Wednesday, January 22, 2014

রাজ্যসভার জন্যে তৃণমূল প্রার্থী আহমদ হাসান মুসলিম মৌলবাদীদের প্রতিনিধি, তিনি জিতলে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত শক্ত হবে


মমতা ব্যনার্জী তাঁর দলের রাজ্যসভার পাঁচটি শুন্যপদে নির্বাচনের জন্যে চারজনের একটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। চতুর্থ জনের নাম আহমাদ হাসান ইমরান। মমতার দল আপন শক্তির জোরে তিনজন প্রার্থীকে কে নির্বাচনে জেতাতে সক্ষম। চতুর্থ আসনে জয়লাভ করবে বামফ্রন্টের প্রার্থী। পঞ্চম আসনে জেতার জন্যে প্রয়োজনীয় বিধায়ক কোনো দল বা জোটের নেই। সেই আসনের জন্যে মমতা আহমাদ হাসান ইমরানকে চতুর্থ প্রার্থী মনোনীত করেছেন। স্বভাবতই তাঁর এই চতুর্থ প্রার্থীর জেতা একেবারেই অনিশ্চিত। একটি নিম্নরুচি ও নোংরা রাজনীতির অঙ্ক কষেই মমতা ইমরানকে চতুর্থ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে অনিশ্চিত আসনে আহমদ হাসানকে প্রার্থী করে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সংখ্যালঘু তাসটিই আরো একবার খেলে  খেলে দিলেন তাঁর আশা তিনি এ রকম একটি অপকৌশলের সাহায্যে এক ঢিলে দুটো পাখি মেরে বাজিমাত করতে সক্ষম হবেন। আহমাদ হাসানকে যদি জেতানো যায় তবে তিনি হবেন একদিকে মমতার একজন পুতুল-সাংসদ, অন্যদিকে মুসলিম মৌলবাদীরাও বেজায় তুষ্ট হবে। ইমরান কেনো সাংসদ হলে মমতার ইশারায় পুতুলবৎ নাচবেন তা বুঝে নেওয়া যাক।  
ইমরান একজন সাংবাদিক বেশ কয়েক বছর ধরে ‘কলম’ নামের একটি বাংলা সাপ্তাহিক তিনি বের করেছেন। তাঁর খুব সখ  ছিলো, সাপ্তাহিক ‘কলম’কে দৈনিক কলম’ করবেন। কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারছিলেন না। তাঁর সে সাধ ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে মমতা এবং তাঁর আশীর্বাদ পুষ্ট ‘শারদা’র কর্ণধার সুদীপ্তর সৌজন্যে। জনগণের আত্মসাৎ করা টাকায় সুদীপ্ত কিছু দৈনিক কাগজ এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম কেনেন বলে শোনা যায়। শোনা যায় ইমরানের সাপ্তাহিক ‘কলম’টি  শারদা কোম্পানীর মালিক সুদীপ্ত সেনের অর্থায়নে ‘দৈনিক কলমে’ উন্নীত হয়অবশ্য তার জন্যে দুর্মুখরা বলে থাকেন যে, ইমরানকে একটা মুচলেকা লিখে দিতে হয়েছিলোসেটা এ রকম -‘দৈনিক কলম’ তৃণমূল সরকারের পক্ষে প্রশ্নহীন ভূমিকা পালন করবে এবং একই সঙ্গে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করে যাবে।  এহেন ইমরান রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে গেলে তিনি যে মমতার একজন পুতুল-সাংসদ হিসেবে কাজ করবেন তা বলা বাহুল্য
আর এ কথাও সর্বজন বিদিত যে মমতা সাংসদ হিসেবে অধিক পছন্দ করেন সেই মানুষদেরই  যাঁরা তাঁর প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শনে কোনো প্রকার দ্বিধা করেন না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা যে প্রথম তিন প্রার্থী – মিঠুন চক্রবর্তী, যোগেন চৌধুরী ও কে ডি সিং – অপেক্ষা ইমরান অনেক বেশী পরীক্ষিত, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।  
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কেনো মমতা ইমরানের মতো এত অধিক অনুগত, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একজন সাংবাদিক-সৈনিককে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বাছাইয়ের প্রার্থী হিসেবে ভাবতে পারলেন না? তাছাড়া মমতার পছন্দের তৃতীয় প্রার্থীটি হলেন ঝাড়খন্ডের মানুষ এবং একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে আপাদ-মস্তক ডুবে থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ভিন রাজ্যের মানুষের প্রতি মমতা যতটা আস্থা রাখতে পারলেন ইমরানের প্রতি তিনি ততটা আস্থা কেনো  রাখতে পারলেন না? কেনো ইমরানকে তিনি ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন? এর ফলে ইমরানকে তো এখন সেই কংগ্রেস ও সিপিএমের অনুগ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে যাদের বিরুদ্ধে অবিরাম কুৎসা করেই তিনি মমতার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এই কেনো গুলির পেছনে নিশ্চয় যথেষ্ট কারণ নিহিত আছে। প্রথম কারণটা কি এই যে মমতা ইমরানকে রাজ্যসভার জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করেন নি, তাই নিশ্চিত জেতা কোনো আসন তাঁর জন্যে বররাদ্দ করেন নি? দ্বিতীয় কারণটি এমন হতে পারে যে, ইমরান সাংসদ পদে অনুপযুক্ত হলেও ঐ পদের জন্যে সংখ্যালঘু তাসটি(আসলে সাম্প্রদায়িক তাস) খেলার ক্ষেত্রে তিনিই বেশী উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য। কারণ, তিনি একদিকে যেমন মমতার অতি অনুগত ও বিশ্বস্ত সাংবাদিক, অপরদিকে তেমনি মুসলিম মৌলবাদীদের একজন জবরদস্ত প্রতিনিধিও বটে। তাই তাঁকে যে আসনেই প্রার্থী করা হোক (হোক না অনিশ্চিত আসন, হোক না অকৃতকার্য) মুসলিম মৌলবাদীরা তাতেই ভীষণ তুষ্ট হবে এবং মমতাকে মুসলিম দরদি বলে গলা ফাটানোর মাত্রাটা  আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে মুসলিম মোল্লাদের পদলেহনে এ দেশে যে জঘন্য প্রতিযোগিতা চলে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনদের মধ্যে তার তুলনা সারা পৃথিবীতে মেলা ভার। সেই কারণে মমতার আশা যে মুসলিম মৌলবাদীরা পাছে অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ হয় এ ভয়ে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত আহমাদ হাসান ইমরানকেই সমর্থন দিতে বাধ্য হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলেও  তাঁর লাভ হবে। তখন কংগ্রেস ও বামফ্রন্টকে মুসলিমবিরোধী বলে প্রচার করার একটি নতুন সাম্প্রদায়িক  অস্ত্র  তাঁর হস্তগত হবে
আহমদ হাসান ইমরানকে  মমতা সাংসদ পদের জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত প্রার্থী ভাবতে পারলেন না, বরং সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তথা মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ভাবলেন ও ব্যবহার করলেন, এটা ইমরানের পক্ষে সম্মানের না অসম্মানের, মানের না অপমানের, মর্যাদার না অমর্যাদার তা একজন নির্বোধ মানুষও বোঝেন। আর এ অসম্মান ও অপমান শুধু ইমরানকেই নয়, মমতা আসলে অপমান করলেন ইমরান যাদের প্রতিনিধি সেই মৌলবাদীদেরওকিন্তু তবুও ইমরান ও তাঁর শিবির খুশীতে গদগদ, ডগমগ। যারা ক্ষমতালোভী এবং অর্থ, যশ ও খ্যাতির কাঙাল তাদের অবশ্য আত্মমর্যাদার কথা ভাবলে চলে না।   
মমতার এহেন সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চালে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট যে অনেকটাই কাবু হয়ে পড়বে তার কিছু লক্ষণ ইতিমধ্যেই ফুটে উঠেছে। সিপিএমের দুই নেতা - বিধায়ক আনিসুর রহমান ও বিধায়ক রেজ্জাক আলি মোল্লা – ইতিমধ্যেই ইমরানকে প্রার্থী করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দল হিসেবে সিপিএম ও ফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দল, এস.ইউ.সি ও কংগ্রেস কী সিদ্ধান্ত নিবে তা জানার জন্যে আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিরোধী দলগুলি যদি মমতার পাতা ফাঁদে পা দেয় এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ভুল অঙ্কের বশবর্তী হয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় তবে তা ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনবে এ রাজ্যের তথা এ দেশের। কারণ, ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করছি যে অতীতের কংগ্রেস ও বাম সরকারে তুলনায় মমতার অধিক মাত্রায় মুসলিম মৌলবাদীদের তোয়াজ করার ফলে তাদের ঔদ্ধত্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মমতার আস্কারা পেয়ে অনেক সময় তারা এত দাপাদাপি করছে যা গণতন্ত্রের কাছে ক্রমশঃ হুমকি হয়ে উঠছে। এর ফলে আমরা একটা জিনিষ লক্ষ্য করছি, তাহলো,  হিন্দু সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিগুলিরও শক্তি ও সক্রিয়তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে আহমদ হাসান ইমরান এ রাজ্য থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেকারণ এর ফলে তৃণমূলের শুধু শক্তি বৃদ্ধি ঘটবেনা, একই সঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি ঘটবে মুসলিম মৌলবাদীদেরও। আর মুসলিম মৌলবাদীদের শক্তি বৃদ্ধি ঘটলে তার সাথে সাথে যে হিন্দু মৌলোবাদিদেরও শক্তি বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
আহমদ হাসান ইমরানকে একজন সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি ভাবলে তা হবে একটা প্রকাণ্ড রকমের ভুল। মুসলিমরা এ রাজ্যে জনসংখ্যার ২৫%, সুতরাং এ রাজ্য থেকে যখন পাঁচ জন সদস্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হবেন তাঁদের মধ্যে আহমদ হাসান ইমরান হবেন একজন মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি – এতো ভালোই, এতে মন্দের কি আছে? ব্যাপারটাকে এতো সহজভাবে দেখলে ভুল হবে। কারণ, ইমরান মুসলিম সমাজের একজন সাধারণ প্রতিনিধি মাত্র নন। আগেই বলেছি যে তিনি মুসলিম মৌলবাদীদের একজন জবরদস্ত প্রতিনিধি। আমি তাঁর চিন্তাধারা ও মতাদর্শ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই অবগত। এক দশকেরও বেশী সময় আমি তাঁর সাপ্তাহিক ‘কলমে’র নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম এবং সেই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি যেদিন থেকে দৈনিক পত্রিকায় উন্নীত হয়েছে সেদিন থেকেই আমি তার গ্রাহক হয়েছি। ‘কলমে’র একজন নিয়মিত গ্রাহক ও পাঠক হওয়ার সুবাদে আহমদ হাসান ইমরান কোন চিন্তাধারা ও মতাদর্শে বিশ্বাসী তা আমি খুব ভালো করেই জানি। ইমরান সাহেব যে মুসলিম মৌলবাদীদেরই একজন প্রতিনিধি ও মুখপাত্র তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাঁরা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। তসলিমার বই ‘দ্বিখন্ডিত’ নিষিদ্ধ করার জন্যে মুসলিম মৌলবাদীরা কত দাপাদাপি করেছিলো তা আমরা জানি। ইমরান ছিলেন তাঁদেরই একজন মুখপাত্র। তাঁদের সন্তুষ্ট করার জন্যে তৎকালীন তথাকথিত বাম সরকার বইটি নিষিদ্ধও  করেছিলো। কিন্তু সেটা যে বাক-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের উপর প্রবল আক্রমণ ও আঘাত ছিলো তা কলকাতা  হাইকোর্টের রায়ে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কিন্তু ইমরান সাহেবরা যেহেতু বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তাই তাঁরা সেই রায়কে মেনে নিতে পারেন নি, তাঁরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো সুপ্রীম কোর্টে ঐ রায়কে আটকানোর জন্যে। তসলিমার উপর হায়দ্রাবাদ শহরে যখন মুসলিম  মৌলবাদীরা হামলা করেছিলো তখন সেই হামলার ঘটনাকেও সমর্থন জানিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এ রাজ্যের মুসলিম মৌলবাদীরা কলকাতা শহরে ফতোয়া দিয়েছিলো যে তসলিমার শিরচ্ছেদ করবে তাকে অপরিমিত টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। ঐ ফতোয়াবাজদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইমরানও ইমরান সাহেবরা এতোটাই গণতন্ত্রবিরোধী যে তসলিমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর দাবীতে তাঁরা কলকাতা অবরোধ করে এমন তান্ডব চালিয়েছিলো যে সামলাতে সরকারকে মিলিটারি পর্যন্ত নামাতে হয়েছিলো। সম্প্রতি মুসলিম মৌলবাদীদের তোয়াজ করতে মমতার সরকারের পুলিশ বাংলা বৈদ্যুতিক চ্যানেল ‘আকাশ আট’কে ভয় দেখিয়ে তসলিমার লেখা মেগা সিরিয়াল ‘দুঃসহবাস’- এর প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে। যারা এই মেগা সিরিয়ালটি বন্ধ করার দাবী জানিয়ে ছিলো তাদের একজন অন্যতম ছিলেন এই আহমাদ হাসান ইমরান। সলমান রুশদিও কলকাতায় আসতে পারেন নি তাঁদের বাধাতেইসলমান রুশদি ও তসলিমার অপরাধ তাঁরা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না এবং ইসলামের সমালোচনা করেন। সলমান রুশদিকে যখন  ‘কোতল’ করার ফতোয়া দিয়েছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি তখন সেই ফতোয়াকেও  তাঁরা সমর্থন করেছিলেন। আজ থেকে ৭/৮ বছর আগে দঃ চব্বিশ পরগণার আক্রা হাই মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মোরসেলিন মোল্লাকে হত্যা করার জন্যে তাঁর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছিলো মুসলিম মৌলবাদীরা। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি একটি প্রবন্ধে কিছু যুক্তিপূর্ণ কথা লিখেছিলেন। সেই কথাগুলির মধ্যে একটিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, কোনো বিষয়ে যদি কোরান ও বিজ্ঞানে দুরকম কথা লেখা থাকে তবে কোনটাকে সত্য বলে ধরতে হবে? অর্থাৎ তিনি কোরানের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন মাত্রশুধু এই অপরাধে তাঁকে মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে হত্যা করার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিলো। ফতোয়া দেওয়া হয়েছিলো যে পত্রিকায় মোরসেলিন লিখেছিলেন সেই পত্রিকা ‘প্রগতি’র সম্পাদকের (যিনি একজন মুসলিম) উপরেও এবং তাঁর বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে তাঁকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ঐ একই ফতোয়া দেওয়া হয়েছে আমার উপরেও ২০০৫ সালেবামফ্রন্ট সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকি করণের যতবার চেষ্টা করেছে ততবার বাধা দিয়েছে মুসলিম মৌলবাদীরা যাদের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন ও কলম ধরেছেন এই ইমরান সাহেব। এর ফলে বামফ্রন্ট সরকার মুসলিমদের ভালোর জন্যে অন্তত এই যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চেয়েছিল তা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিলোইমরান সাহেবরা মুখে আধুনিক শিক্ষার কথা বললেও আসলে তাঁরা পশ্চাদপদ মাদ্রাসা শিক্ষার ধারক ও বাহক তাঁরা এরূপ চিন্তাধারায় বিশ্বাস করেন যে আধুনিক শিক্ষা মানুষকে বিপথগামী করে, আর মাদ্রাসা শিক্ষা তথা কোরান-হাদিসের শিক্ষা মানুষকে সুপথগামী করে। এত পশ্চাদপদ ধারণা পোষণ করেন এই ইমরান সাহেবরা। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন না, বিশ্বাস করেন না আধুনিক ও প্রগতিশীল আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থায়। তাঁরা শরিয়ত আদালতকে বেশী মান্যতা দেন দেশের সাংবিধানিক আদালতগুলি অপেক্ষা। তাঁরা নারীর স্বাধীনতা ও সমানাধিকারে বিশ্বাস করেন না, তাই মধ্যযুগীয় বহু বিবাহ ও তালাক প্রথা বাতিল করার ন্যায়সঙ্গত দাবী উঠলেই হৈ হৈ করে মারতে আসেন। সকল ধর্মীয় সমাজেই সংস্কার হয়েছে, এবং তার সুফল সে সব সমাজের মানুষ ভোগ করছেন। ভারতে বাইরে ২/৪টি দেশ ব্যতীত সকল মুসলিম দেশেই মুসলিম সমাজে সংস্কার হয়েছে, সংস্কার হয়েছে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনেওকিন্তু এদেশে  মুসলিম মৌলবাদীরা আজও অনড়, তাঁরা কিছুতেই সংস্কার হতে দিবেন না। আমাদের মতো কতিপয় মানুষ সংস্কারের কথা বললে আমাদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে আমাদের শিরচ্ছেদ করার ফতোয়া দেয়। আর এই সময়ে আহমদ হাসান ইমরানরা কলম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ঐ ফতোয়াকে যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার জন্যে। এই হলো অল্প কথায় আহমদ হাসানের পরিচয়। এই ইমরানকে তাঁর আসল পরিচয় আড়াল করে তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। মুসলিম মৌলবাদীরাও তাঁকে  মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরছে। এবং স্বয়ং ইমরানও নিজেকে মুসলিম সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিচয় হলো এক মস্তবড় ধোঁকা ও প্রতারণা। তৃণমূল কংগ্রেস ও মুসলিম মৌলবাদীরা একযোগে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে, বিশেষ করে মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে তাদের কার্য সিদ্ধি করতে চাইছে। যদি তারা কার্য সিদ্ধি করতে পারে তা হলে পশ্চিমবঙ্গের আরো অনেক বড়ো ক্ষতি  ও সর্বনাশ হবে।
সেই ক্ষতি  ও সর্বনাশকে ঠেকাতে পারে একমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) দল। বামফ্রন্ট তাদের একজন প্রার্থীকে জেতানোর পর তাদের হাতে যত সংখ্যক ভোট থাকবে এবং কংগ্রেসের হাতে যত ভোট আছে তা  একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রদান করলে সে প্রার্থী জয়ী হতে পারেন। তাই তাদের উচিত হলো ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির প্রতিনিধির জয়কে প্রতিহত করতে একজন অরাজনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ গুণীজনকে প্রার্থী করা এবং তাঁকে এ রাজ্য থেকে সাংসদ করে পাঠানো।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...