Wednesday, June 4, 2014

‘বোকো হারাম’ প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ও মুহাম্মদকে প্রতিনিধিত্ব করে



এই এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নাইজেরিয়ায় একটি ভয়ঙ্কর অপহরণের ঘটনা ঘটে। একটি মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন একটি স্কুলে হানা দিয়ে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অল্প কিছুদিন পর অতিশয় ঘৃণ্য এই অপহরণের ঘটনাটির দায় স্বীকার করে সেই সংগঠনটি। তখন থেকেই সংগঠনটির নাম সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। ভারতের প্রচার মাধ্যম এ সব ঘটনা যে উদ্দেশ্যেই হোক (প্রধানতঃ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সন্তুষ্ট রাখতে) চেপে যায়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নি। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে এখন কোনো ঘটনাই আর চেপে রাখা সম্ভব নয়। ফলে উক্ত ঘটনাটি  এবং সংগঠনটির খবর ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সংগঠনটির নাম ‘বোকো হারাম’। ঘটনার দায় স্বীকার করে সংগঠনের প্রধান আবুবকর শেকাও ভিডিও রেকর্ডিং করে সরকারকে বলেছে, ‘আমি তোমাদের স্কুল-ছাত্রীদের অপহরণ করেছি। এবং আল্লাহর হুকুমে আমি ওদের বাজারে বিক্রী করে দেবো’। মে মাসে ৫ তারিখে সেই ভিডিও রেকর্ডিংটি World Nigeria প্রকাশ করেছে। তার বয়ান হলো - “I abducted your girls,” Abubakar Shekau said in the video, obtained by Agence France- Presse. “I will sell them on the market, by Allah.” ‘বোকো হারাম’ প্রধান ওই ভিডিওয় সরকারকে বলেছে  তাদের যে সব নেতা কারাগারে  বন্দী আছে তাদের  মুক্তি দিলে তারা অপহৃত স্কুলছাত্রীদের মুক্তি প্রদান করতে প্রস্তুত আছে।
জঘন্য এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই গোটা বিশ্বজুড়েই মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল  থেকে দাবী করা হচ্ছে যে ঐ ঘটনার সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্ক নেই, ইসলাম ধর্ম এমন ঘটনার অনুমতি দেয় নি এবং যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা আসলে মুসলমানই নয়, তারা মুসলমান সমাজ ও ইসলামের কলঙ্ক। এ দাবী শুধু মুসলমান সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল থেকেই করা হচ্ছে তা  নয়, অমুসলিমদের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে। ফলে গোটা বিশ্বজুড়েই সাধারণভাবে একটা ধারণা বা বিশ্বাস তৈরী হয়ে যাচ্ছে যে সত্যি সত্যিই ‘বোকো হারাম’ যা ঘটিয়েছে তার দায় তাদেরই, ইসলামের নয়। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি ইসলামি সন্ত্রাসবাদী ঘটনার ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটছে।  যখনই এ রকম কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় তখন শুধু এরূপ  দাবী করাই হয় না, তার সাথে সাথে এও দাবী করা হয় যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে হাতিয়ার করে ইসলাম একটি সন্ত্রাসবাদী ধর্ম এরূপ প্রচার করা হয় ইসলাম-বিদ্বেষীদের (ইহুদী-খ্রিষ্টান-হিন্দু ইত্যাদি) পক্ষ থেকে ইসলামকে হেয়, অপমান ও অপদস্থ করার জন্যে। তাঁদের দাবী - এ সব প্রচার আসলে ইসলামকে শেষ করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বৈ নয়।  
মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে যে দাবী করা হচ্ছে তা যদি যথার্থই হয়, তবে দুটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে যার উত্তর পাওয়া খুবই জরুরী। প্রশ্ন এক – ইসলামের  অবস্থান যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে থেকে থাকে তবে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়তই  মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যখন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠিত করে ব্যাপক হত্যাকান্ড সংগঠিত করে তখন তার বিরুদ্ধে মুসলমানরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে না কেন? ইসলাম সন্ত্রাস ও হিংসাকে সমর্থন ও অনুমোদন করে না বলে মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা শুধু একটা দায়সারা বিবৃতি দিয়ে চুপ থাকে কেন? প্রতি শুক্রবার মসজিদে যে জুম্মার নামায  হয় সেখানে প্রচুর মুসলমান সমবেত হয়ে একসঙ্গে নামায আদায় করেন, তখন ঐ সময় ইমাম যে খুতবা (ধর্মীয় ভাষণ) দেয় তাতে সন্ত্রাসবাদী কোনো হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নিন্দা ও প্রতিবাদ থাকে না কেন? কেন সে দিন মসজিদ থেকে যারা সন্ত্রাস ও হিংসা ছড়াচ্ছে, অপহরণ করছে, শ’য়ে শ’য়ে মানুষ হত্যা করছে, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস না হয় লুটপাট করছে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার ডাক দেওয়া হয় না? প্রশ্ন দুই – মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সারা দুনিয়ায়। বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সদস্য সংখ্যাও। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের আক্রমণ ও আঘাত করার শক্তি এবং   সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপও।  ইসলামের সমর্থন ও অনুমোদন ব্যতীরেকে সন্ত্রাসবাদীদের এত বাড়-বাড়ন্ত কীভাবে সম্ভব? যারা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে দিনের পর দিন শত শত  মানুষ হত্যা করে তারা তো শুধু অন্যদের  হত্যাই করে না, তারা নিজেরাও আহত হয় ও নিহত হয়। অনেককেই  সারাজীবন কারাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, আবার অনেককেই ফাঁসীর দড়িতে  মৃত্যুবরণও করতে হয়।  দুর্নিবার কোনো আদর্শের আহ্বান ব্যতীত কিংবা  বিনিময়ে বিরাট কিছু প্রাপ্তির প্রলোভন ব্যতীত কেউ এভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্যে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পারে? এ সব প্রশ্নগুলি সুচতুরতার সঙ্গে  এড়িয়ে যায় ওই বুদ্ধিজীবীরা যারা দাবী করে ইসলাম সর্বদায় হিংসা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শান্তি ও মানবতার পক্ষে কথা বলে।
‘বোকো হারাম’ ও ‘তালিবানে’র মধ্যে আদর্শগত কোনো পার্থক্য নেই। তিন-চার বছর আগে তালিবানরা পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইকে মাথায় গুলি করেছিলো যখন সে বাড়ির পথে স্কুলবাসে উঠেছিল। তার অপরাধ ছিল সে নিজে লেখাপড়া করতে চেয়েছিলো এবং সমস্ত মুসলিম মেয়েদের লেখাপড়ার পক্ষে ওকালতি করেছিলো। তালিবানরা  ফতোয়া দিয়েছিলো, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না এবং মেয়েদের সমস্ত স্কুলগুলি বন্ধ করতে হবে। ‘বোকো হারাম’-এর শিকার হলো সেই মেয়েরাই যারা লেখাপড়া করতে চায়, শিখতে চায় ও জ্ঞান অর্জন করতে চায়। ‘বোকো হারাম’ ও ‘তালিবান’দের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বা নিশানা মেয়েরা যারা স্কুল যায়। কেন ? এটা কি কাকতালীয় ঘটনা মাত্র? মোটেই না। নারী লেখাপড়া করবে, জ্ঞান অর্জন করবে, স্বাধিনতা চাইবে, সমানিধিকার চাইবে – এমনতর চাওয়া প্রকৃত ইমানদার (বিশ্বাসী) মুসলমানের কাছে  চূড়ান্ত অসহ্য ও চরম ঘৃণার বিষয়। ‘বোকো হারাম’ সেই নীতিতে বিশ্বাসী যে নীতি হলো মেয়েরা ঘরের মধ্যে বন্দি থাকবে, আর একান্তই যদি ঘরের বাইরে যাওয়া অপরিহার্য হয় তবে একজন পুরুষ অভিভাবকের সাথে বোরখাবৃত হয়ে যাবে। তাদের এই চাওয়াটা তাদের নিজেদের তৈরী করা কোনো বিধান বা সংবিধান নয়। কোরানের ৩৩/৩৩ নং আয়াতে ইসলাম নারীদের উদ্দেশ্যে ঠিক এই আদেশই প্রদান করেছে। কোরানের সেই ভাষ্যটি হলো –   তোমরা আপন গৃহ সকলে স্থিতি করিতে থাকো এবং পূর্বতন মূর্খতার বেশ-বিন্যাসের ন্যায় বেশ-বিন্যাস করিও না,  ... এবং ঈশ্বর ও তাহার প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করো ...।” এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে,  মেয়েদের স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়া সন্দেহাতীতভাবেই কোরান তথা আল্লাহ তথা মুহাম্মদ তথা ইসলামের আদেশ ও আইনের উল্লঙ্ঘন। বোকো হারাম ও তালিবানদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু তাই সেই মেয়েরা যারা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে এবং বোরখা ব্যতীতই স্বাধীনভাবে বাড়ির  বাইরে  চলাফেরা করে। ‘বোকো হারাম’ তাই যখন স্কুলছাত্রীদের অপহরণ করে সেটা তাদের সংগঠনের আদর্শগত  বা ইসলামের আদর্শগত কর্মসূচীকেই রুপায়ণ করে।  ‘বোকো হারাম’ অবশ্য শুধু নারী শিক্ষাকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে না, তারা পাশ্চাত্য শিক্ষাকেই নাইজিরিয়ায়  নিষিদ্ধ করতে চায়।   ‘বোকো হারাম’-এর বাংলা অর্থ হলো, ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’।  ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’ অপেক্ষা ‘অমুসলিম শিক্ষা নিষিদ্ধ’ এই নামটা হলেই বরং  অধিক যথার্থ হতো।
বোকো হারামের  জন্ম ২০০২ সালে। গোঁড়া ইসলামপন্থী অল্প বয়সী এক তরতাজা যুবক মহম্মদ ইউসুফ ছিলো এর প্রতিষ্ঠাতা। মূল উদ্দেশ্য ছিলো নাইজিরিয়ায় ইসলামি রাষ্ট্র তথা কোরানের শাসন কায়েম করা। সেই লক্ষ্যে জিহাদ করার জন্যে এর জন্ম। সে স্থাপন করেছিল একটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে ছিলো একট মসজিদ ও একটি ইসলামি স্কুল।  সেই স্কুলে ও মসজিদে জিহাদের পক্ষে আলোচনা করা হতো ধারাবাহিকভাবে যেখানে প্রধানত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা নিয়মিত আসা হত। সরকার এটা জানতে পেরে ২০০৯ সালে সেখানে হানা দেয়। তখন ইউসুফ বাহিনী পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৭০০ জন মারা যায় এবং ইউসুফ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরে জেল থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ইউসুফের মৃত্য ঘটে। ইউসুফের মৃত্যু হলেও সে কাজের কাজটি করে যেতে সক্ষম হয়েছিল। জিহাদের যে চারাটি রোপণ করেছিলো সেটা তার মৃত্যুর আগে ততদিনে একটি বৃক্ষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। ইউসুফের পর বোকো হারামের হাল ধরে তারই যোগ্য শিষ্য আবুবকর শেকাও।
মুহাম্মদের সময়ে জিহাদ করা এবং তাতে জয়যুক্ত হওয়া কঠিন থাকলেও অসম্ভব ছিলো না। এখন জিহাদ করা অনেক বেশি কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেহাদে সাফল্য অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব। এখন জেহাদে অংশ নেওয়ার অর্থই হচ্ছে অবধারিতভাবে প্রাণ উৎসর্গ করে দেওয়া। লাদেনের মতো বিশাল ধনী ও পরাক্রমশালী জেহাদীও নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে মুজাহিদের (যারা জেহাদ করে) খাতায় নাম লেখানো মানে তাই নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। তথাপি দলে দলে মুসলিমরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সগঠনে ঢুকে মুজাহিদের খাতায় নাম লিখাচ্ছে এবং একদিকে হত্যাকান্ড সংঘটিত করছে অপরদিকে অকাতরে প্রাণও দিচ্ছে। মানুষের কাছে সর্বাধিক প্রিয় হচ্ছে তার প্রাণ, কোনো মানুষই মরতে চায় না। তাহলে মুসলিমরা দলে দলে প্রাণ বিলানোর খেলায় মেতে উঠছে কেন? এর উত্তর পাওয়া মোটেই কঠিন নয়। যারা ঐ খাতায় নাম লেখাচ্ছে তারা সাধারণ মুসলমানদের মতো ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ নয় কিংবা ইসলাম জানা বিজ্ঞ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মতো ভন্ডও নয়। তারা  ইসলাম জানা সত্যিকারের মুসলমান। তবে তারা যুক্তিবুদ্ধিহীন গোঁড়া মুসলমান। কোরান ও হাদিসের পাতায় পাতায় ছত্রে ছত্রে যা লেখা আছে তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। শুধু বিশ্বাস করলে ইমানদার মুসলমান হওয়া যায় না, কোরান ও হাদিসের বিধি-নিষেধ জীবনের প্রতি পদক্ষেপে অনুসরণ করতে হয়। তারা সেটাই করে। কোরান বলছে প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে জিহাদ ফরজ (অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। না করলে মর্মন্তুদ শাস্তি দেবে আল্লাহ। কোরানের ভাষ্যটি এ রকম -  যদি তোমরা জিহাদে বের না হও, তবে আল্লাহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবে। (৯/৩৯) তার আগে আল্লহ জিহাদ-বিমুখ মুসলমানদের তিরস্কার করছে এভাবে – তোমাদের কী হয়েছে যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে জিহাদে যেতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে জমিনে ঝুঁকে পড়ো? তবে কী তোমরা পরলোকের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে তুষ্ট হয়েছ? (৯/৩৮) জিহাদ করলে   সব পাপ মাফ হয়ে যাবে এবং পাওয়া যাবে বেহেস্ত (স্বর্গ)। জিহাদে জয় পেলে গাজী, মরলে শহীদ। গাজী ও শহীদ উভয়ের জন্যেই রয়েছ পরলোকে সর্বোচ্চ পুরস্কার বেহেস্ত। এ প্রসঙ্গে কোরানের ভাষ্যটি হলো – “জিহাদ অংশ গ্রহণ করলে, সে মরুক বা বাঁচুক তাকে মহা পুরষ্কার দেওয়া হবে।” (৪/৭৪) আর বেহেস্তে থাকবে মদ ও নারীর (৭২ জন চির কুমারী স্বর্গীয় উর্বশী) ছড়াছড়ি। শুধু এই দুটিই নয়, এরূপ অসংখ্য ভাষ্যের (আয়াতের) সমারোহ রয়েছে কোরান ও হাদিসে। হয় জাহান্নামের (নরক) শাস্তির ভয়ে, আর না হয় অনন্তকাল ব্যাপী বেহেস্তের ভোগ সর্বস্ব জীবনে প্রলুব্ধ হয়ে ধর্মান্ধ মুসলমানরা দলে দলে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে নাম লেখাচ্ছে।  
মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা গলা চড়িয়ে বলছে ইসলামের বিচারে  নারী অপহরণের মত ঘটনা চরম ঘৃণ্য। ভয়ংকর মিথ্যা দাবী। ইসলাম বলছে জিহাদে সবকিছুই বৈধ তা যতই নির্মম বা অমানবিক হোক। ইমাম আল গাজ্জালি বলেছেন,  ‘ দুর্গের ভিতরে যদি নারী ও শিশুরাও থাকে তবুও তাদের ভিতর ভারী পাথর ও তীর নিক্ষেপের যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের পুড়িয়ে বা ডুবিয়ে মারা যেতে পারে।’ ইমাম গাজ্জালী সম্পর্কে বলা হয় যে, মুহাম্মদের পর যদি কাউকে আল্লাহ নবী করে পাঠাতো তবে ইমাম গাজ্জালীকেই পাঠানো হতো একজন প্রখ্যাত ইসলামি পন্ডিত আহমদ ইবন নকিব আল-মিসরী ১৩৬৮ সালে The Reliance of the Traveller: A Classic Manual of Islamic Sacred Law নামে একটি বই লেখেন,  তাতে ইসলামে যুদ্ধনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বইটির ইংরাজী অনুবাদ করেন নুহ হামিম কেলার ১৯৯৪ সালে। যুদ্ধনীতির অধ্যায়ে সেখানে লেখা হয়েছে - “O.913 When a child or a woman is taken captive, they become slaves by the fact of capture, and the woman’s previous marriage is immediately annulled.” মুহাম্মদ নিজেও অনেক জিহাদে অংশ নিয়েছেন ও নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তাঁর জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এরূপ ভুরিবুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে বিধর্মীদের নারী ও শিশুদের বন্দি করে নিয়ে এসে ক্রীতদাস ও দাসি বানিয়েছেন, তারপর তাদের মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। তিনি তাঁর নিজের অংশের  নারীদের নিজে ভোগ করেছেন অথবা বিক্রী করে দিয়েছেন।  কোনো সংশয় নেই যে,  মুহাম্মদ কৃত ঐ সব ঘটনার তুলনায় বোকো হারাম কৃত উক্ত ঘটনাটি অতিশয় তুচ্ছ।
তাই  এটা সন্দেহাতীত যে বোকো হারাম যা করেছে ও বলেছে তা ইসলাম-সম্মতই। যারা বলছে বোকো হারাম কিংবা অন্যান্য মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ইসলাম-বিরোধী কাজ করছে তারা হয় ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ না হয় ভন্ড। তবে ভন্ডদের সংখ্যা মোটেই কম নয় এবং তারা ক্রমবর্ধমান। তারা মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের চেয়ে মোটেই খুব কম ক্ষতিকর নয়। কারণ,  ক্রমাগত  মিথ্যা প্রচার করে তারা ইসলামকে মহান ধর্ম বলে যেভাবে তুলে ধরছে তাতে ইসলামের প্রতি সাধারণ মুসলমানরা আরো বেশী বেশি করে মোহগ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে পরোক্ষভাবে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতই শক্তিশালী হচ্ছে। ইসলাম আসলে যা, ঠিক সেভাবেই ইসলামকে তুলে ধরা হলে তবেই মুসলিমদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে যে মিথ্যা মোহ রয়েছে তার অবসান হবে এবং মুসলিম সমাজ থেকেই তখন ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হবে। আর এ কাজে সবচেয়ে বেশী অন্তরায় সৃষ্টী করছে ওই ভন্ড মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...