Sunday, June 29, 2014

রমজান মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটে সর্বাধিক


রমজান মাসকে নিয়ে পৌরাণিক গাথা
ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা’র উৎসব মুসলমানদের  সর্ব বৃহৎ উৎসব । রমজান মাসের শেষে আসে ঈদুল ফিতর, সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, এ ঈদের উৎসবের প্রস্তুতি চলে এক মাস ধরে ।  রমজান মাস ব্যাপী অর্থাৎ ৩০ দিন রোযা (সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্জলা উপবাস) রাখা মুসলমানদের নিকট বাধ্যতামূলক ।  তাই বলা হয় দীর্ঘ এক মাসের কঠিন উপবাস ব্রত পালন শেষে ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্যে বয়ে নিয়ে আসে অফুরন্ত খুশী । রমজান মাস নিয়ে শোনা যায় অনেক পৌরাণিক কাহিনী ।  এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছিল কোরান, এ মাসেই কোনো একদিনে মানুষের সারা বছরের বাজেট বা ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় আল্লাহ, এ মাসে কোনো একদিনের এবাদত (আল্লাহর উপাসনা করা) এক হাজার রাত্রির এবাদত অপেক্ষা অধিক উত্তম, এ মাসে সঠিকভাবে আল্লাহর এবাদত করতে পারলে এবাদতকারীর সব পাপ মাফ করে দেয় আল্লাহ,  এ মাসে শয়তানের পায়ে শিকল পরিয়ে তাকে বেঁধে রেখে দেওয়া হয় যাতে সে ঈমানদার মুসলমানদের বিপথে পরিচালনা করতে না পারে, ইত্যাদি, ইত্যাদি । রমজান ও রোযা সম্পর্কে এ ধরণের প্রচার বা দাবীগুলি মুসলমানরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ।
এ মাসে কিছু সামাজিক কর্মসূচী পালন করার নির্দেশ আছে ।  যেমন যারা ভিখারী বা অতিশয় দুঃস্থ তাদের  ফেতরা (একটা ন্যূনতম পরিমাণ অর্থা) দেওয়া বাধ্যতামূলক, যারা অর্থবান তাদের যাকাত (আয়ের একটা  সামান্য অংশ) দেওয়া বাধ্যতামূলক ইত্যাদি । এ মাসে কতকগুলি নৈতিক কর্তব্য পালনের বিশেষ নির্দেশ রয়েছে – যেমন, অন্যায় ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা, পরনিন্দা ও পরচর্চা থেকে বিরত থাকা, মিথ্যা কথা বলা ও প্রতারণা করা থেকে বিরত থাকা, অহঙ্কার-ক্রোধ-হিংসা প্রভৃতি দমন করা ইত্যাদি ইত্যাদি । এ সব কারণে  রমজান মাস একটি মহান ও পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য মুসলিমদের নিকট ।
তারা বিশ্বাস করে যে প্রতি বছর এ মাসটি মুসলমানদের সামনে এক বিরাট সুযোগ নিয়ে আসে যাতে তারা নিজেদের ভাগ্যকে ইহকাল ও পরকালের জন্যে সুন্দর করে নির্মাণ করে নিতে পারে এক মাস রোজাব্রত পালনের মাধ্যমে । তারা আরো বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ পবিত্র ও পূণ্যময় রমজান মাসকে আরো বহুগুন পূণ্যময় করে তুলেছে রোজা পালনের কর্মসূচী দিয়ে একমাত্র মুহাম্মদের সৌজন্যে । আসল ব্যাপারটা কিন্তু তা নয় ।  রোযা রাখার ধর্মীয় রীতি ইসলাম ধর্মের বহু আগে থেকেই চালু ছিলো আরবে, মুহাম্মদ সে রীতি ইসলামে প্রবর্তন করেন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা এ সব জানা সত্ত্বেও উন্মোচন করে না, কারণ, তাতে মুহাম্মদের উপর আরোপিত মর্যাদা ও গরিমা কিছুটা হ্রাস পাবে 
রমজান মাস নিয়ে যে সব দাবীগুলি করা হয় তার মধ্যে পৌরাণিক অংশটি বাদ দিলে ফেতরা ও জাকাত নিয়ে মুসলমানরা কিছুটা গর্ব করতেই পারে, কারণ গরীব মানুষদের কিছু অর্থ সাহায্য করা একটি  উত্তম কাজ । তাছাড়া একমাস সারা দিন নির্জলা উপবাস থাকা অবৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর হলেও এর আসল উদ্দশ্যটা যাই থাক কথিত উদ্দেশ্যটা মন্দ নয় । সেটা এজন্যে যে অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের ক্ষিদের জ্বালা কিছুটা  হলেও অনুভব করা সম্ভব হয় । এক মাস উপবাস থাকার কঠিন ব্রত পালন করাটা আত্মসংযমে্র ক্ষেত্রে যৎকিঞ্চিত হলেও  তা  কিছুটা সহায়ক হলেও হতেপারে ।  
 কিন্তু এতো হলো রমজান মাস ও রোজার বাহ্যিক রূপ । আসল যেটা ভিতরের রূপ সেটা তো আমাদের জানা অধিক জরুরী । আর ভিতরের রূপটাই আসলে আসল রূপ । পবিত্র রমজান মাসের ভিতরের ও বাইরের রূপটা কি একই ? নাকি ভিতরের রূপ আলাদা ? রমজান সত্যিই পবিত্র কী না তা জানা ও বোঝার জন্যে তার ভিতরের রূপটা জানা খুবই জরুরী । সেটা জানবার জন্যেই এ নিবন্ধের অবতারণা ।
সৌদি আরবে রমজান মাস
পবিত্র রমজান মাসের বাইরের ও ভিতরের রূপে কোনো পার্থক্য আমরা ভারতীয়রা তেমন বিশেষ একটা দেখতে  পাই না । শুধু ভারতে বলে নয়, মুসলমানেরা পৃথিবীর যেখানে  যেখানে সংখ্যালঘু সে সব জায়গা বা দেশের  ক্ষেত্রে কথাটা কমবেশি সমান প্রযোজ্য । তার ফলে আমাদের মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে রমজান মাসের ভিতরের রূপ হয়তো আরো ভালো বাইরে থেকে আমরা যা দেখি তার থেকে । কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটা তা নয় । রমজান মাসের ভিতরের একটা আলাদ রূপ আছে যেটা বাইরের রূপ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র । আর সেটাই আসল রূপ যেটা দেখতে পাওয়া যায় মুসলিম বিশ্বে । মুসলিম বিশ্ব আবার দুভাবে বিভক্ত । একটা  ইসলামি রাষ্ট্র ও আর একটা মুসলিম রাষ্ট্র ।  যে রাষ্ট্র শরিয়তি আইন অনুসরণ করে  সেটা ইসলামি রাষ্ট্র, আর যে রাষ্ট্র আধা গণতান্ত্রিক ও আধা শরিয়তি আইন দ্বারা পরিচালিত সেটা মুসলিম রাষ্ট্র । মুসলিম সমাজ এখন মতাদর্শগতভাবে  প্রবল অনৈক্যের কারণে বহু দল-উপদলে বিভক্ত তবে বিশ্বের সমগ্র মুসলিম সমাজ প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত, তারপর এক একটা ভাগ আবার বহু ভাগে বিভক্ত । প্রধান তিনটি ভাগ হলো – এক). সুন্নী, দুই). শিয়া এবং তিন). আহমদীয়া জামাত । তবে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজের প্রায় ৯০% সুন্নী মুসলমান । সুন্নীদের নেতা দেশ হলো সৌদি আরব এবং শিয়াদের ইরান । তদুপরি সৌদি আরবের মধ্যে মক্কা ও মদিনা অবস্থিত বলে সে দেশের প্রতি একটা আলাদা আবেগ ও শ্রদ্ধা রয়েছে মুসলমানদের ।  সে শ্রদ্ধা এতটাই আকাশচুম্বী যা ভাষায় প্রকাশ করা সাধ্যের অতীতসুন্নী মুসলমানদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আছে যারা সৌদি আরবকে তাদের মাতৃভূমি অপেক্ষা অনেক বেশী ভালোবাসে ও আপন মনে করে । মরুভূমির এ দেশের মানুষ প্রখর গরম ও দাবদাহের কারণে শরীরের সর্বাঙ্গ ঢাকা  ঢিলেঢালা পোশাক পরে । মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবীগণও স্বভাবতই সে রকম পোশাকই পরতেন । মুসলিমরা অধিকাংশই তা জানে না, তাদের বিশ্বাস ঐ পোশাক ছিলো আল্লাহ ও তার নবীর প্রিয় পোশাক । বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ আরবের সেই পোশাককে মুসলমানের পোশাক  বলেই ভাবেন । তাই তাঁরা নিজেরা ঐ  পোশাক কে তাঁদের নিজেদের পোশাক বানিয়ে ফেলেছেন , মাদ্রাসা-মক্তবের শিক্ষার্থীদের জন্যেও সেই পোশাকই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং সকল মুসলিমদের সেই পোশাক পরার জন্যে উপদেশ দিয়ে থাকেন ।  এক কথায় সৌদি আরবের প্রতি মুসলমানদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ, আস্থা ও আনুগত্য অপরিসীম । সেই সৌদি আরবে রমজান মাসের ভিতরের রূপটা আগে বোঝার চেষ্টা করবো । দু বছর পূর্বের অর্থাৎ ২০১২ সালের ঘটনা ।  সেবার রমজন মাস শুরু হয়েছিল  ২০শে জুলাই সেদিনই (অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে প্রথম রোজার দিনেই) একটি আদেশনামা  জারি করে সৌদি আরবের রাজা । আদেশনামাটি ছিলো  সমস্ত প্রবাসীদের (মুসলিম ও অমুসলিম)  জন্যে তাতে বলা ছিলো – রমজান  মাসে দিনের বেলায় অর্থাৎ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অন্নজল গ্রহণ ও ধূমপান নিষিদ্ধ । যারা এ আদেশ লঙ্ঘণ করবে তাদেরকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করা হবে । ঐ আদেশে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারী দেওয়া হয় যে, আদেশ লঙ্ঘণকারীদের সঙ্গে সৌদি সরকারের কাজের কোনো চুক্তি থাকলে তা আদেশ লঙ্ঘণের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল বলে গণ্য হবে । ওই আদেশের সূত্র ধরে সৌদি রাজার একজন মন্ত্রী প্রবাসী অমুসলিমদের  উদ্দেশ্যে বলেন যে, “সৌদি আরবে থাকতে হলে আপনাদের সকলকেই মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতি ও আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতীশীল  থাকতে হবে ।  আর তা শুধু মুখে প্রকাশ করলে হবে না, তার প্রকাশ ঘটাতে হবে যাতে মুসলিমরা তা স্পষ্ট বুঝতে পারে । তাই মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি-নীতি ও আচার-অনুষ্ঠাওগুলো আপনাদেরও পালন ও উদযাপন করতে হবে অন্যথায় এদেশ থেকে বহিষ্কারের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে ।”    

সৌদি রাজা ও তাঁর মন্ত্রীর আদেশ যে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী তা বলা বাহুল্য । আধুনিক বিশ্ব-ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রধান দুট স্তম্ভের উপর যার একটি গণতন্ত্র ও অপরটি ধর্মনিরপেক্ষতা । এ ব্যবস্থার অন্যতম একটা প্রধান নীতি হলো – প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনভাবে তার আপন বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচরণ করতে পারবে এবং এটা তার একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার । কারো উপর অন্য ধর্মমত জোর করে চাপানো যাবে না । এমনটি করা হলে বা করার চেষ্টা করা হলে তা হবে মানুষের একটি মৌলিক অধিকারের উপর অনধিকার হস্তক্ষেপ যা বেআইনী ও দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে । এ নীতিটির আর একটি দিকও আছে যা সমানভাবে স্বীকৃত ও অনুমোদিত । তা হলো – নাস্তিকদের ধর্ম বিশ্বাস না করার, ধর্মাচরণ না করার এবং ধর্মের সমালোচনা করার অধিকারে রাষ্ট্র বা ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠান তথা কেহই  হস্তক্ষেপ  করতে পারবে না । আস্তিকরা যেমন তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী কারো কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন না করে ধর্ম পালন করতে ও তাদের বিশ্বা্সের পক্ষে মত প্রকাশ করতে  পারবে,  নাস্তিকরাও তদ্রুপ তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালন  করা থেকে বিরত থাকতে এবং তাদের আপন বিশ্বাসের পক্ষে কথা বলতে পারবে । কোনো রাষ্ট্র বিধর্মী বা নাস্তিকদের উপর জোর করে কোনো ধর্মমত চাপিয়ে দিতে পারবে না । যদি এমনটা করা হয় তা মানবাধিকার লঙ্ঘণ বলে গণ্য হবে । সুতরাং এটা স্পষ্ট যে সৌদি রাজার উক্ত আদেশে স্পষ্টতঃই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে ।
সৌদি আরবের জনসংখ্যা দু’ কোটির কিছু কম । সে দেশে প্রবাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় তার অর্ধেক । এশিয়া থেকেই প্রায় আশি লক্ষ মানুষ সেখানে কর্মসূত্রে থাকেন । এছারা ইউরোপ মহাদেশ সহ  পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ  সেখানে থাকেন । প্রবাসীদের মধ্যে হাজার হাজার অমুসলিম তথা মুশরিকরাও আছেন । এই অমুসলিমদের স্ব স্ব ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার স্বাধীনতা নেই । স্বাধীনতা নেই মুসলিমদেরও ধর্মাচরণ না করার । যাদের হাড়ভাঙা খাটূনির বিনিময়ে  জীবিকা নির্বাহ করতে হয় এবং  তজ্জনিত কারণে মাসব্যাপী দিনভর উপবাস থাকা কার্যত অসম্ভব তাদেরও রোজা না পালন করার কোনো স্বাধীনতা নেই । আল্লাহর প্রিয়তম হাবিব (বন্ধু) মহানবীর জন্মভূমি ও মহাপূন্যভূমিতে আসলে অমুসলিম ও গরীব মুসলমানদের মানুষ বলে গণ্য করাই হয় না । তারা সকল প্রকার স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত । তাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারগুলি সৌদি রাজার পদতলে প্রতি মুহূর্তে পিষ্ট হয় ও হচ্ছে । সৌদি আরবে এভাবে অকল্পনীয়ভাবে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ও অমুসলিমদের উপর নিঃশব্দে রাষ্ট্রীয় পীড়ন চলে ।  পবিত্র রমজান মাসে এই পীড়ন চরম মাত্রায় পৌঁছয় । আর এটাই হলো পবিত্র রমজানের আসল রূপ দান-ধ্যান (ফেতরা-যাকাত) ও কঠোর উপবাসের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে আত্মশুদ্ধি করার পবিত্র ও মহান সাধনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে স্বৈরতান্ত্রিক, নির্মম-নিষ্ঠুর, অমানবিক ও আধিপত্যবাদী এক ভয়ঙ্কর রূপ  যা আমরা ভারতে বসে কল্পনাও করতে পারি না ।  
    
শুধ সৌদি আরবে নয়, সর্বত্র একই ছবি  
আমরা এদেশে যেভাবে রমজান ও রোজাকে দেখতে অভ্যস্ত এবং প্রতিনিয়ত রমজান ও রোজার যে মহিমার কথা শুনি ও পড়ি তাতে আমাদের পক্ষে বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে তার ভিতরের রূপটা এতো কুৎসিত ও ভয়ঙ্কর হতে পারে । ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতি-সৌহার্দের ধর্ম, দয়াশীল, ক্ষমাশীল ও উদারনৈত্যক এক ধর্ম, ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম – এ সব প্রচার নিরন্তরই আমরা শুনি । আমাদের তো এ কথাই প্রতিনিয়ত শোনানো হয় যে মুহাম্মদ পৃথিবীতে এসেছিলেন পৃথিবী থেকে যাবতীয় অশান্তি, হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ ও অন্ধকার দূরীভূত করতে । এরূপ প্রচার অক্লান্তভাবে করা হয় মোল্লা-মুফতি ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে আমরা যাই শুনি না কেন, কিংবা আমাদের যাই শোনানো হোক না কেন, তারজন্যে কিন্তু সৌদি আরবের বুকে ঘটা উক্ত ঘটনাগুলির বর্ণনার এক বর্ণও  মিথ্যে প্রতিপন্ন হয় না । আর এটাও ভাবলে ভুল হবে যে, উক্ত ঘটনাগুলি কেবল সৌদি আরবেই ঘটে কিংবা সেখানে যা ঘটে তবে তা সৌদি রাজার স্বৈরতান্ত্রিক খামখেয়ালি রাষ্ট্রীয় অত্যাচার মাত্র । প্রকৃত ঘটনা হলো এরূপ রাষ্ট্রীয় অত্যাচার, নিপীড়ন ও সন্ত্রাস চলে বিধর্মীদের উপর সারা বিশ্বজুড়েই মুসলিম দেশগুলিতে । ইসলামি রাষ্ট্রে হয় খোলাখুলিই, আন্তর্জাতিক সমস্ত নিয়ম-নীতি, ও আইন-কানুন এবং  শিষ্টাচারকে উপেক্ষা ও বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করেই, আর মুসলিম দেশগুলিতে হয় কিছুটা আড়াল-আবডাল রেখে,   গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালেপবিত্র মাহে রমজানে সমগ্র মুসলিম বিশ্বেই অমুসলিমদের উপর যেরূপ অমানবিক ধর্মীয় নির্যাতন ও সন্ত্রাস চলে  তা আমাদের দেশের মাটিতে বসে  কল্পনা করাও সম্ভব নয় । সেটা কিছুটা বুঝে নেবার জন্যে চোখ রাখবো অন্য দুটি দেশের  অভ্যন্তরে ।

আলজিরিয়ায় রমজান মাসে
আলজিরিয়া একটি ইসলামি রাষ্ট্র, বলবৎ রয়েছে শরিয়তি শাসন । দু বছর আগের একটি ঘটনা । রমজান মাস । নির্মাণ শিল্পের দু’জন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলো । একজনের নাম হোসেনি, আর অন্য জনের নাম সালেম ফেল্লাক, দু’জনেই খৃষ্টান । ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ - ওঁরা দুপুরে  খেয়েছিলেন । তাঁরা প্রচুর কান্নাকাটি করেছিলেন পুলিশের কাছে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্যে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, হুজুর আমরা প্রকাশ্যে সকলের সামনে বসে খায় নি, আড়ালে বসে চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়েছি । হুজুর, আমরা  ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছিলাম, কাজ করতে পারছিলাম তাই খেয়েছি, ইসলাম বা রমজান মাসের অপমান বা অবমাননা করার উদ্দেশ্যে আমরা খাই নি । এবারের মতো মাফ করে দিন হুজুর, আমাদের ছেড়ে দিন, আর কোনো দিন পবিত্র রমজান মাসে দিনের বেলায় অন্নজল গ্রহণ করবো না । না, পুলিশের মনে দয়ার উদ্রেক হয় নি । আদালতেও ওঁরা প্রচুর কান্নাকাটি করে দোষ কবুল করে ক্ষমা চেয়েছিলে বিচারকের কাছে , সেখানেও ক্ষমা পাই নি, ছাড়া পাই নিওঁরা গরীব মজদুর তো কী ? আল্লাহর আইন ভেঙছে – এত বড়ো দুঃসাহস !  একে তো আইন ভঙ্গকারী, তার উপর খৃষ্টান । খৃষ্টানরা আল্লাহর চোখে বিশ্বাসঘাতক, কারণ ওরা তো আল্লাহর কেতাব প্রাপ্ত হয়েও আল্লাহ ও তার নবীকে স্বীকার করে নি । ওদের তো ক্ষমা করা যায় না । আল্লাহ ওদের ক্ষমা করে নি, আল্লাহ বলেছে, “ ... খৃষ্টানরাও তাদের জন্যে প্রেরিত কথাগুলির একাংশ ভুলে গেছে । তাই কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগ্রত করে রেখেছি ।” (কোরান – ৫/১৪) খৃষ্টান ও ইহুদিদের প্রতি আল্লহ এতো বিরূপ ও রুষ্ট যে আল্লাহ বলেছে, “হে বিশ্বাসীগণ ! খৃষ্টান ও ইহুদিদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, ওরা পরষ্পরের বন্ধু । তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে, সে তাদেরই একজন হবে । আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথা পরিচালিত করেন না ।” (কোরান – ৫/৫১)
  বাংলাদেশে রমজান মাসে 
এবার চোখ রাখা যক আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলিম দেশগুলি সাধারণতঃ হয়ে থাকে আধা গণতান্ত্রিক ও আধা ইসলামিক । এ সব দেশের সংবিধান কিছুটা আধুনিক আইন আর কিছুটা ইসলামিক  আইনের সমন্বয়ে তৈরী । কিন্তু এ দেশগুলির অধিকাংশের ক্ষেত্রেই যা পরিলক্ষিত হয় তা হলো, বিধর্মীদের জন্যে সংবিধানে যে সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার প্রদান করা থাকে বিধর্মীরা  সেগুলি কখনই  ভোগ করার সুযোগ পায় না   সে রকম একটি দেশ হল বাংলাদেশ,আমাদের প্রতিবেশী দেশ ।
বাংলাদেশের সংবিধানে অমুসলিমদেরও ধর্মাচরণের অধিকার দেওয়া হয়েছে সংবিধান অনুসারে ধর্মীয়  সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মের কারণে অন্যায়-অত্যাচার করা যাবে না বা তাদের উপর ইসলাম ধর্মকে বলপূর্বক চাপানো যাবে না সে রকম কেউ করলে বা করার প্র্য়াস করলে তা হবে আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ । এ হলো  সংখ্যালঘুদের জন্যে সংবিধান প্রদত্ত রক্ষা কবচ ।  বাস্তব চিত্রটা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য রকম । সংবিধান  প্রদত্ত অধিকারগুলি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভোগ করার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না । উক্ত আইনী বিধানগুলি সংবিধানের শোভা বর্ধন করা ছাড়া সংখ্যালঘুদের কোনো কাজে আসে না । বরং বাস্তব চিত্রটা হলো এই যে, ওদের ধর্মীয় পরিচয়টাই ওদের জান-মালের কাছে  সব চেয়ে বড়ো বিপদের কারণ  । শুধু নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও  পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাওয়ার কারণে তাদের হামেশাই আক্রান্ত হতে হয়, ধর্ষিতা হতে হয়, খুন হতে হয় । অত্যাচারের হাত থেকে রাষ্ট্র বাঁচায় না, চেষ্টাও করে না । তাই অত্যাচারের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে জন্মভিটা ও জন্মভূমির মায়া কাটিয়ে  চিরদিনের জন্যে ভারতে পালিয়ে আসতে হয় । এসে নাগরিকত্বহীনতার জন্যে  সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের দয়া ও কৃপা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় । এ জীবন যেমন কষ্টের, তেমনই গ্লানি ও অপমানেরও । তবুও বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ভারতে আসা আজো অব্যাহতো আছে । এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে হ্রাস পাচ্ছে । কী হারে হ্রাস পাচ্ছে তা দেখলে গা শিউরে ওঠে ।  ভয়ঙ্কর সে ছবিটা এরূপঃ ভারত ভাগের আগে পূর্ব বঙ্গে (অধুনা বাংলাদেশ) হিন্দু জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৮.৩ শতাংশ, সেটা ২০১১ সালে এসে হয়েছে মাত্র ৮.৫ শতাংশ । বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ধারাবাহিকভাবে – ১৯৫১ সালে ২২ শতাংশ, ১৯৬১ সালে ১৮.৫ শতাংশ, ১৯৭১ সালে ১৩.৫ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ১২.১ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ১০.৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ৯.২ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৮.৫ শতাংশ । সারা বছর ধরে বাংলাদেশে অমুসলিমদের উপর, বিশেষ করে হিন্দুদের উপর শুধ ধর্মীয় কারণে সীমাহীন অত্যাচার ও নিপীড়ন-নির্যাতন চলে । অত্যাচার সংগঠিত করে মুসলিম মৌলবাদীরা । অত্যাচারের     উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে হিন্দুশুন্য তথা বিধর্মীশুন্য করা । একটাই লক্ষ্য, একটাই শ্লোগান – হয় মুসলমান হও, না হয় দেশান্তরী হও । না, বানানো কোনো অভিযোগও নয়, বা অতিরঞ্জিত বর্ণনাও নয় । বাংলাদেশের কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরাই এর বিরুদ্ধে বারবার সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা এ তথ্য ও বর্ণনা দিয়েছেন ।  ধর্ষণকে একটা হাতিয়ার করেছে মুসলিম মৌলবাদীরা যাতে হিন্দুরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় – এ কথা  ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন লিখেছেন কয়েক বছর আগে কলকাতার একটি কাগজে । ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার ও নির্যাতন সংগঠিত হয়েছিল তার তথ্যবহুল বর্ণনা  রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ গ্রন্থে । সারা বছর হিন্দুদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলে তা রমজান মাসে আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে ।
সংবিধানে যাই লেখা থাকুক, বাংলাদেশের অলিখিত আইন হলো, রমজান মাসে দিনের বেলা সমস্ত খাবার দোকান বন্ধ রাখতে হবে । এই আইন মুসলিম, হিন্দু ,খৃষ্টান, বৌদ্ধ ধর্ম সহ সকল  ধর্মের মানুষের  জন্যে প্রযোজ্য অমুসলিমরা যদি এই আইন ভঙ্গ করে তবে  তাদের বেলায় কড়া মাসুল গুণতে হয় অনেক বেশী । এই হলো পবিত্র রমজান মাসের অপার মহিমা । হিন্দু বা অন্য কোনো অমুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষরা তো দিনের বেলা  নিজের বাড়ির দোকানটাও খুলবার কথা কল্পনা করতে পারে না । তারা দিনের বেলায় তাদের নিজস্ব ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করতে পারে না । পারে না প্রকাশ্যে সশব্দে ধর্মীয় মন্ত্র উচ্চারণ করতে, মাইক ব্যবহার করার কথা তো কল্পনাও করতে পারে না ।  রমজান মাসে সকল অমুসলিমদের জেলবন্দী অপরাধীর মতো অসহায় ও অপমানকর জীবন যাপন করতে হয় তাদের ।  ‘বাঙলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্তর্জালা’ নিবন্ধে ঢাকার একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার সে দেশে সেই অপমানকর জীবন-যাপনের  এক টুকরো  চিত্র তুলে ধরেছেন । তিনি লিখেছেন,  “২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছিলো । অসংখ্য হিন্দু নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছিল আওয়ামি লিগকে ভোট দেওয়ার অভিযোগে । ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে অনেক । অনেকে দেশত্যাগ করে আত্মরক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন । ... সরকারের অবস্থানটা ছিল তখন সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের পক্ষে ।’’  তিনি আরো লিখেছেন , “ এটা একটা বাস্তব সত্য যে, হিন্দুদের দেশত্যাগ করানোর জন্য মানসিকভাবে সব সময় তাদের চাপের মধ্যে রাখার জন্য বিশেষ গোষ্ঠী বা মহল সক্রিয় আছে । সরকার তাদের মদত দিয়ে থাকেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন । ’’ এ অত্যাচার চলে সারা বছর ধরে যা রমজান মাসে ধর্মের দোহায় দিয়ে আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে । সে অত্যাচার যতটা  শারিরীক তার চেয়ে অনেক বেশী মানসিক ।  সেটা কিরূপ তার কিঞ্চিত ছবি ফুটে উঠেছে বিভুরঞ্জনের কলমে । তিনে লিখেছেন ওই নিবন্ধে, “এ বছর হিন্দু ও মুসলমানদের দুটো ধর্মীয় পরব পড়েছিলো এক সঙ্গে । রোজা ও দুর্গা পূজা । বাংলাদেশ সরকার বেশ জোর গলায় প্রচার করেছে যে, এবার অভূতপূর্ব সম্প্রীতির মধ্যে দুই সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে এক নতূন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । ’’ সরকারের এ দাবীকে খন্ডন করে তিনি লিখেছেন, ‘রোযা-পূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে কিন্তু তারজন্যে বড় ছাড় দিতে হয়েছে হিন্দুদের । কোথাও এবার উৎসবের পরিবেশে পূজা হতে পারেনি, হয়েছে শোকের পরিবেশে । ডাক-ঢোল, শঙ্খ, উলুধ্বনি না হলে আবার পূজা কী ? সন্ধ্যা আরতির সময় যদি কাঁসর ঘন্টা না বাজল তাহলে হিন্দুদের পূজা হয় কীভাবে ? কেবলে নীরবে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে যদি পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে তাতে ভক্তদের আনন্দ উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটে না । এবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোথাও ঢাক-ঢোল, শঙ্খ বাজানো যায় নি । বাজানো হয় নি মাইক । রোজার পবিত্রতা রক্ষার জন্যে এই বিধান কার্যকর হয়েছিল । কিন্তু পূজা উপলক্ষে কি কোথাও মাইকে আযান প্রচার বন্ধ করা হয়েছিল ? হিন্দুদের নিঃশব্দে পূজা করতে বাধ্য করে বাইরে সম্প্রীতির এক ধরণের পরিবেশ দেখানো যায়, কিন্তু ভিতরের ভাঙন তাতে রোধ হয় না
সমগ্র মুসলিম বিশ্বে, কি ইসলামি রাষ্ট্রে কি মুসলিম রাষ্ট্রে, এই চিত্র কমবেশী একই থাকে ।  নিবন্ধটি লেখা শেষ করতে যাবার আগে (২৮.০৬.১৪, শনিবার) আরব আমির শাহির একটা খবর আচমকাই নজরে এসে গেলো ।   খবরটিতে ঐ একই কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ অমুসলিমর’ দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অন্ন-জল স্পর্শ করতে পারবে না । খবরটি উদ্ধৃত করা যাক - The UAE's Ramadan Moon Sighting Committee has announced that the holy month of Ramadan will begin on Sunday. ... It is when Muslims fast between sunrise and sunset; fasting is one of the Five Pillars of Islam.
Non-Muslims also must refrain from eating and drinking in public  খবরটি ছেপেছে arabia.Business.com.

রমজান মাসে অমুসলিমদের উপর সরকারের  সৌদি আরবের মতো কিছু দেশে সংবিধানগতভাবেই অমুসলিমদের কোনো প্রকার অধিকার দেওয়া হয় না । অমুসলিমদের অপবিত্র ও অবিশ্বাসযোগ্য এবং সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট গণ্য করে সংবিধান থেকেই তাদের ছেঁটে ফেলে দিয়ে কোরানের নির্দেশগুলি অক্ষর অক্ষরে পালন করা হয়েছে । তাইতো আজো অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয় না সৌদি আরব । এমনকি সে দেশের বহু স্থান এখনও আছে যেখানে পবিত্রতা নষ্ট হবে বলে অমুসলিমদের প্রবেশ করতে দেয়য়া হয় না । সে দেশে মন্দির, গীর্জা, গুরুদ্বার প্রভৃতি বিধর্মীদের কোনো প্রকার উপাসনালয় নির্মাণ করতে দেওয়া হয় না । অনুমতি নেই বিধর্মীদের ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করারও ।  এভাবে প্রকাশ্যে ঢাক-ঢোল পিটিয়েই আধুনিক বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ আইন-কানুনসমূহ এবং বিধর্মীদের সমস্ত মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারগুলি লঙ্ঘণ করা হয় ।  অপরদিকে মুসলিম দেশগুলির অবস্থা একটু স্বতন্ত্র । তারা কিছুটা চালাকির আশ্রয় নিয়ে থাকে । সংবিধানে বিধর্মীদের জন্যে স্ব স্ব ধর্মাচরণের অধিকার সহ অনেক অধিকারই দেওয়া হয় । কিন্তু এগুলো বাসবে বিশেষ কার্যকরী করা হয় না ।  কার্যতঃ সেগুলি সংবিধানের শোভাবর্ধকের ভূমিকা নিয়ে সংবিধানেই মৃতবৎ পড়ে থাকে । তাই এটাই প্রকৃত চিত্র যে মুসলিম দেশগুলি আজো অমুসলিমদের জন্যে বসবাসের অনুপযুক্ত রয়েই গেছে । যার ফলশ্রুতিতে  সে সব দেশে অমুসলিম জনসংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাসমান । মোটের উপর  মূল কথাটা হলো মুসলিম বিশ্বে অমুসলিমদের অবস্থা বড়োই করুণ । অমুসলিমদের স্বাধীনতা, সমানাধিকার এবং মান-মর্যাদা দেওয়া তো দূরের কথা, মুসলিম বিশ্ব তাদের জান-মালের দায়িত্ব নিতেও কুন্ঠিত ও অপরাগ । আর পবিত্র রমযান মাস ও ঈদের উৎসবে তাদের দূরাবস্থা হয়ে ওঠে আরো দুঃসহ । কী করা যাবে, অবিশ্বাসীদের তো এটুকু সহ্য করতেই হবে, রমজান ও ঈদের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্যে ঈমানদার মুসলিমদের  তো এটুকু করতেই হয়, এ যে মহান সৃষ্টিকর্তা ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও তারা পিয়ারা নবীর হুকুম ।






KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...