Saturday, March 15, 2014

মক্কা মদিনার মাটিতে মৌলবাদী মুসলমানদের প্রাণের সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নিষিদ্ধ


সৌদি আরব ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে নিষিদ্ধ করলো
সৌদি আরবের সঙ্গে কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী মুসলিম সংগঠনগুলির বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলে আসছিলো অবশেষে তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলো   সৌদি আরব কয়েকদিন আগে (৭ই মার্চ’১৪) ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ সহ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো  ফলে এবার তাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো সরাসরি সংঘাত, যাকে বলে একেবারে সম্মুখ সমরে এবার দুই প্রবল পরাক্রান্ত যুযুধান শক্তি অন্যান্য নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি হলো ‘হামাস’, ‘নুসরা ফ্রন্ট’  ও ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভ্যান্ট’ এই সংগঠনগুলির সদস্যরা, বিশেষ করে  নুসরা ফ্রন্ট ও ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভ্যান্ট – এর সদস্যরা এখন সিরিয়ায় বাসার আল আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই তথা ‘পবিত্র’ জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছে মিশরেও তারা এখন এই ‘পবিত্র’ জেহাদের নামে রক্তের হোলি খেলায় প্রমত্ত  মিশরের  সরকারকে উৎখাত করে জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে ওরা জেহাদ শুরু করেছে নতুনভাবে   উল্লেখ্য, গত বছর (২০১৩) ৩রা জুলাই  প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে মিশরের সেনা-সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তার কিছুদিন পর ডিসেম্বর মাসে নিষিদ্ধ করে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’কে আরবী ভাষায় ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’এর ইংরাজী ভাষায় নাম হলো ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ।   মুরসিকে মিশরে  ক্ষমতায় নিয়ে আসার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ তথা ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সৌদি আরব কাতার থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে । এরও একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে । তাৎপর্যটি হলো  - মিশর সরকার যে কাতারের আল জাজিরা টিভি চ্যানেলকে সে দেশের মাটিতে নিষিদ্ধ করেছে তাকে মান্যতা দেওয়া ও তার পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কাতারের এই  আল জাজিরা চ্যানেলটি  মুসলিম  সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যেখানে যেখানে ‘পবিত্র’ জিহাদের নামে  সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা করে তাদের পক্ষে কাজ করে থাকে । সৌদি প্রশাসন সন্ত্রাসবাদী মুসলিম সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে । তা হলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ডিক্রি জারি করে সে দেশের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছে যে, যাদের বিরুদ্ধে বিদেশে ‘জিহাদে’ যুক্ত থাকার  প্রমাণ পাওয়া  যাবে তাদের ৩ থেকে  ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড  দেওয়া হবে
সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলিকে জোড় ধাক্কা দেবে
মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সৌদি আরবের এই কঠিন পদক্ষেপগুলি বিশ্বরাজনীতিতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে । এই প্রভাব হবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী মুসলিম জঙ্গীসংগঠনগুলির ক্ষেত্রে নেতিবাচক এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তি-সম্প্রীতি-সৌহার্দের পক্ষে ইতিবাচক । কারণ,  একঃ সৌদি আরবে যেহেতু  মুসলমানদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র হযরত মুহাম্মদ এবং তাঁর সাহাবী ও বংশধরদের স্মৃতি বিজড়িত  মক্কা ও মদিনা অবস্থিত, তাই সে দেশের সরকারের নেওয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের একটা গভীর প্রভাব সাধারণভাবে বিশ্বের মুসলমানদের ওপর পড়েই ।  দুইঃ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে   সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে এর পূর্বেই মিশর, সিরিয়া ও রাশিয়া চিহ্নিত ও  নিষিদ্ধ করেছে এবং  মিশর  এরও বহু আগে দুবার ( ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে ) ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে  নিষিদ্ধ করেছিলো । তবুও  আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’র নাম বিশেষ শোনা যায় নি । ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের খুব অসুবিধায় পড়তে হয় নি বরং  মিশর, রাশিয়া ও সিরিয়ার তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগকে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে এতদিন যে প্রচার করে এসেছে সেটাই বেশী মান্যতা পেয়ে এসেছে । এবার সৌদি আরবের সরকা তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই সংগঠনটি  অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়বে । তিনঃ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ মিশরের একটি সংগঠন হলেও  ব্যাপ্তি ও বিশালত্বের দিক থেকে এটা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন যার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার প্রায় সমস্ত দেশে । ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রায় সমস্ত  দেশগুলিতে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ সর্বদাই সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম এবং নিয়েও থাকে‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ দুভাবেই কাজ করে থাকে । একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা আর একটি জেহাদী সন্ত্রাসবাদী ধারা । গণতান্ত্রিক  ধারায় কাজ করার জন্যে বিভিন্ন দেশে তারা আলাদা আলাদা নামে রাজনৈতিক দল  গঠন করেছে । বাহরিনে তাদের রাজনৈতিল সংগঠনের নাম Al – Menbar Islamic Society, জর্ডনে Islamic Front, ইরাকে Iraqi Islamic Party, কুয়েথে Hadas, ইয়েমেনে Yemeni Congregation for Reform, মরক্কোয় Justice and Development Party, আলজিরিয়ায় Movement for the Society Peace (MSP), সুদানে Islamic Charter Front, সোমালিয়ায় Harkat al – Islah or Reform Movement ইত্যাদি সকল দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকেই ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’  নিয়ন্ত্রণ করে মিশর থেকে ।  আর স্বদেশে তথা মিশরে তাদের রাজনৈতিক সংগঠনের নাম The Freedom and Justice Party(FJP). মুরসি প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করে জিতেছিলো এই পার্টিরই প্রতিনিধি হয়ে । সেক্ষেত্রে বলা বাহুল্য  যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলো ‘মুসলিম ব্রাদারহড’ই । গত বছর ৩রা জুলাই মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে উৎখাত করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে যে সশস্ত্র হিংসাত্মক আন্দোলন চলছে তার নেতৃত্বে রয়েছে ঐ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ই । আমাদের দেশের  আরএসএস ও বিজেপির মতো অনেকটাই যেখানে বিজেপি কোন নীতি নেবে, কোন পথ নেবে তা ঠীক করে আরএসএস, আর বিজেপি তা কার্যকরী করে বা করার চেষ্টা করে । ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ও নীতি, কৌশল ও কর্মসূচী স্থির করে দেয় আর তাদের রাজনৈতিক শাখা সংগঠনগুলি তা বাস্তবায়িত করে রাজনৈতিক সংগঠনের আড়ালে মুসলিম ব্রাদারহুড তার আসল (সন্ত্রাসবাদী) চেহারা গোপন করে রাখে যাতে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের দলে টানা যায় এভাবে কাজ করে তারা সর্বত্রই সুফলও লাভ করেছে । এভাবে আশি বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে মিশরে ওরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলো ।  মুখে গণতন্ত্রের শ্লোগান, আর আসল উদ্দেশ্য হলো ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে জেহাদ করা – এই যে ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদের কাছে যাওয়া এবং তারপর দলে টেনে জেহাদে সামিল করার কাজ চালিয়ে আসছিলো তারা সে কাজটি আবার অনেকটাই ধাক্কা খাবে । 
কেন এই সংঘাত
সৌদি আরবের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড সহ অন্যান্য মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলির এই সংঘাত বিশ্বের মুসলমান সমাজের কাছে একেবারেই আশাতীত ও হতাশাব্যঞ্জক । কারণ, আদর্শগতভাবে দুটো শক্তিই একই মত ও পথের অনুসারী । উভয় শক্তিই প্যান ইসলামের নীতিতে বিশ্বাসী ও তার জন্যেই কাজ করে যাচ্ছে । উভয়েই সুন্নী মুসলমান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত । উভয়েই চায় প্রত্যেকটি দেশে এবং সারা বিশ্বে পরিপূর্ণ ইসলামিক শাসনব্যবস্থা তথা ইসলামিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত বা প্রতিস্থাপন করতে । পৃথিবীতে পঞ্চাশের উপর মুসলমান অধ্যুষিত দেশ থাকলেও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে এমন একটিও দেশ নেই । তবে দু/তিনটি দেশ আছে যারা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রায় একশ শতাংশই ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে । সেই দেশগুলির মধ্যে একটি হলো সৌদি আরব । সৌদি আরবে নারী সম্পূর্ণরূপে গৃহবন্দী ও বোরখাবন্দী ।  অবাধে চলাফেরা করা, লেখাপড়া করা, গান-বাজনা করা, চাকরি করা বা ব্যবসা করা, গাড়ি ড্রাইভ করা – এরূপ কোনো স্বাধীনতা ও অধিকার তাদের নেই । মুশরিক তথা বিধর্মীরা সে দেশে ২য় বা ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির নাগরিক । সে দেশে নাগরিকদের ১০০%ই মুসলমান, কারণ মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের সে দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই । এমনকি বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্মাচরণেরও কোনো অধিকার নেই ।  গীর্জা, মন্দির, গুরুদ্বারা প্রভৃতি বিধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা সে দেশে দন্ডনীয় অপরাধ । ‘পবিত্র’ রমজান মাসে বিধর্মীদেরও দিনের বেলায় পানাহার করা দন্ডনীয় অপরাধ । সে দেশের ফৌজদারী অপরাধের শাস্তি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই কোরান সম্মত যা সম্পূর্ণ রূপেই অমানবিক, মানবাধিকারবিরোধী,মানবতাবিরোধী ও নৃশশতম । চোরের শাস্তি হাত কেটে নেওয়া, ব্যভিচারের শাস্তি অপরাধীকে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে প্রকাশ্যে বহুলোককে জড়ো করে তাদের সামনে পাথর ছুঁড়ে মেরে হত্যা করা ইত্যাদি । এতো যাকে বলে ‘আদর্শ’ ইসলামি রাষ্ট্র ঠিক তাই ।    ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ও মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলি বিশ্বের সর্বত্র যে ‘আদর্শ’ ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার  ‘মহান’ লক্ষ্য নিয়ে  ‘পবিত্র’ জেহাদে মত্ত রয়েছে এবং অবলীলায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ সংহার করে চলেছে সেই ‘আদর্শ’ রাষ্ট্রই তো সৌদি আরবের রাজা সে দেশে কায়েম করেছে । তবে কেন ওদের মধ্যে এই সংঘাত ? কী কারণ রয়েছে এই সংঘাতের পশ্চাতে ?  তো কোটি টাকার প্রশ্নের চেয়েও দামী   
আপাত অবিশ্বাস্য সংঘাতের পশ্চাতে যে যে কারণগুলি কাজ করছে তা নিহিত রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে  ইসলামের  মতাদর্শগত অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মধ্যে  । আল-কায়দা, হামাস, তালিবান ও ব্রাদারহুড প্রভৃতি জেহাদি সংগঠনগুলির সঙ্গে সৌদি আরবের  বিরোধ মূলতঃ সৌদি আরবের বিদেশ নীতি ও পদক্ষেপের প্রশ্নে ।  সৌদি আরবের  পররাষ্ট্র নীতি  এবং সেই নীতির অনুসারী গৃহীত পদক্ষেপগুলি স্পষ্টতঃই ইসলামের বিদেশনীতির পরিপন্থীইহুদীরা মুসলমানদের ঘোষিত শত্রু । কোরানে  একদম স্পষ্ট করেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সে কথা । স্বভাবতঃই ইহুদী রাষ্ট্র হলো বিশ্বের তামাম  মুসলমানদের কাছেই শত্রু রাষ্ট্র । ইহুদী রাষ্ট্রের সঙ্গে তাই কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে না । কোরানের ভাষায় সেই ‘অভিশপ্ত’ ইহুদী জাতির রাষ্ট্রকেই সৌদি আরব  স্বীকৃতি প্রদান করেছে যা ইসলামি নীতির ক্ষেত্রে একটা গুরুতর অপরাধ আফগানিস্তান ও ইরাকের উপর ভয়ঙ্কর হানা ও লাদেনকে হত্যার পর আমেরিকা এখন বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর কাছে সবচেয়ে বড়ো ও ঘৃণ্যতম শত্রু ।  অথচ সৌদি আরব হলো আমেরিকার  বিশ্বস্ত মিত্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি অন্যতম রাষ্ট্র ।  মিশরের বুক থেকে ইসলামি নীতির মূলোচ্ছেদ করে সে দেশে গামেল নাসের প্রতিস্থাপন করেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক রাষ্ট্র । তারপর তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের সঙ্গে চিরশত্রুতা পরিহার করে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেন । সেই মিশরের সঙ্গেও সৌদি আরব মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ ।  গত বছর যখন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ মদতপুষ্ট মুরসির সরকারকে মিশরের সেনাবাহিনী উৎখাত করে তখনও সৌদি আরব মুরসির পাশে দাঁড়ায় নি,  দাঁড়িয়েছিল সেনাবাহিনীর পাশেই সৌদি আরবের রাজা কয়েক বছর আগে ভ্যাটিকানে গিয়েছিলন পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে । সেখানে গিয়ে পোপকে কথা দিয়ে এসেছেন যে খৃষ্টানদের গীর্জা স্থাপন করা ও প্রকাশ্যে ধর্মাচরণ করার অধিকার দেওয়া হবে সে দেশে । সৌদি আরবের রাজা সম্প্রতি নারীদের ভোটাধিকার এবং ভোটে দাঁড়াবার অধিকারও প্রদান করেছে । এমনকি সৌদি প্রশাসনের ‘মজলিশে শুরা’তেও নারীকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে খুব সম্প্রতি । সৌদি আরবের এই পদক্ষেপগুলির জন্যেই ‘পবিত্র’ জেহাদে  নিয়োজিত মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলির সৌদি আরবের দ্বন্দ ক্রমে বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন একেবারে সংঘাত ও সংঘর্ষের স্তরে পৌঁছে গেছে ।
এই সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্যই ছিলো, এটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় ছিলো না । সৌদি আরবের রাজা বৈদেশিক ক্ষেত্রে যে নীতি ও পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছে তা যে ইসলামি নীতির উল্লঙ্ঘণ তা তিনি বিলক্ষণ জানেন । তৎসত্ত্বেও তিনি আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরস্থিতির বাধ্য-বাধকতার কারণে ঐরূপ নীতি ও পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন । কী সেই বাধ্য-বাধ্যকতা তা আলোচনার করার বিস্তৃত অবকাশ এখানে নেই । তবুও এ প্রসঙ্গে দু-একটি কথা উল্লেখ করতে চাই । দেশের অভ্যন্তরে আল্লাহ ও আখেরী নবীর দোহাই দিয়ে জনগণকে কোনো ক্ষমতা ও অধিকার দেব না, নারীকে গৃহবন্দী করে রাখবো,  আবার  বিশ্বের সমস্ত অমুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ্ব ও সংঘাত চালিয়ে যাবো এমন তত্ত্ব একেবারেই অচল ও অবাস্তব । এই তত্ত্বকে যারা মূর্খ ও ধর্মান্ধ তারাই বাস্তব সম্মত বলে মনে করে ও বিশ্বাস করে । এটা যে কী প্রকার ভয়ঙ্কর মূর্খতা তা ধর্মান্ধরা বুঝতে পারে না ক্ষমতায় যাওয়ার আগে । ক্ষমতাসীন মুসলিম শাসক গোষ্ঠীগুলো তা টের পাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে । আল্লাহ ও নবীর উপর মূর্খের মত অন্ধ আনুগত্য ও বিশ্বাস স্থাপন করে সকল অমুসলিম রাষ্ট্রকে শত্রু ভেবে তাদের সঙ্গে সংঘাতে গেলে তার কী পরিণাম হয় তা হাড়ে হাড়ে বুঝছে সাদ্দামের বাথ পার্টি, লাদেনের আল-কায়দা ও আফগানিস্তানের মোল্লা ওমরের তালিবান গোষ্ঠী ।  নিজের অভিজ্ঞতায় ও অন্যদের দেখে সৌদি আরবের রাজা উপলব্ধি করেছেন সেই নির্মম ও কঠিন-কঠোর সত্য কথাটা । তাই আমেরিকা, ইসরায়েল, মিশর প্রভৃতি ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে  মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য  হয়েছেন  বাধ্য হচ্ছেন  পোপের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক ছেড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বে হলেও ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে । বাধ্য হচ্ছেন নারীর জন্যে একটু একটু করে হলেও বদ্ধ মুষ্টি আলগা করতে ।  
ভারতের মৌলবাদী মুসলমানরা সৌদি আরবের ওপর বেজায় চটেছে
ভারতের মুসলমান সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ অহরহ দাবী করে থাকেন যে ইসলামই হলো একমাত্র  শান্তির ধর্ম এবং  ইসলামের নীতি অনুসরণ করেই কেবল বিশ্বে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব । তাঁদের আরও দাবী ইসলাম গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে এবং পৃথিবীর বুকে মুহাম্মদই সর্বপ্রথম গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা  স্থাপন করে তার প্রমাণ রেখে গেছন । মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা বিশ্বজুড়ে যখন সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড চালিয়ে অবাধে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তখন এই বুদ্ধিজীবীরা তারজন্যে কখনই ইসলামকে দোষারোপ করেন না । তাঁরা ইসলাম কখনই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সমর্থন করে না বলে হাত ধুয়ে ফেলেন । মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে ইসলাম খনু-সন্ত্রাস সমর্থন ও অনুমোদন করে না ?  এ প্রশ্ন কিন্তু বহু মানুষের ।  সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের প্রশ্নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ  সাধারণতঃ নীরবই থাকেন এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান ।  তবে পীড়াপীড়ি করলে তাঁরাও ঐ রকম বুদ্ধিজীবী সুলভ ঢঙে উত্তর দিয়ে থাকেন ।  তবে তাঁরা উত্তর দেন মিন মিন করে, হৃদয়ের গভীর থেকে যে উত্তরটা আসে না তা বোঝা যায় ।  যদি সত্যিই এমনটা হয় যে ইসলামে হিংসা, খুন ও সন্ত্রাসের স্থান নেয় এবং ইসলাম সত্যিই শান্তির ধর্ম এবং ভারতের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও  বুদ্ধিজীবীগণও সত্যি  সত্যিই শান্তির পূজারী, তাহলে সৌদি আরবের সরকারকে তাঁদের সমর্থন জানানোর কথা । কারণ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’, ‘হামাস’ প্রভৃতি সংগঠনগুলি যে ইসলামি জেহাদে তথা সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে বিশ্বাসী ও লিপ্ত তা নিয়ে সংশয় বা সন্দেহের একটুও অবকাশ নেই ।  কিন্তু এই সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার জন্যে ভারতের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীগণ সৌদি আরবের প্রতি তুষ্ট না হয়ে বেজায় চটেছেনএবং সেই মনোভাব তাঁরা হজম করতে পারছেন না,  বরং ভীষণ কড়া ভাষাতেই সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা, সমালোচনা ও প্রতিবাদ  জানাতে একটুও দ্বিধা করছেন না   সৌদি আরবের বিরুদ্ধে জ্বালায়, ক্ষোভে ও ক্রোধে ওঁরা কত ফুঁসছেন তা  কলকাতায় মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যে সব পত্র-পত্রিকা ( কলম, মিযান, নতুন গতি প্রভৃতি) নিয়মিত বের করেন সেগুলির পাতায় চোখ রাখলেই  টের পাওয়া যায় । ১১ই মার্চ  দৈনিক সংবাদ পত্র ‘কলম’ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম পাতাতেই চার কলাম জুড়ে একটি হেডলাইন সহ একটি  সংবাদ ছেপেছে । সংবাদে যে খবরটি আছে তা হলো, লখনউয়ের প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নদওয়াতুল উলামা’ সৌদি সরকারের সফররত প্রতিনিধি দলকে বয়কট করেছে সন্ত্রাসবাদী ঐ সংগঠনগুলিএক নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ।  পত্রিকাটি দাবী করেছে যে আমেরিকার চাপে সৌদি আরবের সরকার মাথা নত করেছে  পত্রিকাটি মিশরের ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’র নেতা আমর আবদেলকে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে, এর ফলে মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মীদের মনোবল ভাঙবে না এবং তাদের আন্দোলনও থামবে না ।  উপর উক্ত প্রত্যেকটি কাগজেই ঐ একই সুরে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে একদিকে, আর একদিকে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’, ‘হামাস’ সহ নিষিদ্ধ  সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা হচ্ছে  
এই ঘটনায় একটা বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠছে, তা হলো ঐ ধর্মীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে যে দাবী করে তা তাদের আসল কথা নয়, এবং আসলে তাঁরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও তাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রচন্ড সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল । কিন্তু ভারতের মাটিতে সে মনোভাব তো প্রকাশ করা যায় না, সম্ভব নয়, তাই তাঁরা মনের আসল কথা মনের গভীরে গোপন করে রেখে নকল কথা বলেন । আসলে বলতে বাধ্য হন  এ হচ্ছে ভারতবাসী হিসেবে তাঁদের বাধ্য-বাধকতা । পরিস্থিতির বাধ্য-বাধ্যকতায় তো অনেক কিছুই আপোষ করতে হয় – এটাই তো দস্তুর । সৌদি আরব যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমারিকা, ইজরাইল, মিশর প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে, ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে, পোপের কাছে গিয়ে খৃষ্টানদের জন্যে কিছু ছাড় দিতে সম্মত হয়ে, ঘরে বাইরে মুসলিম মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হয়েছে ।  ভারতের মুসলিমদের এভাবে কতই না আপোষ করতে হচ্ছে  - মনে প্রাণে কোরান-হাদিসকে মেনেও তাঁদের বলতে হয় ও হচ্ছে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তির কথা ।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...