অপরাধ করেও  মুসলমান ক্ষমা পাবে তারা যদি কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ [যুদ্ধ] করে, কিংবা  মক্কা ও মদিনা গিয়ে হজ্ব ক্রিয়া সম্পাদন করেঅমুসলমানদেরও সমস্ত  দুষ্কর্ম  ক্ষমা করে দেওয়া হবে তারা যদি স্বধর্ম পরিত্যগ করে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহ ও মুহাম্মদের উপর বিশ্বাস  স্থাপন করে । তা না হলে তাদের নরকের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে তা যতই তারা ভালো মানুষ হোক এবং যতই ভালো কাজ করুক । কোরানে এমন  দৃষ্টান্তও আমরা লক্ষ্য করেছি যেখানে  আল্লাহ ও তার রাসুলদের অমান্য ও অগ্রাহ্য করার জন্যে  অমুসলমানদের  বিভিন জাতিকে বিভিন্ন সময় সমূলে ধ্বংস ও বিনাশ করা হয়েছে  নানা  প্রকার প্রাকৃতিক  দুর্যোগ সৃষ্টি করে   মুহাম্মদও  তাই করেছেন । তিনি তো মানুষ, তাই তিনি জিহাদের পথ অবলম্বন বিধর্মীদের সমূলে ধ্বংস করেছেনবিধর্মিদের উপর  সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়ি-ঘর ও ধন-সম্পত্তি লুঠ করেছেন, তাদের বন্দি করে ক্রীতদাস বানিয়েছেন, তাদের উপর হত্যালীলা চালিয়েছেন , এবং তাদের স্বদেশ থেকে নির্বাসিত করেছেন । মক্কা  বিজয়ের পর তো তিনি এবং তাঁর উত্তরসূরীরা [খলিফাগণ]  ধনরাশি লুণ্ঠন ও  বিধর্মীদের ধর্মান্তরিত করার জন্যে বিশ্বজুড়ে  একটার পর একটা দেশে সশস্ত্র অভিযান করেছেন  এই পথেই  তাঁরা অর্ধেক বিশ্বে ইসলামি সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন   বিজিত দেশগুলিতে খলিফাগণ   ধনরাশি লুণ্ঠন করেছেন, শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন এবং  হাজার হাজার বিধর্মী নর-নারীকে ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী বানিয়েছেন এটাই হলো ইসলামের ইতিহাস ইসলামের বিজয়ের ইতিহাস মানে হলো বিধর্মীদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলার ইতিহাস ।
ক্ষমার অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে গোড়াতেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । কোরান এবং  হাদিস তথা মুহাম্মদের কথা ও কাজ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । সেই আলোচনায় যে ছবি ফুটে উঠেছে তাতে কোথাও কি ক্ষমার  চিহ্ন আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে  ? ক্ষমাশীল হতে গেলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন লোভ-লালসা, ক্রোধ ও ক্ষোভ, অর্থলিপ্সা ও ক্ষমতালিপ্সাকে কঠোরভাবে দমন করা; প্রয়োজন  হিংসা-প্রতিহিংসা এবং বিদ্বেষ ও প্রতিশোধস্পৃহাকে তীব্রভাবে ঘৃনা ও বর্জন করা । ক্ষমাশীল  হতে গেলে অবশ্যই হতে হবে সহনশীল ও ধৈর্যশীল এবং পরমতসহিষ্ণু । কোরান ও হাদিস আমাদের   যে বাণী ও ইতিহাস উপহার দিয়েছে তাতে  এ সব  গুণাবলী কোথায় ? নেই, কোথাও নেই । না আছে কোরানের  বাণীতে ও  রূপকথায়, না আছে মুহাম্মদের  জীবনে ও কর্মকান্ডে মুসলমান ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যে কিংবা  সংশয়াবাদী বা অবিশ্বাসিদের জন্যে ক্ষমা করার পক্ষে একটি শব্দও  নেই কোথাও । বরং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, হিংসা ও ঘৃণার রাশি রাশি কথা এবং তাদেরকে কঠিনতম শাস্তি প্রদানের ভুড়িভুড়ি কথা রয়েছে ইসলামের পাতায় পাতায়, ছত্রে ছত্রে । সুতরাং  ইসলাম একটি ক্ষমাশীল ধর্ম – এমন দাবী খুবই শিশুসুলভ ও  হাস্যকর ।










KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...