Friday, November 21, 2014

মুহাম্মদ কেন সওদাকে বিয়ে করেছিলেন






মুসলিম সমাজের ধর্মগুরুগণ ও মুহাম্মদের জীবন-চরিত রচিয়তাগণ মুহাম্মদকে নারীর ত্রাণকর্তা বলে দাবি করেন। তাঁদের আরো দাবি হলো মুহাম্মদের মতো নারীবাদী ব্যক্তিত্ব আজ পর্যন্ত কেউ জন্মগ্রহণ করে নি এবং ভবিষ্যতেও করবে না সেই মুহাম্মদই কিন্তু অসংখ্য বিয়ে করেছিলেন। যাঁরা এটা জানেন তাঁদের [ধর্মান্ধ মুসলিমরা ছাড়া] কাছে এই দাবি কখনই সত্যি ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় না। মুহাম্মদ সম্পর্কে উক্ত মূল্যায়ন তাই মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে দাবি করা হয় যে মুহাম্মদ নিজের স্বার্থে বহুবিবাহ করেন নি। প্রথম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর পর  ইসলাম ও নারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যেই তাঁকে বহুবিবাহ বিয়ে করতে হয়েছিলো। তাঁরা বলেন যে মুহাম্মদের নারীর প্রতি আকর্ষণ যে তাঁঁকে বিশেষ দুর্বল বা প্রভাবিত করতে পারে নি এবং যৌনতার কারণে তিনি বহুবিবাহ করেন নি তাঁর বড়ো প্রমাণ হলো খাদিজার জীবদ্দশায় তাঁর  দ্বিতীয় বিয়ে না করা। এ সব কথায়  মুসলমান  সমাজ প্রভাবিত তো হয়ই, প্রভাবিত হয় অমুসলিম সমাজের অসংখ্য মানুষও। ইসলামের ইতিহাস ও মুহাম্মদের জীবন-চরিত সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এ রকম দাবি মানুষের কাছে সত্যি ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। যাঁকে মানুষ ঈশ্বরের দূত বলে জানেন ও মানেন তাঁকে তো তাঁরা একজন লালসাহীন, পরোপকারী ও মহৎ চরিত্রের মানুষ বলে ভাববেন ও বিশ্বাস করবেনই। কিন্তু মুহাম্মদ তেমন কোনো প্রমাণ রেখে যেতে পারেন নি। যেটা নির্মম বাস্তব ও সত্যি ঘটনা তাহলো এই যে, মুসলিম সমাজের উত্থাপিত দাবি বা যুক্তিগুলি মোটেই সঠিক নয় এবং এটাই প্রকৃত সত্যি ঘটনা যে ইসলাম বা অন্য কোনো প্রয়োজনে নয়, মুহাম্মদ অসংখ্য বিয়ে করেছিলেন তাঁর নিজের স্বার্থেই। মুহাম্মদের জীবনী খোলা মনে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে তাঁর এমন একটা ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে যা সভ্য মানুষের কল্পনারও অতীতকেন তিনি অসংখ্য বিয়ে করেছিলেন তার সঠিক কারণ অনুধাবন করার জন্যে তাই  জানা দরকার তাঁর দাম্পত্য জীবনের ইতিহাস এবং তাঁর প্রত্যেকটি বিয়ের প্রেক্ষাপট তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিলো সওদার। তিনি কেনো অনেকগুলো বিয়ে করেছিলেন তা অনেকটাই স্পষ্ট বোঝা যায় সেই বিয়েগুলোর প্রেক্ষাপট ও তাঁর দাম্পত্য জীবনের ইতিহাস থেকে 
খাদিজার মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই মুহাম্মদ সওদাকে বিয়ে করেন। কোরেশ বংশের লুয়াই গোত্রের জামায়া বিন কাসেম বিন আবদে সামস ছিলেন সওদার পিতা এবং খাজরাজ বংশের নাজ্জার গোত্রের শামুস বিনতে কায়েস ছিলেন তাঁর মা। সওদাদের ধর্ম পরিচয় নিয়ে মতভেদ আছে। একটি মহল মনে করে তাঁরা ছিলেন পৌত্তলিক। তবে বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য মতটি হলো তাঁরা ছিলেন খৃষ্টধর্মাবলম্বী। সওদাকে নিয়েও অন্যান্য নানা প্রশ্নেও প্রচুর মতভেদ দেখতে পাওয়া যায়। মতভেদ তাঁর বয়স নিয়ে, মুহাম্মদের সঙ্গে বিয়ের আগে  তিনি সধবা ছিলেন নাকি বিধবা ছিলেন মতভেদ তা নিয়েওআবার মুহাম্মদই তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, নাকি সওদার পিতা মুহাম্মদকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে বিয়ে করার জন্যে তা নিয়েও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। এই মতভেদ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সৃষ্ট। আধুনিক যুগে যাঁরা মুহাম্মদের জীবনচরিত রচনা করেছেন, বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে যাঁরা মুসলিম তাঁরা মুহাম্মদকে সঠিকভাবে উপস্থাপিত করা অপেক্ষা তাঁর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নির্মাণ করার প্রয়াস করেছেনই অধিক এবং সজাগ ও সতর্ক থেকেছেন যাতে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ  না হয় এতোটুকু। ফলে প্রয়োজনে বহু ক্ষেত্রেই হয় তাঁরা বহু কিছু আড়াল করেছেন, না হয় তথ্যবিকৃতি করেছেন খেয়ালখুশি মতোসওদার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি, মুহাম্মদের ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে গিয়ে সচেতনভাবে বলির পাঁঠা করা হয়েছে সওদাকেসওদাকে নিয়ে যে সব তথ্যাদি পাওয়া যায় তার মধ্যে যেগুলি সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য সেগুলি প্রথমে আলোচনা করা যাক। সওদা ছিলেন সধবা, তাঁর বিয়ে হয়েছিলো সাকরান [ভিন্ন মতে সাফরা বিন আমর]-এর সঙ্গে। মক্কায় যাঁরা প্রথম দিকেই মুহাম্মদের শিষ্য হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে সওদা ও তাঁর স্বামীও ছিলেন। পাছে এই পর্বের শিষ্যরা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে এই ভয়ে মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের আবিসিনিয়া [অধুনা ইথিওপিয়া] পাঠিয়ে দেন। সেখানে অবস্থান কালে খৃষ্টানদের সংস্পর্শে থেকে সাকরানের ইসলামের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর মনের মধ্যে এরূপ বিশ্বাস জন্মে যে মুহাম্মদ যা বলেছেন তা সবই মিথ্যে ও মনগড়া। ফলে তিনি ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে পুনরায় খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। সওদা কিন্ত সাকরানের সঙ্গে সহমত হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে রাজী হন নি। তিনি তাঁর স্বামীকে পরিত্যাগ করে মক্কায় ফিরে এসে  সমস্ত ঘটনা বিশদে মুহাম্মদের কাছে বর্ণনা করেন।  এদিকে সওদা মক্কায় ফিরে আসার মাত্র কয়েক দিন আগেই খাদিজার  জীবনাসান ঘটে গিয়েছিলোখাদিজা তাঁর গর্ভের দুটি কন্যা সন্তানকে – উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা – রেখে মারা যান। মুহাম্মদ তখন স্বভাবতই তাঁর শিশু কন্যা দুটির প্রতিপালন করা এবং তাঁর নিজের জন্যে একজন নারীর তীব্র প্রয়োজন অনুভব করছিলেন। নারী ছাড়া এক মুহূর্ত সময় কাটানো তাঁর পক্ষে প্রায় দুঃসহ হয়ে উঠছিলো। এটা যে সত্যি ঘটনা তার প্রমাণ পাওয়া যায় খাদিজার মৃত্যুর পর তাঁর একের পর এক বিয়ে করার ঘটনাগুলো থেকে। ফলে সওদার স্বামী সাকরানের ইসলাম ত্যাগ করা ও খৃষ্টান ধর্মে ফিরে যাওয়ার ঘটনা তাঁর কাছে বরং শাপে বর হয়েই দেখা দেয়।  আর সওদা বিবাহিতা হলেও তাঁর বয়স তো মোটেই খুব বেশী ছিলো  না। তিনি তখন ত্রিশ বছরের যুবতী। তখন তাঁর বয়স যে ত্রিশ বৎসর ছিলো তার স্বীকারোক্তি বাা প্রমাণ পাওয়া যায় ধর্মিনিষ্ঠ মুসলিম লেখকদের কারো কারো লেখাতেও। বাংলাদেশের ইসলাম দরদী লেখক  সৈয়দ আলী আহসান হলেন সে রকম একজন। তিনি  সওদার বয়স তিরিশ বলে উল্লেখ করেছেন। [দ্রঃ মহানবী (সঃ)এঁর বিবাহ,  মহম্মদ সাদাত আলী, পৃ – ৩৫, প্রকাশনা - মল্লিক  ব্রাদার্স, কলকাতা] সুতরাং এরূপ ধারণা প্রকট হয়ে ওঠা স্বাভাবিক যে মুহাম্মদ মনে মনে যে ধরণের একজন নারীর জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন সওদা ছিলেন ঠিক সে রকমই একজন নারী। কিন্তু তখন মুহাম্মদের  পক্ষে একটাই বাধা ছিলো সওদাকে বিয়ে করার, তা হলো, তিনি ছিলেন সধবা, কারণ তাঁর স্বামী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলেও তাঁকে তালাক [ইস্তফা] দেন নি। এই বাধা কাটাতে অবশ্য আল্লাহ  তৎপর হয়ে ওঠে  এবং বলে  যে  কোনো মুসলমান যদি স্বধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে তবে আপনা হতেই তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে  যাবে। সুতরাং আর কোনো সমস্যা বা বাধা থাকলো না, আল্লাহ স্বয়ং বাধা দূর করে দিলে মুহাম্মদ সওদাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেন। ইসলামি শাস্ত্রে আছে বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা নারীকে পুনরায় বিয়ে করার আগে একটা নির্দিষ্ট সময় [ইদ্দত কাল] পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়মুহাম্মদ ততদিন অপেক্ষা করেন নি তো বটেই, উপরন্তু খাদিজার মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন পরই গভীর শোকের আবহের মধ্যেই সওদাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেন। এই ঘটনা মুসলিমদের কাছে বড়োই অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর। যাঁরা খাদিজার সঙ্গে দীর্ঘ পঁচিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে মুহাম্মদের দ্বিতীয় বিয়ে না করার ঘটনাকে মুহাম্মদের  চরিত্রের এক মহান ও উজ্জ্বল দিক বলে ভীষণ গর্ব করে থাকেন তাঁদের কাছে  খাদিজার মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই একজন যুবতী ও সধবা নারীকে বিয়ে করার ঘটনাটি স্বস্তিদায়ক বা আনন্দদায়ক হওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁরা এই ঘটনায় বিব্রত ও লজ্জিত না হয়ে পারেন না।ফলে তাঁদের মুহাম্মদের চরিত্র তথা ভাবমূর্তি মেরামত করার ও নতুন করে নির্মাণ করাটা অপরিহার্য ও অনিবার্য  হয়ে ওঠেআর এটা করার জন্যে স্বভাবতঃই তাঁদের প্রকৃত সত্য ঘটনাকে চাপা দেওয়া ও তথ্য বিকৃত করা ছাাাড়া গত্যন্তর থাকে না। কীভাবে কোন কোন জায়গায় তাঁরা খেয়ালখুশী মতো তথ্য বিকৃত করেছেন তা নয়ে আলোচনার পূর্বে ইরানের এ যুগের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আনোয়ার হেকমত কী বলেছেন তা দেখা যাক – “She was the former wife of one of the believers who had migrated to Abyssinia [Ethiopia] with her husband on Muhammad’s order. Her husband, after associating with Christians in that country, comparing his creed with Christianity, abandoned Islam and became a Christian. After his conversion, Sauda left him in Abyssinia and returned in Mecca.
In accordance with Islamic jurisprudence, any Muslim man who changes his religion and thus becomes an apostate is considered divorced from his wife and she is no longer considered legally bound to him. On her return to Mecca Muhammad took her as his wife and consummated the marriage. This took place just a few days after the death of Khadija, to whom he had, according to Muslim apologists, always been faithful.” [Woman and the Koran, page – 42, 43] .
মুহাম্মদের মুসলিম জীবনচরিত রচিয়তাগণ সকলেই যেটা দাবি করেছেন তা হলো মুহাম্মদ কামতাড়িত হয়ে সওদাকে বিয়ে করেন নি,একান্ত পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েই সওদাকে বিয়ে করেছিলেন।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের লেখক মোহাম্মদ বরকাতুল্লাহ লিখেছেন, “খাদিজা বাঁচিয়া থাকিতে নবী কখনো দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ করার কথা মনে আনেন নাই,  যদিও তিনি চল্লিশ পার হইতে না হইতেই খাদিজা পঞ্চাশোর্ধ প্রৌঢ়া হইয়া পড়িয়াছিলেন। ইহার পর আরও দশ বৎসর তাঁহারা একত্রে সংসার করিয়াছেন। তখনও নবী খাদিজাকে লইয়াই সন্তুষ্ট ছিলেন, অন্য কোনও রমণীর কথা কখনো চিন্তা করেন নাই। কিন্তু এখন তিনি অত্যন্ত বিপন্ন হইয়া পড়িলেন। একজন গৃহিণী না হইলে তাহার সংসার আর চলে না।” [দ্রঃ মহানবী (সঃ) এঁর বিবাহ,  মহম্মদ সাদাত আলী,  পৃ – ৩০, প্রকাশনা - মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা]  যৌনতাড়িত হয়ে নয়, দু’টি নাবালিকা কন্যাকে প্রতিপালন করার জন্যে একজন আদর্শ পিতার দায়িত্ব পালন করতেই মুহাম্মদ সওদাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন - এই  দাবিটিকে যুক্তিগ্রাহ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে সওদার বয়স বাড়িয়ে তাঁকে  তো প্রৌঢ়া বা বৃদ্ধা না বানালে চলে না। তাই মোহাম্মদ বরকাতুল্লাহ সওদাকে প্রৌঢ়া বানিয়ে দেন। কেউ কেউ তো তাঁকে বৃদ্ধা বানাতেও কুন্ঠিত হন নি। ড.ওসমান গণি হলেন তেমন একজন। তিনি বলেছেন সওদা ছিলেন বৃদ্ধা ও তাঁর বয়স ছিলো তখন সত্তর বছর। তিনি লিখেছেন, “যখন বিবি খাদিজা মারা যান তখন হযরতের সঙ্গে তাঁর দুই অবিবাহতা কন্যা। তিনি তখন কোনও কুমারীকে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বিয়ে করলেন বিধবা সওদাকে। যিনি ছিলেন বৃদ্ধা। স্বামী সাফরা বিন আমরের সঙ্গে আবিসিনিয়ায় এসেছিলেন। একটি পুত্রও ছিল। যার নাম ছিল আবদুর রহমান। তিনি এই বিধবাকে বিয়ে করলেন,  যেহেতু তিনি ছিলেন অসহায়া মুসলমান রমণী।” [মহানবী, পৃ – ৩৯০] এই বইয়েরই ৩৮৯ পৃষ্ঠায় ড. গণি আরো নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে সওদার বয়স ছিলো তখন  সত্তর বছর। মহানবী (সঃ) এঁর বিবাহ – গ্রন্থের লেখক  মহম্মদ সাদাত আলী অবশ্য সওদাকে পৌঢ়া বা বৃদ্ধা বানাতে কিঞ্চিত কুন্ঠাবোধ করেছেন। তিনি যে হিসাব দিয়েছেন তাতে সওদা ছিলে মুহাম্মদের চেয়ে বয়সে ছোট এবং তাঁর বয়স ছিলো চুয়াল্লিশ/পঁয়তাল্লিশ বছরতিনি লিখেছেন, “রাসূলুল্লাহ [সঃ] – এর ইন্তেকালের দীর্ঘ ২৩ বছর পর হযরত সওদা [রাঃ] ৮১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মদীনার গোরস্থান জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত সওদার [রাঃ]  মৃত্যুর সন তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।” [পৃ-৩৫]  মুহাম্মদ ৬৩২ খৃষ্টাব্দে ৬২ বছর বয়সে মারা যানএই হিসেব অনুসারে  সওদা যখন ৮১ বছর বয়সে মারা যান তখন মুহাম্মদ বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৮৫ বছর।
সধবাকে বিধবা বানাবার পিছনেও একটা উদ্দেশ্য রয়েছেমুসলিম ঐতিহাসিক বা জীবনীকারগণ  অধিকাংশই লিখেছেন যে সওদার স্বামী আবিসিনিয়ায় মারা যান। কবি গোলাম মোস্তফা লিখেছেন এ প্রসঙ্গে, “হযরত সওদা নাম্নী এক বর্ষীয়ান বিধবাকে বিবাহ করিলেন। সওদা ও তাঁর স্বামী বহু পূর্বেই ইসলামে দীক্ষিত হন এবং আবিসিনিয়ায় হিযরত করেন। কিছুকাল পরে সওদার স্বামীর মৃত্যু হয়, তখন সওদা একেবারে নিঃসহায় হয়ে পড়েন। নিরাশ্রয়া সওদাকে তাই হযরত পত্নীরূপে গ্রহণ করেন।”  [দ্রঃ বিশ্বনবী, পৃ – ১১৬] এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সওদার বয়স বাড়ানো আবশ্যক ছিলো মুহাম্মদকে মহান করে চিত্রিত করার জন্যে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁকে বিধবা বানানোর আবশ্যকতা কোথায়? হ্যাঁ, এটা আবশ্যক হয়ে ওঠে ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্যে। সওদার স্বামী সাকরান মুহাম্মদের ভন্ডামি বুঝতে পেরে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন – এই ঘটনা ইসলামের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবেই ক্ষুণ্ণ করে বৈ কি  তাই সাকরানের ইসলাম ত্যাগের ঘটনাকে চাপা দিতে এ কথা বলা অতি  আবশ্যক ও অপরিহার্য হয়ে ওঠে এ কথা বলার যে সাকরান মারা গিয়েছিলেন, তিনি ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্ট ধর্মে ফিরে যান নি
মুহাম্মদ বৃদ্ধা সওদাকে বিয়ে করেছিলেন এটা প্রমাণ করার জন্যে একটা কথা বলা হয় যে, সওদা বৃদ্ধা ছিলেন বলেই  মুহাম্মদের ঔরসে  তাঁর গর্ভে কোনো সন্তান হয় নি। আপাত দৃষ্টিতে কথাটি সকলের কাছেই সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে। তবুও কথাটি কিন্তু মোটেই সত্যি নয়। সওদার গর্ভে মুহাম্মদের ঔরসে কোনো সন্তান আসে নি এটা প্রমাণ করে না যে, সওদার সন্তান ধারণ করার বয়স ছিলো না এবং তিনি বৃদ্ধা  ছিলেন। বাস্তবটা হলো এই যে, সওদার গর্ভে সন্তান না  আসার পেছনে মূল কারণ  মুহাম্মদের শারিরীক ত্রুটি, সওদার বয়স নয়খুব সম্ভবত মুহাম্মদ কোনো  রোগে আক্রান্ত ছিলেন  বলে সওদার গর্ভে  সন্তান  আসে নি। এ রকম ধারণা বা অনুমান করার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, শুধু সওদাই নয়, খাদিজা ছাড়া মুহাম্মদের অন্য কোনো স্ত্রীর গর্ভেই সন্তান আসে নি যাদের কয়েকজনের বয়স ছিলো নয় থেকে সতেরো-আঠারো বছরের মধ্যেসুতরাং সন্তান ধারণ করতে না পারার জন্যে মুহাম্মদের অক্ষমতাকে সওদার উপর যে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এমনটা মনে হওয়ার কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। আর এটাও নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, সওদার গর্ভে মুহাম্মদের ঔরসে সন্তান না আসার দায় তাঁর (সওদার) ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক প্রকার জঘন্য  মিথ্যাচার বৈ নয়।
মুহাম্মদ সওদাকে বিয়ে করার আগে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা মোটেই ভাবেন নি সেটা প্রমাণ করার জন্যে আর একটা গল্প বলা হয়। বলা হয় যে মুহাম্মদের কাছে সওদার হয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন সওদার পক্ষেরই কেউ, হয় তাঁর পিতা না হয় অন্য আর কেউ। মুহাম্মদ তখন অসহায় এক বৃদ্ধা মুসলিম নারীকে উদ্ধার করার জন্যে ঐ প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করতে পারেন নি। তিনি তাঁকে বিয়ে করে এক মহান উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু অসহায় এক মুসলিম বৃদ্ধা ও বিধবা নারীকে বিয়ে করে মুহাম্মদের উদারতা প্রদর্শনের গল্পটা  নিছকই বানানো গল্প যার সঙ্গে সত্যের লেশ মাত্র নেই। এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল অল্প কিছুদিন পরেই। সওদাকে বিয়ে করার মাত্র কয়েক মাস পরেই মুহাম্মদ বিয়ে করেন আয়েষাকে, এবং তার কিছুদিন পর হফসা এবং তারপর একে একে  এভাবে প্রায় দু’ডজন কম বয়সী নারীকে তিনি বিয়ে করেন। তাছাড়া এইসব স্ত্রীদের  বাইরেও তাঁর আরো অনেক ক্রীতদাসী ও উপপত্নীও ছিলোই।
মুহাম্মদ যে  এক অসহায়, বয়স্কা ও বিধবা নারীকে উদ্ধার করার জন্যে সওদাকে বিয়ে করেন নি তার আর একটি বড়ো প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর হারেম যখন আয়েষা, হফসা, জয়নাব, মারিয়া প্রভৃতি সুন্দরী ও কম বয়সী এক ডজনেরও বেশী নারীর আগমন ঘটেছে এ রকম সময়ে তিনি সওদাকে নির্মমভাবে তালাক দেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তালাক প্রাপ্ত অসহায় সওদা তখন মুহাম্মদের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে আবেদন করেন তালাক ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে। মুহাম্মদ সওদার সেই করুণ আর্তিতে সাড়া দিয়ে তালাক ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আরোপ করেন সওদার ওপর একটা অন্যায় ও অমানবিক শর্ত। সে শর্তটি ছিলো এরূপ যে সওদা বাকি জীবনে মুহাম্মদের কাছে স্ত্রী হিসেবে যা তাঁর প্রাপ্য ও অধিকার সেগুলি আয়েষার অনুকূলে ছেড়ে দিতে হবে। বলা বাহুল্য যে সওদা তা নত মস্তকে মেনে নিয়েছিলেন এবং মুহাম্মদও  তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সওদাকে তাঁর জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। না, এটা  কোনো বানানো অভিযোগ বা কুৎসা নয়। হাদিসে এই বিবেক বর্জিত ও অমানবিক ঘটনাটির উল্লেখ আছে। সে রকম একটি হাদিস হলো এরূপঃ “মুজাম-ই-আবুল আব্বাসের একটি মুরসাল হাদিসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ [সঃ] হযরত সওদা [রাঃ] – এর নিকট তালাকের সংবাদটি পাঠিয়েছিলেন। তিনি হযরত আয়েষা [রাঃ] – এর নিকট বসেছিলেন। হুযূর তথায় আগমন করলে হযরত সওদা [রাঃ] তাঁকে বলেনঃ ‘যে আল্লাহ আপনার উপর স্বীয় বাণী অবতীর্ণ করেছেন এবং স্বীয় মাখলুকের মধ্যে আপনাকে স্বীয় বান্দা মনোনীত করেছেন তাঁর শপথ। আপনি আমাকে ফিরিয়ে নিন। আমার বয়স খুব বেশী হয়ে গেছে। পুরুষের প্রতি আর আমার আসক্তি নেই। কিন্তু আমার বাসনা এই যে, আমাকে যেন কিয়ামতের দিন আপনার স্ত্রীদের মধ্যে উঠান হয়।’ রাসূলুল্লাহ [সঃ] এতে সম্মত হন এবং তাঁকে ফিরিয়ে নেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল [সঃ]! আমি আমার পালার দিন ও রাত্রি আপনার প্রিয় পত্নী হযরত আয়েষা [রাঃ] – কে দান করে দিলাম।’ ” [দ্রঃ ইবনে কাথিরের তফসীর, ৪র্থ – ৭ম খন্ড, পৃ – ৫৮৪] এই তফসীরে সওদার উক্তি হিসেবে যে কথাগুলি বলা হয়েছে তার মধ্যে দুটি কথা তাঁর মুখে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, কথা দুটি তাঁর বয়স সম্পর্কে এবং তাঁর পালা আয়েষাকে দান করা প্রসঙ্গে।  কেনো তিনি যা বলেন নি তা তাঁর মুখে বসানো হয়েছে তার বাখ্যা উপরে আলচনা করা হয়েছে।




Sunday, November 16, 2014

মুসলিম মৌলবাদীদের নতুন দোসর জুটেছে প্রাক্তন নকসাল ও মানবাধিকার কর্মীরা



খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের প্রধান পান্ডা জেএমবির শীর্ষ নেতা সাজিদ ওরফে মাসুদ অবশেষে ধরা পড়েছে। শাকিল গাজি, যে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সেও ছিলো বাংলাদেশের জঙ্গি এবং জেএমবির সদস্য। শাকিলের পরিচয় জানার পরই আশঙ্কা করা গিয়েছিলো যে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র যোগ রয়েছে। সাজিদ ধরা পড়ার পর  খাগড়াগড়  বিষ্ফোরণের  সঙ্গে ‘জেএমবি’-র যোগের আশঙ্কাটা যে সতিই  তা নিয়ে আর সন্দেহ রইলো নাতদন্তে আরো যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাতে কয়েকটি মাদ্রাসায় যে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছিলো এবং সেই মাদ্রাসাগুলিতে জিহাদের পাঠ ও প্রশিক্ষণ দুইই দেওয়া হতো তাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।এতদসত্ত্বেও মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এখনও বাংলাদেশী জঙ্গি-যোগের এই ঘটনাকে ভূয়া, মিথ্য এবং ষড়যন্ত্র বলে সমানে গলাবাজি করে চলেছেনসমানে গলাবাজি করে বলছেন যে মাদ্রাসায় জঙ্গিযোগের অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা। সমস্তই মিডিয়ার বানানো গল্প এবং বিজেপিরি ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। তাঁদের সঙ্গে সমানে গলা মেলাচ্ছেন মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণের একাংশও।  ওঁদের এই গলাবাজি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘চোরের মায়ের বড়ো গলা’ - এই প্রবাদ বাক্যটার কথা। এই  গলাবাজি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে কানাডিয়ান মুসলিম চিন্তাবিদ তারেক ফাতাহ-র একটা সাম্প্রতিক মন্তব্যও তিনি সম্প্রতি ভারত  সফরে এসে বলেছেন -  India is the  only country where Muslims exert influence without fear. ফাতাহ-র  কথাটা  সম্পূর্ণ ঠিক নয়, তবে সম্পূর্ণ ভুলও নয় এ দেশে মুসলিম সমাজের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই হয় নিরক্ষর, নয় অল্প শিক্ষিত এবং দরিদ্রতাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি বলে কিছু নেই, তাই তাঁদের প্রভাব খাটানোর কথাটা অবান্তর বৈ নয়।  তবে এ দেশে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারা যে ভীষণ প্রভাবশালী ও দাপুটে তা নিয়ে সংশয় নেই।  তাই তারেক ফাতাহ-র কথাটা  একটু সংশোধন করে নিয়ে এ ভাবে বলা যেতে পারে - India is the only country where Muslim religious leaders [Muslim fundamentalists] exert influence without fear.  
মুসলিম ধর্মীয় নেতারা খুব প্রভাবশালী এ জন্যে নয় যে তাঁদের কথায় মুসলিমরা ভোট দেয়। তবু তাঁরা সরকারের উপর প্রবলভাবেই প্রভাব খাটাতে পারেন। এর পেছনে মূলতঃ তিনটি কারণ আমি দেখি। এক] মুসলিম সমাজের অজ্ঞতা ও ধর্মান্ধতা, দুই]. মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একাংশের ধর্মান্ধতা ও একাংশের কাপুরুষতা এবং তিন] রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ভোটের সংকীর্ণ ও নোংরা রাজনীতি। দু একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। সংবিধান প্রণয়নের সময় এই ধর্মীয় নেতারা যখন বলেছিলেন যে আমাদের  মুসলিম ব্যক্তিগত আইনই চাই, তখন মুসলিম সমাজ ধর্মান্ধতা ও অজ্ঞতার কারণে নীরব ছিলো। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা এই আইন ক্ষতি করবে জেনেও  প্রতিবাদ করেন নি তখন রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের দাবি মেনে নিয়েছিলোফলে সংবিধানে এই কুৎসিত আইনটি পাশ হয়ে যায়।  ধর্মীয় নেতারা মুসলিম সমাজকে বিশুদ্ধ ইসলামি আইনে বেঁধে  রাখার জন্যে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড’ তৈরী করে সরকারকে বলেন,  এই বোর্ডকে মান্যতা দিতে হবে। মুসলিম সমাজ যথারিতি নীরব থাকে। নীরব দর্শক হয়ে থাকেন মুসলিম সমাজের ভীরু ও স্বার্থপর বুদ্ধিজীবীরাও। সরকারও বলে দিলো, তথাস্তু। ধর্মীয় নেতারা বললেন যে এই বোর্ডই মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মুসলিম সমাজ ও এই সমাজের বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। সরকার আবারো বললো, তথাস্তু। ১৯৮৫ সালে সুপ্রীম কোর্ট একটি খোরপোষের মামলায়  শাহবানুর পক্ষে রায় দেয়। ধর্মীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে বললেন এই রায় বাতিল করতে হবে। মুসলিম সমাজ আবারো  চুপচাপ থাকলো, এবং নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকলো বিবেকহীন কাপুরুষ বুদ্ধিজীবী সমাজওরাজীব গান্ধীও বিবেকের ঘরে তালা দিয়ে সংসদে বিল আনলেন যাতে মুসলিম মেয়েরা আর কোনো দিন খোরপোষ দাবি করতে না পারেন। সকল রাজনৈতিক দলগুলিও  লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ঐ কালা বিলটিকে সমর্থন জানালো।
মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের এভাবেই একের পর এক প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তোলা হয়েছে ফলে তাঁদের প্রভাব দিনের পর দিন বেড়েছে তাঁরা তাই যে কোনো দাবি, তা হোক না অসাংবিধানিক ও অমানবিক, অবলীলায় ও নির্ভয়ে সরকারের কাছে জানাতে পারেনএমনকি নির্ভয়ে দেশের সংবিধানকে দু পায়ে মাড়িয়ে যাওয়ার দুঃসাহসও দেখাতে পারেন মুসলিম সমাজের  কেউ যদি ইসলামি আইনের ন্যায় সঙ্গত সমালোচনাও করেন তবে তাঁরা তাঁকে কতল করার ফতোয়া দিতে পারেন, এমনকি কতলও করতে পারেন পুলিশের নাকের ডগায়। কারণ, তাঁদের সাত খুন মাফ। এই ক্ষমতা তাঁরা ভোগ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে সেই জোরেই তাঁরা বর্ধমানের খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জেএমবি (বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) এবং মুসলিম জঙ্গিদের পাশেও  দাঁড়াতে পারেন নির্ভয়ে এমনকি তাঁরা তদন্তকারী দলকে  তদন্তকার্যে বাধা দেওয়ার হুমকিও দিতে পারেনপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বর্ধমান শহরে প্রকাশ্য সমাবেশে তদন্তকারী দলকে তদন্তে বাধা দেওয়া এবং ধৃত জঙ্গীদের নৈতিক, আইনী ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এখন আবার নতুন দোসর ও দোহার জুটেছে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলো তো আছে বরাবরই, এখন দেখছি প্রাক্তন নকসাল নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরাও এই ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেনএঁরা তো দেখছি ধর্মীয় নেতাদের মঞ্চ শেয়ার করতেও লজ্জা বা সংকোচ বোধ করছেন নাযাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে জাহির করেন তাঁরা  যে ধর্মীয় নেতাদের পাশে বসে তাঁদের দোসর ও দোহারের ভূমিকা পালন করতে পারেন তা আমার ধারণা ও বিশ্বাসের অতীত ছিলো। অবশ্য তাঁরা যা করছেন সবই মানবাধিকার রক্ষার অজুহাতে । কথায় আছে না, খলের ছলের অভাবহয় নাতা যাদের হয়ে এঁরা নির্লজ্জ ওকালতি করছেন তাদের পরিচয়টা একটু  বিশ্লেষণ করা যাক
খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের প্রধান পান্ডা বাংলাদেশের মাসুদ রানা ওরফে সাজিদ হলো একজন ভয়ঙ্কর জঙ্গী। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের দুই প্রধান শীর্ষ নেতা বংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম এবং শায়খ রহমানের পরই ছিলো মাসুদের স্থান। ঐ দুই শীর্ষনেতার ফাঁসী হয়। তারপর জেএমবি-র সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার ভার মাসুদ নিজের কাঁধে তুলে নেয়কিন্তু হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তাদের পক্ষে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন  মাসুম রানারা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং আস্তানা গাড়েএখান থেকেই তারা বাংলাদেশের বুকে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিলো ২০১০ সাল থেকে। এবার একটু পরিচয় দেওয়া যাক জেএমবি সম্পর্কে।  
জেএমবি-র দুই শীর্ষনেতাকে বাংলাদেশ সরকার ফাঁসীতে ঝুলিয়ে প্রাণদণ্ড দিয়েছে যা থেকে আঁচ করা যায় এই সংগঠনটি কীরূপ ভয়ঙ্কর সংগঠন। এই জেএমবিই বিএনপি সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের ১৭ই আগষ্ট কুড়ি মিনিটের মধ্যে ৬৩টি জেলায় ৩৭৬ টি জায়গায় সিরিজ বোমা বিষ্ফোরোণ  ঘটিয়েছিলকেনো বোমা হামলা চালিয়েছিলো তা তারা লিফলেট প্রচার করে জানিয়ে দিয়েছিলো। প্রচারপত্রের মাথায় লেখা ছিল - জাম’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আহ্বান। সেই আহ্বানপত্রে তারা বলেছিলো, ‘কোনও মুসলিম ভূখন্ডে আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোনও বিধান চলতে পারে না। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, শতকরা নব্বই ভাগ  মুসলিম বাস করা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আল্লাহর বিধান কার্যকর নেই। উপরন্তু দেশের জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নিম্ন ও উচ্চ আদালত গঠন করে যে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে তার মূল ভিত্তি হচ্ছে মনুষ্য রচিত সংবিধান। এই সংবিধান প্রণয়ন করেছে কিছু জ্ঞানপাপী মানুষ। কথা ছিল একজন মানুষ হিসাবে মানুষের কাজ হবে আল্লাহর দাসত্ব করা ও আল্লাহর বিধানের আনুগত্য স্বীকার করা।  কিন্তু মানুষ নিজেই সংবিধান রচনা করে আল্লাহর বিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।’ তারা আরো বলেছিলো,‘জামা আতুল মুজাহিদিন এর কর্মীরা আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার জন্য এরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। যেমন তুলে নিয়েছিলেন নবি রাসুল, সাহাবিগণ ও যুগে যুগে বীর মুজাহিদগণ। জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ লিফলেট ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে সরকারকে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইতিপূর্বে দু’বার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবারই সরকার তাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছেজামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার এটা তৃতীয় আহ্বান। এই আহ্বানের পর সরকার যদি এ দেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা না করে, বরং আল্লাহর আইন চাওয়ার অপরাধে কোনও মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে অথবা আলেম ওলামাগণের উপর নির্যাতন চালায় তাহলে জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।’ এই জেএমবির জঙ্গিরাই ২০০৪ সালে রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকায় পাঁচটি শরিয়া আদালতে বিচার করে ২২ জনকে কতল করেছিল। জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি, সেকেন্ড ইন কমাণ্ড তার দায় স্বীকার করে বলেছিলো, ঐ ২২ জনের মৃত্যুদন্ডের জন্য বিচারকরা দন্ডনীয় নয়। কারণ, এগুলো হত্যাকান্ড নয়, কতল।  ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট  বিএনপি সরকারের আমলে হাসিনার জনসভায় যারা গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলো তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তারা কারা? এই মুসলিম সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিরাই সেদিন গ্রেনেড ছুঁড়েছিল
এই হলো জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ তথা জেএমবি।  কিছুদিন আগে আল-কায়দা ভারতে তাদের কাজকর্ম  শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। আল-কায়দা ও জেএমবির যৌথভাবে কাজ শুরু করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের জন্যে আরো বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে। এই বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদীদের আড়াল করছেন খোলাখুলি ভাবে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারা। বিএনপি ও বাংলাদেশের জামাতি ইসলামের কায়দায় এই ধর্গোমীয় নেতারা গোয়েবলসের ঢঙে গলার শিরা ফুলিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এই বলে যে  মাদ্রাসা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে মিডিয়াগুলো সব বানানো গল্প  প্রচার করছে।  বিএনপি ও জামাতি ইসলামও বলেছিল যে বাংলাভাই সম্পর্কে এই একই কথা। বলেছিলো  বাংলাভাই বলে কিছু নেই, সবই মিডিয়া ও আওয়ামি লিগের বানানো গল্প।  বিষ্ময়কর ঘটনা হলো মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের সংগে গলা মিলিয়ে তাঁদের পাশে বসে একই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন  প্রাক্তন নকসাল নেতা এবং কিছু মানবাধিকার  কর্মী এঁরা তো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন এটা বোঝাতে যে বিজেপি ও কতিপয় মিডিয়া জোট বেঁধেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এঁরা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই প্রবাদ বাক্যটার কথা – রাজা যতো বলেন পারিষদ বলে তার শতগুণতা এই পারিষদরা কী অমৃত বাণী প্রচার করছেন তা একটু শোনা যাক। প্রক্তন তৃণমূল সাংসদ ও গায়ক কবির সুমন বলেছেন ‘এনআইএ’কে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে রাজ্যে ৩৫৬ নং ধারা জারি করে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে। বাঃ! কী চমৎকার রাজনৈতিক ভাষ্য। এমন উদ্ভট দাবি তৃণমূল কংগ্রেসও এখন পর্যন্ত করেনি। খবরে প্রকাশ যে  বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র বলেছেন, রাজ্যের অনেক জায়গায় রাজনৈতিক কিংবা গ্রাম্য বিবাদে বোমাবাজি চলছে, ‘এনআইএ’ সেদিকে নজর না দিয়ে বর্ধমানের খাগড়াগড় নিয়ে এত ধরপাকড়, চিরুনি তল্লাশি করছে কেবলমাত্র এই কারণে যে অভিযুক্তরা সকলে মুসলমান। বন্দিমুক্তি কমিটির সম্পাদক ছোটন দাস বলেছেন বলে খবরে প্রকাশ, ‘এখন আমেরিকার চোখে মুসলমানদের দেখা হচ্ছে আর তার ফলে যখনই বিষ্ফোরণ কান্ড ঘটছে তখনই মাদ্রাসা ও পুরো মুসলমান সমাজকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’ ‘মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাত’ - এর ডাকে ‘মাদ্রাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ এই শিরনামে আহূত সভায় ছোটন দাস আরো বলেন যে, আজকের ঘটনা বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এক দেশ, এক জাতি ও এক সংস্কৃতির ফেরিওয়ালা বিজেপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বাতাবরণ সৃষ্টি করছে।  ... কুকুরকে মারার আগে যেমন পাগল বলা হয়, তেমনই মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে। বোরকা, টুপি ও দাড়িকে টার্গেট করা হচ্ছে।’ ছোটন দাস জানিয়েছেন ধৃত জঙ্গিদের পক্ষে তাঁরা উকিল দেবেন আদালতে। এপিডিআর-ও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে জেএমবি-র দুই শীর্ষনেতা বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের পক্ষে বাংলাদেশে কেউ দাঁড়ায় নি। সেই জেএমবি-র ধৃত জঙ্গি যারা বিষ্ফোরণ স্থলে ধরা পড়েছে তাদের পক্ষে দাঁড়াবে এঁরা!  কেন? কারণ, তারা যে সংখ্যালঘু মুসলমান। বাঃ! কী চমৎকার!  ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা যাদের জীবনের ব্রত সেই হত্যাকারীদের প্রাপ্য ধিক্কার, তাদের প্রাপ্য কঠোর শাস্তি। কিন্তু সুজাত ভদ্র ও ছোটন দাসরা বলছেন, না, তাদের মানবাধিকার রক্ষা করাই প্রধান কর্তব্য  বাঃ! মানবাধিকার  কর্মীদের কী চমৎকার মেনিফেস্টো!
মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের এই নব্য দোসর ও দোহারদের কাছে আমি কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই। আপনারা জঙ্গিদের পাশে দাঁড়াতে চান দাঁড়ান, কিন্তু মুসলিম নেতাদের মতো মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন কেনো ? কে বা কারা কোথায় বলেছে যে সব মুসলমানরাই জঙ্গি? কোন মিডিয়া বা কোন দল বলেছে যে সব মাদ্রাসাতেই জঙ্গি কার্যকলাপ হয়? কেউ একথা বলে নি। এমনকি বিজেপিও না।  তাহলে আপনারা যাঁরা নিজেদের সত্যের ধ্বজাধারী ও সেক্যুলার বলে দাবি করেন কেনো এত মিথ্যা প্রচারণায়  মত্ত হয়ে উঠছেন? আপনারা দু-চার জন মুসলিম জঙ্গির মানবাধিকার নিয়ে খুব উতলা হয়ে উঠেছেন, তা খুব ভালো কথা।  কিন্তু মুসলিম ধর্মীয় নেতারা যখন সলমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মুন্ডুচ্ছেদ করার ফতোয়া দেন তখন আপনাদের মানবাধিকার রক্ষার দর্শন কোথায় মুখ লুকায়? কিংবা সিরিয়া ও ইরাকে আইএস যখন শ’য়ে শ’য়ে ইহুদি, খৃষ্টান ও অন্যান্য বিধর্মিদের হত্যা করে, এমনকি শিয়াপন্থী মুসলিমদেরও পাইকারী হারে হত্যা  করে তখন?  কিংবা যখন নাইজিরিয়ায় বোকো হারামের জঙ্গি সন্ত্রাসীরা ইহুদি ও খৃষ্টানদের নারী,পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকে নির্বিচারে হত্যা করে তখন? কিংবা যখন তারা শ’য়ে শ’য়ে স্কুল ছাত্রী ও অন্যান্য নারীদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে হয় জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে, তাদের ভোগ করে, কিংবা বিক্রি করে দেয় মোটা অর্থের বিনিময়ে তখন? কিংবা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে  যখন হিন্দু, খৃষ্টান ও বৌদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা  হয়, তাদের নারীদের ধর্ষণ করা হয় তখন? যখন ধর্ষণ ও হত্যার হাত থেকে বাংলাদেশের নিরীহ হিন্দুরা প্রাণ রক্ষার্থে এপার বাংলায় কিংবা ত্রিপুরায় পালিয়ে আসে তখন? হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মোল্লা-মুফতিরা যখন শাহবাগ আন্দোলনের রূপকার ব্লগারদের মোরতাদ আখ্যা দিয়ে শিরচ্ছেদ করার ফতোয়া দেয়, কিংবা তারা যখন ঢাকা অবরোধ করার নাম করে সশস্ত্র জমায়েত করে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্যে হিংসায় মত্ত হয়  তখন?
যখন শ্বশুরের কাছে ধর্ষিতা ইমরানাকে ধর্মীয় নেতারা বলে, ‘তোর তালাক হয়ে গেছে,  তোকে এখন  তোর শ্বশুরকেই বিয়ে করতে হবে’, তখন আপনাদের টিকি দেখতে পাওয়া যায় না কেনো? কিংবা গুঁড়িয়াকে যখন জোর করে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে অন্য এক তথাকথিত স্বামীর  বিছানায় তুলে দেয়  মোল্লা-মুফতিরা তখন আপনাদের মানবাধিকার রক্ষার সংগঠন বধির হয়ে যায় কেনো?  প্রতিদিন শত শত মুসলিম নারীর তালাক হয়ে যায় বিনা দোষে তখন? গতকালই বাঙ্গলাদেশের একজন অধ্যাপককে হিজাবের বিরোধ করায় হত্যা করা হয়েছে। নিশ্চয় এই মর্মান্তিক  খবরটি আপনাদের কানে ঢুকবে না। কেনো ঢুকবে না?     
আপনারা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের মহান কর্তব্য পালন করছেন  তা বুঝতে পারছিবিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায়, এবং পশ্চিমবঙ্গেও নবান্নের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে, সুতরাং হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এই মুহূর্তে  যে বড়ো বিপদ তা অনস্বীকার্য।  কিন্তু মুসলিম  ধর্মীয় নেতাদের কোলে বসে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই? মুসলিম ধর্মীয় নেতারা কবে থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী শক্তি হলো? মমতা ব্যানার্জী ইমাম বরকতি, ইমাম শফিক ও পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীদের মাঝে বসে মাথায় হিজাব পরে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে দোওয়া করে বিজেপির বিরুদ্ধে মহান [!] সংগ্রামে নিয়োজিত আছেন দেখি।  আর আপনারা তো দেখছি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহর চৌধুরীদের জুনিয়র পার্টনার হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে [মহৎ!] সংগ্রাম শুরু করেছেন!  কি চমৎকার! হিন্দু পুরোহিত ও খৃষ্টান যাজকরা সাম্প্রদায়িক, আর মুসলিম মাওলানারা ধর্মনিরপেক্ষ?  কংগ্রেস, লালু, মুলায়ম এবং মেকি কম্যুনিস্ট ও মেকি বামপন্থীরা নাগাড়ে মুসলিম মৌলবাদিদের পদলেহন করে এসেছে এভাবেই বিজেপির জুজু দেখিয়েতাতে বিজেপিকে ঠেকানো যায় নি, বরং বিজেপি আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। আপনারা তো এই মেকি কম্যুনিস্টদের নিকট থেকেই একদা বেরিয়ে এসেছিলেন। ওঁদের সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন ঠিকই,  কিন্তু ওঁদের বস্তাপচা ধ্যন-ধারণাগুলি এখনও দিব্যি আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। তাই সব কিছুতেই আমেরিকার হাত ও ষড়যন্ত্রের গন্ধ  শুঁকছেন আমেরিকার হাত দেখতে পান আইএস, বোক হারাম, আল-কায়দা, তালিবান, লস্কর-ই-তৈবা, হুজি, জেএমবি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদ, সিমি, প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলির পিছনেও তাই আপনারা মুসলিম সন্ত্রাওবাদ কোথাও দেখতে পান না। তাদের নিন্দা করার কোনো কারণ দেখতে পান না। কিন্তু আপনারা গাজায় ইহুদি ফ্যাসীবাদ ঠিক দেখতে পান, যেমন দেখতে পান ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও ফ্যাসিবাদ। আপনাদের এই একদেশদর্শিতার জন্যেই তো বিজেপির উত্থান হয়েছে। আপনারা যত মুসলিম মৌলবাদিদের তোল্লা দেবেন হিন্দু মৌলবাদীরা ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে। আসলে আপনারাই বিজেপির সবচেয়ে বড়ো বন্ধু।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...